বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ বিজেপির মাইসুরু কেন্দ্রের সাংসদ প্রতাপ সিংহের দেওয়া প্রবেশপত্র নিয়ে, জুতোয় রংবোমা লুকিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি নামে দুই যুবক। অধিবেশন চলাকালীন দুপুর ১টার কিছু পরে লোকসভায় জিরো আওয়ারে দর্শক আসন থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে দু’জন ছুড়তে থাকেন সেই রংবোমা। ঘন হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় লোকসভার মূল অধিবেশন কক্ষের একাংশ।
পরে সংসদ ভবনের বাইরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকে ‘তানাশাহি নহি চলেগি’ স্লোগান তোলেন অমল শিন্ডে এবং নীলম। তাঁদের হাতেও ছিল ‘স্মোক গ্রেনেড’। অভিযুক্ত চার জনকেই ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। কেন এই হানা? কী উদ্দেশ্য? মূলচক্রী কে? উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে সংসদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।
সংসদে হানা দিয়ে যাঁরা দেশ জুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ উচ্চশিক্ষিত, তো কেউ আবার রিকশাচালক। তদন্তকারীদের অনুমান, সমাজমাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁদের।
এমনকি, সংসদে ‘রংবাজি’ করার আগে বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেন তাঁরা।
সংসদে অনুপ্রবেশের আগে সাগর ইনস্টাগ্রামে জয়-পরাজয় সংক্রান্ত ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেন। ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি হিন্দিতে লেখেন, ‘‘জিতে ইয়া হারে, পর কোশিশ তো জ়রুরি হ্যায়। অব দেখনা ইয়ে হ্যায় সফর কিতনা হাসিন হোগা। উম্মিদ হ্যায় ফির মিলেঙ্গে’’ (জিতি বা হারি, চেষ্টা তো করতেই হবে। এ বার দেখতে হবে যে, এই যাত্রা কতটা সুন্দর হবে। আশা করছি আবার দেখা হবে)।
অন্য একটি পোস্টে, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করার বিষয়ে একটি উদ্ধৃতিও শেয়ার করেন সাগর। সেই পোস্টে লেখা, ‘‘জীবনে যদি সুন্দর কিছু থাকে, তা হল স্বপ্ন। স্বপ্ন সব সময় মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা কী জন্য বেঁচে আছি। স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন। তার থেকেও অর্থহীন স্বপ্নের জন্য সংঘর্ষ বা পরিশ্রম না করা।’’
সাগর এবং মনোরঞ্জন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা লঙ্ঘন করতে সক্ষম হন এবং অধিবেশন চলাকালীন দর্শকাসন থেকে কক্ষে যেখানে সাংসদেরা বসেন, সেখানে লাফ দিয়ে তাণ্ডব চালান। ফলে সংসদ ভবনের অন্দরে হইচই পড়ে যায়।
সংসদ ভবনের বাইরে যে দু’জন স্লোগান দিচ্ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন হরিয়ানার মেয়ে নীলম। উল্লেখযোগ্য যে, সোমবার অর্থাৎ সংসদে অনুপ্রবেশের দু’দিন আগে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে গিয়ে তিনিও ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দেন।
সোমবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তাঁর শেষ পোস্টে নীলম প্রশ্ন তোলেন, কেন সংসদ এবং বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা নেই।
নীলম লেখেন, ‘‘সংসদ এবং বিধানসভায় ৫০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা উচিত। হরিয়ানায় গ্রাম পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। তা হলে সংসদ এবং বিধানসভায় নয় কেন?’’
এই পোস্টের আগে, তিনি জুন মাসে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। উত্তরপ্রদেশের ভীম আর্মির নেতা তথা আজাদ সমাজ পার্টির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদের উপর আক্রমণকে কেন্দ্র করে একটি পোস্ট শেয়ার করেন।
নীলম লিখেছিলেন, ‘‘ভাই চন্দ্রশেখর আজাদের উপর আক্রমণ এটাই প্রমাণ করে যে, দলিত এবং বঞ্চিতদের অধিকারের জন্য যাঁরাই আওয়াজ তোলেন তাঁদেরই কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হয়। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত। আজাদকে নিরাপত্তা দিতে হবে।’’
একই সঙ্গে জুন মাসে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে, দিল্লির যন্তর মন্তরে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালীন পুলিশের তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ছবি শেয়ার করেছিলেন। সেই ছবিতে মহিলাদের শোষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার কথা বলে একটি ক্যাপশনও লিখেছিলেন।
উল্লেখযোগ্য যে, নীলম এবং সাগর— উভয়ের সমাজমাধ্যম প্রোফাইলেই স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগত সিংহ, সুখদেব থাপার এবং শিবরাম রাজগুরুর প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।