১৪ জুন, ২০২০। বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ। বলিউডে তোলপাড় ফেলে দেয় একটা দিন। সেই সূত্রেই উঠে আসে দিন ছয়েক আগের আরও একটা তারিখের কথা।
সুশান্তের মৃত্যুর ঠিক ৬ দিন আগে মারা গিয়েছিলেন তাঁর প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ান। সে মৃত্যুও স্বাভাবিক ছিল না। প্রায় আড়াই বছর পর নতুন করে শিরোনামে উঠে এসেছে দিশার মৃত্যু।
মহারাষ্ট্র সরকার বৃহস্পতিবার দিশার মৃত্যুর তদন্তে সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ফলে নতুন করে চর্চায় সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার।
মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস সিট গঠন করে দিশার মৃত্যুর তদন্তের কথা জানিয়েছেন। তবে দিশার বাবা-মা এই তদন্তের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই তদন্ত তাঁদের মেয়েকে ফিরিয়ে আনবে না। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে যথেষ্ট তদন্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
ঠিক কী ভাবে মৃত্যু হয়েছিল দিশার? তিনি কি আত্মঘাতী হয়েছিলেন? না তাঁর মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল অন্য কোনও ষড়যন্ত্র?
সুশান্তের মৃত্যুর পর তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি তুলেছিলেন অনুরাগীদের অনেকে। তাঁদের দাবি ছিল, এই মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্রের হাত। ম্যানেজার দিশার মৃত্যুকেও সেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন কেউ কেউ।
দিশার মৃত্যু হয় ১৪ তলার ব্যালকনি থেকে পড়ে গিয়ে। তিনি নিজেই সেখান থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, না কি তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্ন উঠেছে বার বার। মুম্বই পুলিশ এই তদন্তে কোনও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পায়নি।
মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নারায়ণ রাণে দাবি করেছিলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নাকি দিশার যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সেই দাবি উড়িয়ে দেয়।
দিশার মৃত্যুর পর কেউ কেউ এ-ও দাবি করেন, তাঁর মৃতদেহ যখন উদ্ধার করা হয়, সে সময় দিশার দেহে কোনও পোশাক ছিল না। তাঁর ফোন থেকে ১০০ নম্বরে ফোন গিয়েছিল বলেও গুজব রটে। পুলিশ উড়িয়ে দিয়েছে সেই দাবিও।
ঠিক কী হয়েছিল ৯ জুনের সেই রাতে? মুম্বইয়ের মালাডের ফ্ল্যাটে প্রেমিক রোহন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পার্টি করছিলেন দিশা। অভিযোগ, তিনি একসঙ্গে অনেকটা মদ্যপান করে ফেলেছিলেন।
টেলি অভিনেতা রোহন রাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন দিশা। তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রোহন জানান, দিশা নাকি নিজেই নিজের পানীয়ের মধ্যে কিছু মিশিয়ে নিয়েছিলেন। তাতে তাঁর নেশা হয়ে যায়।
পার্টি চলাকালীন দিশা অসংলগ্ন কথা বলছিলেন বলে অভিযোগ। তাতে কেউ তাঁকে পার্টির মেজাজ নষ্ট করতে বারণ করে রূঢ় কথা বলেন। তার পরেই নাকি ফ্ল্যাটে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন তিনি।
রোহন এবং বাকিরা ঘরের বাইরে থেকে বেশ কিছু ক্ষণ দিশাকে ডাকাডাকি করেন। তার পর দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখেন ব্যালকনি থেকে দিশা পড়ে গিয়েছেন।
তাঁকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখনও জীবিত ছিলেন দিশা। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রোহনের দাবি, দিশা পার্টি চলাকালীন কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। সেখানে তাঁকে চিৎকার করতে শোনা গিয়েছিল।
ইংল্যান্ডের এক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন দিশা, জানান তাঁর প্রেমিক। তিনি নিজেও দিশার কাছ থেকে ফোন নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এর পরেই নাকি ঘরে চলে যান দিশা।
বলিউডে ট্যালেন্ট ম্যানেজার হিসাবে দিশার কেরিয়ার জমে উঠেছিল। সুশান্ত ছাড়াও তিনি কাজ করেছেন ভারতী সিংহ, বরুণ শর্মা-সহ বহু জনপ্রিয় তারকার সঙ্গে। তাঁর মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে সন্দেহজনক কিছু পায়নি মুম্বই পুলিশ।
মহারাষ্ট্র সরকার এই মৃত্যুর তদন্ত নতুন করে শুরু করতে চায়। সরকারের নির্দেশে গঠিত সিট কি পারবে দিশার মৃত্যুর নেপথ্যে জড়িয়ে থাকা নতুন কোনও রহস্যের সন্ধান দিতে? সে দিক চোখ থাকবে বি-টাউনের।