হাতে ২৫১ টাকা দিয়ে বাবা তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘নিরাশ কোরো না।’’ বাবার আশীর্বাদ, ২৫১ টাকা এবং বাবার কথা— এই ত্রিশক্তিকে মুঠোয় করে নিজের পায়ে দাঁড়ালেন যুবক। শুধু তা-ই নয়, ২৫১ টাকা হাতে নিয়ে যে পথচলা শুরু করেছিলেন তিনি, সেই যাত্রাপথে তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের যুবক কানহাইয়া শর্মা। তাঁর জীবনকাহিনি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম সেরা ‘এথিক্যাল হ্যাকার’ তিনি। কী ভাবে উত্থান হল তাঁর?
ইনদওরে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম কানহাইয়ার। ছোট থেকেই কম্পিউটারের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল।
ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই ইন্টারনেটের দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হন কানহাইয়া। সেই শুরু। তার পর যত দিন গড়িয়েছে, ততই কম্পিউটার নিয়ে জ্ঞান আহরণ করেছেন কানহাইয়া।
ইনদওরের একটি স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন কানহাইয়া। তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন কানহাইয়া। স্কুলে সেই সময় নির্মাণকাজ চলছিল।
কানহাইয়া দেখেন যে, নির্মাণকাজের সামগ্রী সংগ্রহ করতে ছোটাছুটি করছেন শ্রমিকরা। যা দেখে খারাপ লেগেছিল তাঁর।
সেই ঘটনাই ছোট্ট কানহাইয়ার মাথায় নতুন ভাবনার সঞ্চার করে। তিনি ভাবেন, এমন একটা সফ্টঅয়্যার যদি বানানো যায়, যার সাহায্যে নির্মাণস্থলেই ঠিকাদার থেকে শ্রমিক সকলে জানতে পারবেন যে, কোথায় কত পরিমাণে নির্মাণ সামগ্রী রাখা রয়েছে।
যেমন ভাবনা, তেমনই কাজ। মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে সেই সময় একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছিলেন কানহাইয়া।
পরে সেটি ৫০ হাজার টাকায় একটি নির্মাণ সংস্থার কাছে বিক্রি করেছিলেন তিনি। এখনও ওই সংস্থা কানহাইয়ার তৈরি সফ্টঅয়্যার ব্যবহার করে।
এই ভাবেই যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল কানহাইয়ার। তার পর যত সময় এগিয়েছে, ততই সাফল্যের মুখ দেখেছেন ইনদওরের যুবক।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় অনলাইনে একটি পরীক্ষা দিয়েছিলেন কানহাইয়া। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। সেই ঘটনার রেশ টেনে ২৫১ টাকার কাহিনির কথা বলেছিলেন এক সাক্ষাৎকারে।
ওই সাক্ষাৎকারে কানহাইয়া বলেছিলেন, ‘‘মনখারাপ ছিল খুব। আমার বাবাও দুঃখ পেয়েছিল। বাবা আমার হাতে ২৫১ টাকা দিয়ে বলেছিল, নিরাশ কোরো না।’’
ওই ২৫১ টাকা দিয়েই নিজের কাজ শুরু করেছিলেন কানহাইয়া। পরে শুরু করেন নিজের সংস্থা। সফ্টঅয়্যার থেকে আইনি পরিষেবা— সব রকম পরিষেবা দেয় কানহাইয়ার সংস্থা।
বাবার দেওয়া ২৫১ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন কানহাইয়ার সংস্থার বার্ষিক লেনদেন কয়েক কোটি টাকা।
কানহাইয়া যখন স্কুলে যেতেন, সেই সময় তাঁর বাড়িতে একটি মাত্র সাইকেল ছিল। এখন তাঁর বাড়িতে রয়েছে ৫-৬টি বিলাসবহুল গাড়ি।
জীবনে চলার পথে বহু সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন। কিন্তু সেই চাকরি গ্রহণ করেননি। নিজের সংস্থা নিয়েই ব্যস্ত তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত কানহাইয়া। সেখানে প্রশিক্ষণ দেন তিনি।
এ ভাবেই সফল হয়েছেন কানহাইয়া। নিজের প্রতিভা, পরিশ্রম আর সাধনার দৌলতে ২৫১ টাকা হাতে নিয়ে কোটিপতি হয়েছেন তিনি।