রাজস্থানে লিথিয়ামের বড় ভান্ডারের খোঁজ মিলেছে বলে দিন দু’য়েক আগে খবর হয়েছিল দেশের বহু সংবাদমাধ্যমে। সেই খবর সম্পূর্ণ ভুল (Fake News) বলে জানিয়েছে ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বা জিএসআই (Geological Survey of India)। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, রাজস্থানের দেগানায় জিএসআই লিথিয়ামের সন্ধান পেয়েছে বলে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছিল তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সংস্থার কেন্দ্রীয় কিংবা আঞ্চলিক কোনও দফতর থেকেই এমন কথা জানানো হয়নি। একাধিক সংবাদমাধ্যমের মতো আনন্দবাজার অনলাইনও ওই খবর করেছিল। ভুল খবর প্রকাশের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। নীচে সে দিনের খবরটি অবিকৃত রেখে দেওয়া হল।
এ যেন ভারতের ‘লক্ষ্মীলাভ’! ৪ মাসের ব্যবধানে আবারও দেশের মাটিতে সন্ধান মিলল ‘সাদা সোনার’। জম্মু ও কাশ্মীরের পর এ বার রাজস্থানেও পাওয়া গেল লিথিয়াম। যা নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজস্থানের দেগানা এলাকায় লিথিয়ামের খনির হদিস পাওয়া গিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে সে রাজ্যের সরকারি আধিকারিকরা।
তবে রাজস্থানে কত পরিমাণ লিথিয়ামের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এখনও জানা যায়নি। ভারতীয় ভূ-তাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া)-এর তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে যে পরিমাণ লিথিয়াম পাওয়া গিয়েছিল, তার থেকে বেশি পরিমাণ লিথিয়াম পাওয়া গিয়েছে রাজস্থানে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার সালাল-হাইমানা এলাকায় লিথিয়ামের ভান্ডারের হদিস পেয়েছিস ভারতীয় ভূ-তাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ। জম্মু ও কাশ্মীরের দেশের মধ্যে প্রথম বার এই মূল্যবান সামগ্রীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
রাজস্থানে যে পরিমাণ লিথিয়াম পাওয়া গিয়েছে, তা দিয়ে দেশে ৮০ শতাংশেরও বেশি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন সরকারি আধিকারিকরা।
কেন্দ্রীয় খনি মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, জম্মু ও কাশ্মীরে ৫৯ লক্ষ টন লিথিয়াম পাওয়া গিয়েছে। রাজস্থানে এর থেকেও বেশি লিথিয়াম ভান্ডারের হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি।
লিথিয়ামকে ‘সাদা সোনা’ বলে বর্ণনা করা হয়। সোনা মূল্যবান সামগ্রী। লিথিয়ামের মূল্যও নেহাত কম নয়! ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য লিথিয়ামের খনির হদিস পাওয়া নিঃসন্দেহেই ‘অমূল্য রতন’ খুঁজে পাওয়ার মতোই।
দেশে লিথিয়াম এক ‘অমূল্য রতন’ই বটে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপে যে ধরনের রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, তার অন্যতম প্রধান উপাদান হল লিথিয়াম। শুধু তাই নয়, বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রেও লিথিয়ামের ভূমিকা অপরিসীম। দূষণ রুখতে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। আর এমন গাড়ির জন্য যে ব্যাটারির প্রয়োজন হয়, তা হল লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি।
জম্মু ও কাশ্মীরের পর দেশে আবার লিথিয়ামের ভান্ডারের খোঁজ পাওয়া যাওয়ার ফলে ব্যাটারি শিল্পে নবজোয়ার আসতে পারে বলে আশা করছেন অনেকে।
এ যাবৎ লিথিয়ামের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভর করতে হত ভারতকে। অর্থাৎ, আমদানি করতে হত লিথিয়াম। যা খরচ সাপেক্ষ। এ বার দেশেই যে হেতু বিপুল পরিমাণে লিথিয়ামের হদিস পাওয়া গেল, তাতে ব্যাটারি তৈরির ব্যয় যেমন কমবে, তেমনই ‘আত্মনির্ভর’ হবে দেশ। অন্তত এমনটাই মনে করছে সরকার।
ভারতে যে ভাবে আবার লিথিয়াম পাওয়া গেল, তাতে দেশে ব্যক্তিগত বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে। বর্তমানে দূষণ মোকাবিলায় বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে দেশে আবার লিথিয়ামের সন্ধান পাওয়া যাওয়ায়, এই ক্ষেত্রে তা নতুন দিশা দেখাতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনায় কঠিন শিলা এবং ভূগর্ভস্থ জলাধারে লিথিয়াম পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা থেকে লিথিয়াম আনার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ করেছিল কেন্দ্র।
লিথিয়াম আমদানি করার ফলে দেশে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের দাম বেশি হত। এ বার আরও লিথিয়ামের খোঁজ পাওয়া যাওয়ায় সস্তায় বৈদ্যুতিক যন্ত্র কিনতে পারবেন সকলে।
তবে দেশে লিথিয়ামের ভান্ডার পাওয়া গেলেও তা খনন করার কাজ খুব একটা সহজ নয়। লিথিয়াম খননের কাজ পরিবেশবান্ধব নয় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
যে প্রক্রিয়ায় লিথিয়াম খনন করা হয়, তাতে প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয়। আবার এই প্রক্রিয়ায় বাতাসে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। ফলে ভারতে লিথিয়াম খনন করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা, সেই নিয়ে সংশয় রয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে যখন দেশে প্রথম বার লিথিয়াম পাওয়া গিয়েছিল, সেই সময় কেন্দ্রীয় খনি সচিব বিবেক ভরদ্বাজ বলেছিলেন, ‘‘আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ খুঁজে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’’ রাজস্থানে আরও লিথিয়াম পাওয়া যাওয়ার ফলে ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার লক্ষ্যের দিকে দেশ আরও এক কদম এগোল বলেই মনে করছে সরকার।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে বিশ্বে যত লিথিয়াম রয়েছে, তার ৪৭ শতাংশ উৎপাদন করা হয় অস্ট্রেলিয়ায়। ৩০ শতাংশ উৎপাদন করা হয় চিলিতে। আর চিনে উৎপাদন করা হয় ১৫ শতাংশ।
যদিও বিশ্বে যত লিথিয়াম রয়েছে, তার ৫৮ শতাংশ প্রক্রিয়া করে চিন। চিলিতে হয় ২৯ শতাংশ এবং আর্জেন্টিনায় ১০ শতাংশ।
বিশ্বে যে সব দেশে সবচেয়ে বেশি লিথিয়ামের ভান্ডার রয়েছে, তার মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে ভারত। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের এক তালিকা সূত্রে এই তথ্য জানা গিয়েছে।
ভারতে মোট যে লিথিয়াম পাওয়া গেল, তার ফলে আগামী দিনে দেশ কোন পথে এগোয়, এখন সেটাই দেখার।