Ethics Committee

মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুনবে এথিক্স কমিটি, কী ভাবে কাজ করে এই কমিটি, ইতিহাসই বা কী?

সংসদের স্বাধিকার রক্ষা কমিটির জন্য যে সমস্ত নীতি প্রযোজ্য ছিল, সেই সমস্ত নীতিই বলবৎ করা হয় এথিক্স কমিটির ক্ষেত্রে। তবে একাধিক আলোচনা, প্রস্তাবের পরেও দীর্ঘ সময় লোকসভায় কোনও এথিক্স কমিটি ছিল না।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:২৮
Share:
০১ ১৯

‘টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন’ করার অভিযোগ উঠেছে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে। মহুয়ার বিরুদ্ধে এক শিল্পপতির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলেছেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।

০২ ১৯

নিশিকান্ত লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়ে মহুয়ার সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। মহুয়ার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে তদন্ত শুরু করার জন্য সিবিআই প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদরিও।

Advertisement
০৩ ১৯

এই আবহেই বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসতে চলেছে লোকসভার এথিক্স কমিটি। মহুয়ার বিরুদ্ধে সাংসদ পদ অপব্যবহারের অভিযোগ আনা নিশিকান্ত এবং জয় অনন্ত— দু’জনকেই ডেকে পাঠানো হয়েছে কমিটির তরফে। বৃহস্পতিবার তাঁদের অভিযোগ নথিবদ্ধ করবে কমিটি।

০৪ ১৯

প্রধানত সাংসদদের আচার-আচরণ সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখাই এথিক্স কমিটির কাজ। সংসদের সদস্যদের বিরুদ্ধে আচরণভঙ্গের অভিযোগ আনার নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া আছে। আবার সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে এই সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হয় এথিক্স কমিটিকে।

০৫ ১৯

এথিক্স কমিটির ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে নব্বইয়ের দশকে। ১৯৯৬ সালে প্রিসাইডিং অফিসারদের একটি সম্মেলনে প্রথম বারের জন্য সংসদের দুই কক্ষে এথিক্স প্যানেল তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

০৬ ১৯

১৯৯৭ সালে দেশের তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান কেআর নারায়ণন সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় এথিক্স কমিটি গঠন করেন। বলা হয়, সদস্যদের নীতিগত ও আদর্শগত আচরণ খতিয়ে দেখার জন্য এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা নিয়মভঙ্গের অভিযোগের নিষ্পত্তি করার জন্যই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

০৭ ১৯

সংসদের স্বাধিকার রক্ষা কমিটির জন্য যে সমস্ত নীতি প্রযোজ্য ছিল, সেই সমস্ত নীতিই বলবৎ করা হয় এথিক্স কমিটির ক্ষেত্রে। তবে একাধিক আলোচনা, প্রস্তাবের পরেও দীর্ঘ সময় লোকসভায় কোনও এথিক্স কমিটি ছিল না।

০৮ ১৯

২০০০ সালে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার জিএমসি বালাযোগী অস্থায়ী ভাবে এথিক্স কমিটি তৈরি করেন। ২০১৫ সালে লোকসভার স্থায়ী কমিটির মর্যাদা পায় এথিক্স কমিটি।

০৯ ১৯

কোনও সাংসদের বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের অভিযোগ এনে যে কেউ এথিক্স কমিটিতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে লোকসভার অন্য কোনও সাংসদের মাধ্যমেই তাঁকে অভিযোগটি জানাতে হবে। তা ছাড়াও অভিযোগকারী ব্যক্তিকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে যে, অভিযোগটি ‘মিথ্যা, অসার এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ নয়।

১০ ১৯

এক জন সাংসদ নিজেই অভিযোগকারী হলে, তাঁকে উপরিউক্ত দু’টি নিয়ম মানতে হবে না। কোনও সাংসদের বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গ এবং আচরণবঙ্গের অভিযোগ উঠলে স্পিকার নিজেই কমিটিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিতে পারেন।

