ভারতের মহাকাশ গবেষণায় যখন আলোড়ন তৈরি করেছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩, তখন নাসার দফতরেও খুশির জোয়ার। হারিয়ে যাওয়া মহাকাশযান অপ্রত্যাশিত ভাবে খুঁজে পেয়েছে তারা।
৪৬ বছরের পুরনো মহাকাশযানটিকে সম্প্রতি হঠাৎ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থার ভুলেই সেটি মহাশূন্যে হারিয়ে গিয়েছিল। প্রত্যাশিত সময়ের আগেই আবার তার সন্ধান মিলেছে।
মহাকাশযানটির নাম ভয়েজার-২। ১৯৭৭ সালে এটি মহাশূন্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। উৎক্ষেপণের পর নাসার অফিস থেকেই এর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হত।
নাসার বিজ্ঞানী এবং আধিকারিকদের একটি ছোট্ট ভুলের কারণে কিছু দিন আগে ভয়েজার-২-এর সঙ্গে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকে অনেক চেষ্টা করেও মহাকাশযানটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
যেখানে মহাকাশযানটির গতিবিধির খোঁজ আবার মিলেছে, সেই এলাকাটি পৃথিবী থেকে বহু দূরে। সৌরজগতেরও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৪৬ বছরের ‘বৃদ্ধ’ ভয়েজার-২।
নাসার তরফে হারানো মহাকাশযানটি খুঁজে পাওয়ার খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, মহাকাশযানটির দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১৯৯০,০০০০০০০ কিলোমিটার।
দূরত্বের কারণেই ভয়েজার-২-এর সঙ্গে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। কিছু দিন আগে মহাশূন্যের অতি ক্ষীণ সঙ্কেত ধরা পড়ে নাসার যন্ত্রে। তার পরেই মহাকাশযানটিকে আবার খুঁজে পাওয়া যায়।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের মূল দফতর থেকে ভয়েজার-২ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। একটি ভুল নির্দেশে মহাকাশযানটির অ্যান্টেনা দু’ডিগ্রি ঘুরে যায়। তার পর উধাও হয়ে যায় ভয়েজার-২।
আগামী অক্টোবরের আগে ভয়েজার-২-এর সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা যাবে বলে আশা রাখেননি নাসার গবেষকেরা। ওই সময়ে মহাকাশযানটির অ্যান্টেনা নিজে থেকেই সোজা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন সকলে।
কিন্তু প্রত্যাশিত সময়ের আগেই নাসার আয়ত্তে এসেছে ভয়েজার-২। এই মহাকাশযানের প্রজেক্ট ম্যানেজার এএফপিকে জানিয়েছেন, নাসার তরফে মহাকাশযানটি খোঁজার জন্য একটি শক্তিশালী যন্ত্রের মাধ্যমে সঙ্কেত পাঠানো হয়েছিল মহাশূন্যে।
হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভয়েজার-২-এর যন্ত্রপাতি থেকে কোনও তথ্যই আর পাচ্ছিল না নাসা। মহাকাশযানটি আবার খুঁজে পাওয়ায় আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থার অনেক সুবিধা হল।
হারিয়ে যাওয়ার দু’সপ্তাহ পর ভয়েজার-২-এর খোঁজ মিলল। এই দু’সপ্তাহ বিজ্ঞানী এবং নাসার আধিকারিকদের গবেষণা সংক্রান্ত কাজ কিছুটা হলেও থমকে গিয়েছিল।
এই মুহূর্তে ভয়েজার-২ যেখানে আছে, সেই অংশটির নাম হেলিয়োস্ফিয়ার। সৌরজগতের বাইরে এই অংশেই এখন চক্কর কাটছে মহাকাশযানটি।
নাসার মহাকাশযানগুলি মহাকাশে এতটা দূরত্বে সাধারণত যায় না। ভয়েজার-২ দ্বিতীয় মহাকাশযান, যেটি এই দূরত্বে পৌঁছেছে। মহাশূন্যের বিশেষ অংশের পরিস্থিতি, পারিপার্শ্বিকের পর্যবেক্ষণ করে তথ্য পাঠানো ভয়েজার-২-এর কাজ।
এর আগে নাসার আরও একটি মহাকাশযান এই দূরত্বে পৌঁছেছিল। তার নাম ভয়েজার-১। ২০১২ সালে মহাকাশযানটি হেলিয়োস্ফিয়ারে গিয়েছিল। ভয়েজার-২ খুঁজে পাওয়ায় নাসার গবেষণায় আবার গতি আসতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।