এক এক করে ছ’টি খুন। শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে চম্পট দিয়েছিলেন রাম সেবক। খুনের ঘটনার বহু বছর পর সোমবার তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতারের পর পুলিশ আধিকারিকরা দেখেন এখন আর তখনের রাম সেবকের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। ৩০ বছর আগের খুনি ভেক ধরে বর্তমানে বৌদ্ধ ভিক্ষু।
১৯৯১ সালে উত্তরপ্রদেশের আগরায় ছ’জনকে খুন করেন রাম সেবক। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিলেন রাম সেবক। তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ তাঁর টিকি খুঁজে পায়নি।
আশেপাশের রাজ্যগুলিতে খোঁজ চালিয়েও অভিযুক্ত রাম সেবককে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। রাম সেবক যেন কর্পূরের মতো হঠাৎ করে উবে গিয়েছিলেন।
তদন্ত চালিয়ে পুলিশের ধারণা হয়, রাম সেবক আর বেঁচে নেই বা তিনি এমন কোথাও গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন যেখান থেকে তাঁকে ধরা কঠিন।
আসলে খুনের পর হাজতবাসের থেকে বাঁচতে বেশ কিছু দিন এ দিক-ও দিক ঘুরে বেড়ান রাম সেবক। বুঝে গিয়েছিলেন, এ রকম করে বেশি দিন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে বেড়ানো সম্ভব নয়।
শেষটায় গ্রেফতারির হাত থেকে পাকাপাকি ভাবে বাঁচতে ফন্দি আঁটেন রাম সেবক। ঠিক করেন পুরনো নাম-পরিচয় সব মুছে ফেলবেন। বদলে ছদ্মবেশ ধারণ করে নতুন পরিচয় নিয়ে বাঁচবেন।
অনেক ভেবে রাম সেবক ঠিক করেন গা ঢাকা দিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুর থেকে ভাল ছদ্মবেশ আর হতে পারে না। পাশাপাশি, স্বভাবে শান্ত বলে পরিচিত বৌদ্ধ ভিক্ষুর ছদ্মবেশ ধরলে তাঁকে চট করে কেউ সন্দেহ করবে না। সমাজে মান-সম্মানও পাওয়া যাবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। বৌদ্ধ ভিক্ষুর ছদ্মবেশ ধারণ করেন রাম সেবক। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে মাথা-গোঁফ-দাড়ি কামিয়ে ধারণ করেন গেরুয়া বস্ত্র। বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষাও নেন তিনি।
রাম সেবকের ফন্দি সত্যিই কাজে আসে। বৌদ্ধ ভিক্ষু সেজে উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লির আশেপাশে ঘোরাফেরা করা সত্ত্বেও পুলিশ ঘুণাক্ষরে তাঁর ব্যাপারে টের পায়নি।
তবে শেষরক্ষা হয়নি। ৩০ বছর ধরে পলাতক থাকার পর ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে রাম সেবককে ফারুখাবাদ বাসস্ট্যান্ডের কাছ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে আগরার লক্ষণপুর এলাকায় একই পরিবারের ছ’জনকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে রাম সেবকের বিরুদ্ধে। প্রেমের সম্পর্কে টানাপড়েনের জেরে এই খুনগুলি করা হয় বলেও পুলিশ সেই সময়ে জানিয়েছিল।
রাম সেবক ছাড়াও আরও দু’জন এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন।
তিন অভিযুক্তকে সেই সময়ে গ্রেফতার করা হলেও পরে তাঁরা জামিন পেয়ে যান।
স্থানীয় আদালত তিন অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড দিলে রাম সেবক এবং কিশোরী লাল নামে অন্য এক অভিযুক্ত পালিয়ে যান। এর পর থেকে ৩০ বছর পলাতক ছিলেন রাম সেবক।
এই বিষয়ে ফারুখাবাদের পুলিশ আধিকারিক অশোক মীনা বলেন, “১৯৯১ সালে সংঘটিত হত্যার সঙ্গে যুক্ত অন্যতম অপরাধীকে পুলিশ ৩০ বছর পরে গ্রেফতার করেছে। আসামি পলাতক ছিলেন এবং নাম-পরিচয় পাল্টে একটি বৌদ্ধ মঠে বসবাস করছিল।”