সীমা সচদেব খান। সাধারণের কাছে এই নাম অতটা পরিচিত না হলেও বলি পাড়ায় এই নাম অতি পরিচিত। সেলিম খান-পুত্র তথা সলমন খানের ছোট ভাই সোহেল খানের স্ত্রী সীমা। পাশাপাশি তিনি বলিউডের এক নাম করা ফ্যাশন ডিজাইনার। সীমা এখন অবশ্য পরিচিত নাম সোহেলের সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণেও।
সংসার সামলানোর পাশাপাশি মুম্বই এবং দুবাইয়ে থাকা পোশাক সংস্থার দায়িত্বও সামলাছেন দু’হাতে।
বলি পাড়ার যে সব অভিনেতার স্ত্রীরা অভিনেত্রী নন, তাঁদের মহলেও তাঁর যথেষ্ট নামডাক। চাঙ্কি পাণ্ডের স্ত্রী ভাবনা পাণ্ডে, সঞ্জয় কপূরের স্ত্রী মহিপ কপূর-সহ একাধিক অভিনেতার স্ত্রীর কাছের বন্ধু সীমা।
সম্প্রতি স্বামী সোহেল খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের জেরে তিনি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন। অনেক দিনই তাঁদের সম্পর্কে বনিবনা হচ্ছে না বলে জল্পনা ছিল। সম্প্রতি তাঁদের বিচ্ছেদের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
শোনা যায় ছয় বছর ধরেই স্বামী সোহেলের সঙ্গে ঘর করছিলেন না সীমা। দীর্ঘ দিন ধরেই ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকছিলেন তিনি।
তবে সোহেল-সীমার বিয়ের পরিণতি বিচ্ছেদ হলেও, তাঁদের প্রেম কাহিনি হার মানাবে যে কোনও প্রেমের সিনেমার গল্পকে।
দিল্লির মেয়ে সীমা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনো শেষ করে নিজের কিছু পরিচিতের ভরসায় জীবন গড়ার একরাশ স্বপ্ন নিয়ে মুম্বই চলে আসেন।
মুম্বই এসে সীমার ঠাঁই হয় সম্পর্কে কাকা চাঙ্কির বাড়িতে। চাঙ্কির দৌলতে বেশ কিছু কাজও জুটে যায় সীমার।
বেশ কিছু দিন চুটিয়ে প্রেম করার পর প্রেমিকা ভাবনাকে বিয়ে করার পর সিদ্ধান্ত নেন চাঙ্কি। সেই বিয়েতে বাড়িতে চাঁদের হাট বসে। নামী পরিচালক থেকে শুরু করে বড় বড় অভিনেতা, কে উপস্থিত ছিলেন না সেই বিয়েতে! বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন সোহেল-ও।
এই বিয়েবাড়িতেই একে অপরের সঙ্গে দেখা হয় সোহেল এবং সীমার। প্রথম দেখাতেই একে অপরের প্রেমে পড়েন তাঁরা।
চাঙ্কি-ভাবনার বিয়ের পরও বেশ কিছু দিন তাঁদের সঙ্গেই থাকতেন সীমা। এই সময় সোহেলের আমন্ত্রণে খান পরিবারের বাড়ি ‘গ্যালাক্সি’-তে যান সীমা।
সোহেলের বোন অর্পিতা এবং আলভিরার সঙ্গেও ভাল আলাপ জমে সীমার। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে খান পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও।
এর পরই সোহেল এবং সীমা বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিয়ে করব বললেই তো আর করা যায় না।
সোহেলকে বিয়ে করবেন শুনে বেঁকে বসে সীমার পরিবার। কারণ? হিন্দু মেয়ে সীমার সঙ্গে মুসলিম ছেলে সোহেলের বিয়েতে মত দিলে তো সমাজে নাক কাটা যাবে! পাশাপাশি তখন আবার বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু বদনাম কুড়িয়েছেন সোহেলের দাদা সলমন। ওই বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেবে না বলেই সাফ জানিয়ে দেয় সীমা পরিবার।
পরিবারকে অনেক বুঝিয়েও যখন কাজ হল না তখন সোহেলের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সীমা। রাতের অন্ধকারে সোহেলের হাত ধরে বাড়ি ছাড়েন তিনি। সোজা উপস্থিত হন গ্যালাক্সিতে।
