নিজের সাধ্যমতো ঈশ্বরকে ভোগ দেন ভক্তরা। হিন্দু ধর্মে এটাই রীতি, দস্তুর। সেই ভোগে থাকে উৎকৃষ্ট খাবারদাবার থেকে ফলমূল, মিষ্টি। এ দেশে আবার ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে ভোগ রাঁধেন ভক্তরা। তবে এ দিক থেকে ভৈরবনাথ কিন্তু একেবারেই পৃথক। তিনি তুষ্ট শুধুই এক বিশেষ ভোগে।
মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী শহরে শিপ্রা নদীর তীরে কালভৈরব মন্দির। এখানে ঈশ্বরকে নিবেদন করা ভোগই বিখ্যাত করেছে মন্দিরটিকে।
উজ্জয়িনীর মন্দির শুধু নয়, শহরের অভিভাবক হয়ে বসে রয়েছেন কালভৈরব।
মনে করা হয়, রাজা ভদ্রসেন তৈরি করেছিলেন মন্দিরটি। ঠিক কোন সময়ে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
স্কন্দ পুরাণের অবন্তী খণ্ডে উল্লেখ রয়েছে এই মন্দিরের। এই মন্দিরে শিব, পার্বতী, বিষ্ণু, গণেশের যে ছবি রয়েছে, তা পারমার যুগের। অর্থাৎ নবম থেকে ত্রয়োদশ শতকের।
মন্দিরের বর্তমান স্থাপত্যে মরাঠা ছাপ স্পষ্ট।
১৭৬১ সালে পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধে হেরে যায় মরাঠারা। মরাঠা সেনাপতি মহাদাজি শিন্ডে মানত করে নিজের পাগড়ি রেখে যান ভৈরবনাথের কাছে। প্রার্থনা করেন, মরাঠা সাম্রাজ্য পুনর্দখল করলে গড়ে দেবেন মন্দির। ফের ক্ষমতায় আসে মরাঠারা। তখনই ভৈরবনাথের নতুন মন্দির গড়ে দেন মহাদাজি শিন্ডে।
সেই থেকে ভৈরবনাথের পাথরের বিগ্রহের মাথায় শোভা পায় মরাঠি পাগড়ি। বিগ্রহের গায়ে লেপা থাকে সিঁদুর এবং হলুদ।
গুজরাতের ভুদ-মুন্দ্রা রোডে এই মন্দিরের প্রতিলিপি রয়েছে।
তন্ত্রমতে এখানে পুজো হয় ভৈরবনাথের। তাই তাঁকে নিবেদন করা হয় মদ।
প্রতি দিন হাজার হাজার ভক্ত মদ নিবেদেন করেন ভৈরবনাথকে। নিবেদিত সেই মদ বিগ্রহের ঠোঁটের কাছে ধরেন পুরোহিত। এর পর বাকি প্রসাদ তুলে দেন ভক্তদের হাতে।
বেআইনি (লাইসেন্সবিহীন) দোকান থেকে ভক্তরা যাতে মদ না কেনেন, তাই উজ্জয়িনীর মন্দিরের বাইরে রয়েছে বিশেষ ভোগের কাউন্টার। ২০১৫ সালে রাজ্য সরকার সেই কাউন্টার চালু করেন।
কাউন্টার থেকে কেনা ভোগের ডালিতে থাকে নারকেল, ফুল, বেলপাতা এবং মদের ছোট বোতল।
ভৈরব অষ্টমীর দিন ঈশ্বরকে দেওয়া হয় বিশেষ ‘মহাভোগ’। সে দিন ১,৩৫১ রকমের ভোগ নিবেদন করা হয় ভৈরবনাথকে।
গত ১৬ নভেম্বর, বুধবার ছিল ভৈরব অষ্টমী। মনে করা হয়, এই অষ্টমী তিথিতেই জন্মেছিলেন ভৈরব। তাই ভক্তরা বিশেষ ভাবে পালন করেন দিনটি।
কয়েকশো বছর ধরে এই ভৈরব অষ্টমীতে সোনার গয়নায় সাজানো হয় ভৈরবনাথের বিগ্রহ। মদ, সিগারেট, গাঁজা-সহ নেশার সামগ্রী দেওয়া হয় ভোগে।
ভোগে থাকে ৩৯০ রকমের ধূপ, ১৮০ রকমের মুখলেপন, ৬০ রকমের গুজরাতি নোনতা খাবার, ৫৬ রকমের মুখরোচক, ৫৫ রকমের মিষ্টি, ৪৫ রকমের বিস্কুট।
ভোগে থাকে নানা রকমের চকোলেট, শুকনো ফল, নরম পানীয়, তাজা ফল।
ভোগে উৎসর্গ করা হয় নেশার জিনিসও। ভৈরব অষ্টমীর দিন ৬০ রকমের সিগারেট, ৪০ রকমের মদ, ছিলিম, গাঁজা নিবেদন করা হয়ে ভৈরবনাথকে।
মনে করা হয়, এই বিশেষ দিনে ভৈরবনাথকে ভোগ নিবেদন করে ভক্ত যা চান, তা-ই পান।