১১ ১৯

তবে কেবল সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কিংবা বিচারাধীন বিষয় নিয়ে ওঠা অভিযোগের ক্ষেত্রে এথিক্স কমিটি কোনও পদক্ষেপ করতে পারে না। যে কোনও অভিযোগেরই সারবত্তা আছে কি না, প্রাথমিক ভাবে তা খতিয়ে দেখার পরেই তদন্ত শুরু করে এই কমিটি।

১২ ১৯

অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিতে পারে এথিক্স কমিটি। কমিটি তাদের রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয় স্পিকারের কাছে। রিপোর্ট নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হবে কি না, তা উপস্থিত সদস্যদের কাছেই জানতে হবে স্পিকারকে। রিপোর্ট নিয়ে সর্বোচ্চ আধ ঘণ্টা আলোচনা হতে পারে লোকসভায়।

১৩ ১৯

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সংসদের স্বাধিকার রক্ষা কমিটি এবং এথিক্স কমিটির কাজের ধরন প্রায় একই। তবে সচরাচর কোনও সাংসদের বিরুদ্ধে তুলনায় গুরুতর কোনও অভিযোগ উঠলে সেটি পাঠানো হয় স্বাধিকার রক্ষা কমিটিতে।

১৪ ১৯

স্বাধিকার রক্ষা কমিটি খাতায় কলমে সংসদের ‘স্বাধীনতা, কর্তৃত্ব এবং মর্যাদা’ রক্ষায় কাজ করে। সংসদের সদস্য হিসাবে সাংসদেরা কিছু বিশেষ অধিকার পেয়ে থাকেন। তবে সেই অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করলে, সংসদের গরিমা নষ্ট করলে সাংসদ তো বটে, অন্য কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করতে পারে স্বাধিকার রক্ষা কমিটি।

১৫ ১৯

এথিক্স কমিটির সদস্যদের কাজের মেয়াদ এক বছর। বর্তমানে এই কমিটির প্রধান বিজেপির কৌশাম্বীর সাংসদ বিনোদকুমার সোনকর। অন্য সদস্যেরা হলেন বিজেপির বিষ্ণুদত্ত শর্মা, সুমেধানন্দ সরস্বতী, অপরাজিতা সাড়ঙ্গী, রাজদীপ রায়, সুনীতা দুগ্গল এবং সুভাষ ভামরে।

১৬ ১৯

কংগ্রেসের তরফে এই কমিটিতে রয়েছেন ভি ভৈথিলিঙ্গম, এন উত্তম কুমার রেড্ডি এবং প্রণীত কৌর। এ ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকদল ওয়াইএসআর কংগ্রেস, শিবসেনা, জেডিইউ, সিপিএম এবং বিএসপির এক জন করে প্রতিনিধি আছেন এই কমিটিতে।

১৭ ১৯

সংসদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, এই কমিটি শেষ বার বৈঠকে বসেছিল ২০২১ সালের ২৭ জুলাই। মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ এই যে, তিনি শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে অর্থ এবং উপহার নিয়ে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে মহুয়া ‘কঠিন শাস্তি’ পেতে পারেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

১৮ ১৯

এর আগে টাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে ২০০৫ সালে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বিজেপির ছ’জন, বিএসপির তিন জন, কংগ্রেসের এক জন এবং আরজেডির এক জন সাংসদ। তখন অবশ্য লোকসভায় এথিক্স কমিটি ছিল না। অভিযোগের তদন্ত করতে কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন লোকসভার তৎকালীন স্পিকার তথা প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।

১৯ ১৯

এথিক্স কমিটি মহুয়ার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অভিযোগকারীদের বক্তব্য নথিবদ্ধ করার পর মহুয়াকে ডেকে পাঠাতে পারেন কমিটির সদস্যেরা। তৃণমূল সাংসদ আগেই জানিয়েছেন যে, এথিক্স কমিটি ডাকলে তিনি যাবেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement