ক্রিকেট মাঠে তাঁর ক্ষিপ্রতা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়। আবার তাঁর এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেই মজে থাকেন অগণিত মহিলা ভক্ত। এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেট দলে অন্যতম সেরা ব্যাটার তিনি। শনিবার ৩৪ বছরে পা দিলেন বিরাট কোহলি। ব্যাট হাতে তিনি ছক্কা হাঁকান। চলতি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবার চেনা ছন্দে পাওয়া গিয়েছে তাঁকে। বাইশ গজের নায়কের জীবনে একাধিক প্রেম হবে না, তা আবার হয় নাকি! বিরাটের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি।
বলিউড সুন্দরী অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে সুখে সংসার করছেন কোহলি। তাঁদের দু’জনের প্রেমের পরশের আঁচ প্রায়শই ধরা পড়ে ক্যামেরায়। একে অপরের প্রতি তাঁদের অপার ভালবাসার কথা নিজেরাই নেটমাধ্যমে তুলে ধরেন তাঁরা। কিন্তু বিরাটের জীবনে অনুষ্কার আগমনের আগে অনেক নায়িকারই প্রেমে পড়েছিলেন। যা ঘিরে জোরদার চর্চাও চলেছিল।
প্রথম বার যাঁর সঙ্গে কোহলির প্রেমের গুঞ্জন ছড়ায়, তিনি ২০০৭ সালের মিস ইন্ডিয়া সারা জেন ডায়াস। মাস্কাটে জন্ম এই সুন্দরীর সঙ্গে বিরাটের প্রেমকাহিনি সে সময় খুব চর্চিত হয়েছিল। বিরাটের থেকে কয়েক বছরের বড় সারা। কিন্তু প্রেম কি বয়সের গণিত মানে!
তবে এই সম্পর্ক টেকেনি। হিন্দি ও তামিল ছবিতে কাজ করেছিলেন সারা। শোনা যায়, দু’জনের ব্যস্ত জীবনে কেউ কাউকে ঠিক মতো সময় দিতে পারতেন না। আর সে কারণেই ওই সম্পর্কে ভাঙন ধরে। তবে এই সম্পর্ক নিয়ে তাঁরা কেউই কখনও মুখ খোলেননি।
বিরাটের সঙ্গে আর যে সব নায়িকার প্রেমের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল,তাঁদের মধ্যে অন্যতম অভিনেত্রী তমান্না ভাটিয়া। বলিউডের পাশাপাশি তামিল, তেলুগু ছবিতেও দাপিয়ে কাজ করেছেন তমান্না।
একটি মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনের সূত্রে বিরাট ও তমান্নার দেখা হয়েছিল। সেই সাক্ষাৎ পরে প্রেমে গড়ায়। ২০১২ সালে তাঁদের সম্পর্কের কথা শোনা গিয়েছিল।
এই সম্পর্কের কথা কেউই কখনও স্বীকার করেননি। বরং গুঞ্জনের প্রায় সাত বছর পর একটি টক শোয়ে এ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তমান্না। তিনি বলেছিলেন, ‘‘শুটিংয়ের সময় আমরা চারটি কথা বলেছিলাম। এর পর বিরাটের সঙ্গে কখনও দেখাও হয়নি, কথাও হয়নি।’’
তবে বিরাটের প্রশংসা করেছিলেন তমান্না। বলেছিলেন, ‘‘যে সব অভিনেতার সঙ্গে আমরা কাজ করি, তাঁদের থেকে বিরাট অনেক ভাল।’’
২০১১ সালে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের পর যখন আইপিএল খেলতে বিজয় মাল্যের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুরে যোগ দিয়েছিলেন বিরাট, সে সময়ও তাঁর প্রতি অনেক মডেলই আকৃষ্ট হয়েছিলেন বলে শোনা যায়।
বিজয় মাল্যর পার্টিতে অনেক মডেল, অভিনেত্রীদেরই আনাগোনা ছিল। আর সেখানে বিরাটের মতো কেউ থাকলে তাঁর যে প্রেমে পড়বেন না তাঁরা, তা তো হয় না! শোনা যায়, এ ভাবেই সঞ্জনা গলরানির সঙ্গে নাকি মন দেওয়া-নেওয়া হয়েছিল কোহলির।
দক্ষিণী ছবিতে কাজ করেছেন সঞ্জনা। বিরাট ও সঞ্জনার ছবি সমাজমাধ্যমেও দেখা গিয়েছিল। তবে কেউই এই সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি। বিরাটের ‘শুধু বন্ধু’ বলেই দাবি করেছিলেন সঞ্জনা। তবে আইপিএল সে সময় শেষ হতেই তাঁদের সম্পর্কের গুঞ্জনেরও যবনিকা পতন ঘটেছিল।
২০১২ সালে মুক্তি পেয়েছিল আমির খান, রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত ‘তলাশ’। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ব্রাজিলের অভিনেত্রী ইজ়াবেল লেইট। তাঁর প্রেমে মজেছিলেন বিরাট।
২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিরাট ও ইজ়াবেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে শোনা যায়। তবে, তাঁদের সেই সম্পর্ক দু’বছরের বেশি টেকেনি।
বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে বিরাট এক বার এক সাক্ষাৎকারে সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমরা সম্পর্কে ছিলাম প্রায় দু’বছর। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যে এই সম্পর্ক থেকে আমরা বেরিয়েছি।’’
ইজ়াবেলের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যেই নাকি আরও এক তরুণীতে মজেছিলেন বিরাট। তাঁর নাম ঋতিকা সাচদেব। তিনি পেশায় ‘স্পোর্টস ট্যালেন্ট ম্যানেজার’। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ২০১৩ সালে বিরাটের হয়ে কাজ করেছিলেন ঋতিকা।
সে সময় নাকি বিরাট ও ঋতিকাকে প্রায়শই এক সঙ্গে দেখা যেত। এমনকি, তাঁরা এক সঙ্গে সিনেমাও নাকি দেখতে যেতেন। তবে সেই গুঞ্জন নিয়ে কেউই কখনও মুখ খোলেননি।
২০১৫ সালে ক্রিকেটার রোহিত শর্মার সঙ্গে বিয়ে হয় ঋতিকার। কোহলি আর ঋতিকার মধ্যে বর্তমানে অবশ্য বন্ধুত্ব রয়েছে।
বাইশ গজে কেরিয়ার শুরুর সময় নাকি তামিল অভিনেত্রী সাক্ষী আগরওয়ালেরও প্রেমে পড়েছিলেন বিরাট। তবে সেই সম্পর্ক বেশি দূর এগোয়নি।
এত নারীর ভিড়েও আসল হিরে ঠিক বেছে নিয়েছেন বিরাট। বার বার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলেও সারা জীবনের সঙ্গী হিসাবে বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মাকেই বেছে নিয়েছেন কোহলি।
বিরাট ও অনুষ্কার প্রেমকাহিনি রীতিমতো চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সেই সময়। যদিও তাঁদের প্রেমের সম্পর্কের মধ্যেও শৈত্যপ্রবাহ বয়েছিল। মাঝখানে দু’জনের মন কষাকষিও হয়। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে পরে তাঁদের মধুরেণ সমাপয়েৎ হয়।
২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর ইটালিতে গাঁটছড়া বাঁধেন বিরাট-অনুষ্কা। তাঁদের বিয়ের ছবিতে এখনও মজে থাকেন ভক্তরা। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁদের ঘর আলো করে এসেছেন কন্যা ভামিকা। আপাতত স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বিরাট রাজার সংসার ভরপুর।