মাতৃবিয়োগ হল দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদীর। ১০০ বছর বয়সে মারা গেলেন প্রধানমন্ত্রীর মা হীরাবেন মোদী। মায়ের প্রয়াণের খবর পাওয়ার পর তড়িঘড়ি সব পূর্বপরিকল্পিত কর্মসূচি বাতিল করে আমদাবাদ পৌঁছন মোদী। আমদাবাদ থেকে গান্ধীনগরে নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য হয়েছে হীরাবেনের।
মোদী অনেক সময়ই জানিয়েছেন, কী ভাবে সংকল্প দৃঢ় করতে হয় এবং দুঃস্থদের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করতে হয় তা তিনি মা হীরাবেনের কাছ থেকে শিখেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সব সময় তাঁর প্রতি হীরাবেনের অগাধ আস্থা ছিল।
১৯২২ সালের ১৮ জুন গুজরাতের মেহসানার ভিসনগরে হীরাবেনের জন্ম। বিয়ে হয় দামোদরদাস মুলচাঁদ মোদীর সঙ্গে। দামোদরদাস পেশায় এক জন চা বিক্রেতা ছিলেন।
খুব ছোট বেলাতেই বিয়ে হয়ে যায় হীরাবেনের। তাই তাঁর আর স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। গতানুগতিক লেখাপড়াও করা হয়নি তাঁর। হীরাবেন ছিলেন পরিবারের বড় মেয়ে আর বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতেও আসেন বড় বউ হয়ে।
‘স্প্যানিশ ফ্লু’ প্রাদুর্ভাবের কারণে খুব ছোটবেলাতেই হীরাবেন তাঁর মাকে হারিয়েছিলেন বলে মোদী জানিয়েছিলেন।
মা মারা যাওয়ার পর শৈশবে হীরাবেন গোটা পরিবারের দেখভাল করতেন এবং সংসারের সব কাজ করতেন। বিয়ের পরেও তিনি এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বলে উল্লেখ করেছেন মোদী। মোদী জানান, অজস্র দায়িত্ব এবং প্রতি দিনের সংগ্রাম সত্ত্বেও তাঁর মা গোটা পরিবারকে ধৈর্য এবং শক্তি দিয়ে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ভাদনগরে তাঁর পরিবার যে বাড়িতে থাকতেন সেটি খুব ছোট ছিল। কোনও শৌচাগার পর্যন্ত সেই বাড়িতে ছিল না। ওই বাড়িতেই স্বামী-ছেলেদের নিয়ে সংসার গড়েছিলেন হীরাবেন।
হীরাবেন গরিব এবং দুঃস্থদের কষ্ট দেখতে পারতেন না। অনেক গরিব মানুষকে তিনি খাদ্য এবং বস্ত্র দান করতেন বলেও তাঁর প্রধানমন্ত্রী ছেলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, মোদী জানান, ধর্মের প্রতিও তাঁর মায়ের নিষ্ঠা ছিল অকল্পনীয়।
প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ অনুযায়ী, তাঁর মায়ের শৈশব ছিল ‘অত্যন্ত কষ্টের’ এবং প্রতিবন্ধকতায় ভরা। হীরাবেন সারা জীবন অনেক আত্মত্যাগ করেছেন এবং কষ্ট সহ্য করেছেন বলে মোদী উল্লেখ করেছেন।
২০১৫ সালে ফেসবুকের সিইও মার্ক জ়াকারবার্গের সঙ্গে একটি আড্ডা চলাকালীন, প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর মায়ের বিষয়ে অনেক অজানা কথা তুলে ধরেন। মায়ের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েছিলেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর মা হীরাবেন তাঁকে এবং ভাইবোনদের মানুষ করার জন্য অনেক সংগ্রাম করেছিলেন। ছেলেদের মানুষ করতে হীরাবেনকে দিনমজুর এবং গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করতে হয়েছিল। এ ছাড়াও বাড়ির যাবতীয় কাজ হীরাবেন নিপুণ হাতে করতেন বলেও জানিয়েছিলেন মোদী।
২০১৬ সালের নভেম্বরে, প্রধানমন্ত্রী ছেলের নোটবন্দি করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে একটি এটিএমের সামনে ছবি তুলেছিলেন হীরাবেন। সঙ্গে সঙ্গেই সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
কোভিড আবহে টিকাকরণ অভিযান শুরুর সময় টিকা নেওয়া নিয়ে অনেক দেশবাসীর মধ্যে সংশয় দেখা দেওয়ার পর সেই সংশয় দূর করতে এগিয়ে এসেছিলেন হীরাবেন। তাঁর টিকা নেওয়ার ছবি অচিরেই ভাইরাল হয়েছিল সমাজমাধ্যমে।
সদ্য শেষ হওয়া গুজরাত নির্বাচনেও হুইলচেয়ারে গিয়ে গান্ধীনগরের একটি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন হীরাবেন। নির্বাচনে জিতে বিজেপি পুনরায় ক্ষমতায় এলে আনন্দও প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত গান্ধীনগরের রায়সান গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই পঙ্কজ মোদীর সঙ্গে থাকতেন হীরাবেন।
মোদী স্মৃতিচারণ করার সময় জানিয়েছিলেন, তাঁর মায়ের মাধ্যমে দেশের সব মায়ের তপস্যা, ত্যাগ এবং অবদান দেখেছেন। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, মাকে দেখেই তিনি বুঝেছিলেন যে, ভারতীয় মহিলারা পারেন না এমন কোনও কাজ নেই।
তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমার মা খুবই সরল, আবার অনন্যও। অন্যান্য সব মায়ের মতোই। এই যে আমি আমার মায়ের সম্পর্কে লিখছি, আমি নিশ্চিত যে আপনারা অনেকেই আপনাদের মায়ের স্মৃতির সঙ্গে এর মিল পাবেন। পড়তে গিয়ে হয়তো আপনার মায়ের ছবিও মনে আসবে।’’
মঙ্গলবার আচমকা শরীর খারাপ হওয়ায় হীরাবেনকে আমদাবাদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি ঠিক কী কারণে অসুস্থ ছিলেন, তা হাসপাতালের তরফে জানানো হয়নি। যে দিন তাঁকে ভর্তি করা হয়, সে দিনও হাসপাতালে গিয়ে মাকে দেখে আসেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার ভোর ৩.৩০টে নাগাদ সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন হীরাবেন।