রাত ৩টের সময় এই যুগল যখন গ্যালাক্সিতে পৌঁছন, তখন তাঁর সোহেলের বাবা সেলিম খান ঘুমোচ্ছিলেন। চাকরের ডাকে তাঁর ঘুম ভাঙে। সেলিমকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন সোহেল।
সমস্ত কথা শোনার পর বেঁকে বসেন সেলিমও। তিনি জানান, সোহেল-সীমার বিয়ে হয়নি। তাই তিনি কিছুতেই সীমাকে বাড়িতে রাখতে পারবেন না।
শোনা যায়, সেই সময় সলমনের একাধিক সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট সমস্যা চলছে। তা নিয়ে যথেষ্ট বিব্রতও ছিলেন সেলিম। তাই তিনি চাইছিলেন না, তাঁর ছোট ছেলেকে নিয়েও নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হোক। তবে সোহেলকে তিনি এ-ও জানান যে, বিয়ে করার পর তাঁরা একসঙ্গে থাকতে পারেন।
একে অপরকে ছেড়ে আর এক মুহূর্তও থাকতে রাজি ছিলেন না সোহেল-সীমা। সিদ্ধান্ত নেন সেই রাতেই বিয়ে করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বন্ধুদের ফোন করে সোহেল বলেন, খুব তাড়াতাড়ি এক জন মৌলবি জোগাড় করে আনতে। ভোররাতে কোনও মৌলবি না পেয়ে শেষমেশ এক মৌলবিকে অপহরণ করে আনেন সোহেলের বন্ধুরা। প্রথমে রেগে আগ্নিশর্মা হলেও পরে দু’জনের বিয়ে দেন মৌলবি।
তাঁদের বিয়ের পর দিনই সোহেল পরিচালিত প্রথম ছবি ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। শোনা যায়, সেই কারণেই সোহেল প্রেমের পরিণতি এমন চেয়েছিলেন যাতে তাঁর পরিচালিত সিনেমার নামের সঙ্গে তাঁর প্রেমের মিল থাকে।
পরে হিন্দু মতেও বিয়ে করেন এই যুগল। নির্বাণ এবং ইয়োহান নামে দুই ছেলে রয়েছে সোহেল-সীমার।
কিন্তু যে প্রেমিকের জন্য এক দিন পরিবার ছেড়েছিলেন, শেষমেশ তাঁর সঙ্গেই কি না বিচ্ছেদ হল! কেন এই বিচ্ছেদ?
নেটফ্লিক্সে কর্ণ জোহরের শো-তে এসে সীমা জানিয়েছিলেন তিনি আর সোহেলের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকেন না। সোহেল নিজের বাড়িতে থাকলেও তিনি একটি ফ্ল্যাটে ছেলেদের নিয়ে থাকেন। এর পরই একাধিক জল্পনা ভেসে ওঠে। তবে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর সীমা জানিয়েছিলেন, তাঁরা এক ঘরে না থাকলেও সোহেল রাতে তাঁর কাছেই আসেন।
তবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়নি। শেষ পর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদ হয়েই গেল সোহেল-সীমার।
বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে অনেকে অভিনেত্রী হুমা কুরেশিকে দায়ী করছেন অনেকে। কানাঘুষোয় শোনা গিয়েছিল যে, হুমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল সোহেলের। আর তা মেনে নিতে পারেননি সীমা। তবে হুমা সম্প্রতি দাবি করেন তাঁর আর সোহেলের সম্পর্কের কথা জল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। তিনি বর্তমানে মুদস্সর আজিজের সঙ্গে প্রেম করছেন বলেও হুমা জানান।
তা হলে ঠিক কি কারণে তাঁদের বিচ্ছেদ হল? এই বিষয়ে সীমা বা সোহেল, মুখ খুলতে রাজি নন কেউই।
মালাইকা আরোরার সঙ্গে মেজো ভাই আরবাজের বিচ্ছেদের পর সলমন চাননি সোহেলেরও বিবাহবিচ্ছেদ হোক। নিজের তরফ থেকে বহু চেষ্টা করলেও ভাইয়ের বিবাহবিচ্ছেদ আটকাতে পারলেন না খোদ ‘ভাইজান’।
বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে যে প্রেম পরিণতি পেয়েছিল, তার শেষ হল কোর্টের কাগজে সই করে।