ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসির গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন মোট সম্পদ (এইউএম)-এর পরিমাণে এই বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
এলআইসির এইউএম-এর পরিমাণ সম্প্রতি পেরিয়ে গিয়েছে ৫০ লক্ষ কোটি টাকার গণ্ডি। একে বিমা সংস্থার জন্য নতুন এক মাইলফলক বলেই মনে করা হচ্ছে। অতীতে আর কখনও এলআইসি এই পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি।
পরিসংখ্যান বলছে, মার্চের শেষ পর্যন্ত যা হিসাব, তাতে এলআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন মোট সম্পদের পরিমাণ ৫১,২১,৮৮৭ কোটি টাকা। এক বছরে প্রায় ১৬.৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এই অর্থের পরিমাণ।
তাৎপর্য পূর্ণ হল, এলআইসির এই এইউএমের পরিমাণ ভারতের পড়শি দেশ পাকিস্তানের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি)-র প্রায় দ্বিগুণ। তেমনটাই জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদেরা।
পাকিস্তানের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মূল্য ৩৩ হাজার কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় ২৯ লক্ষ কোটি টাকা)। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার গচ্ছিত অর্থ তার প্রায় দ্বিগুণ (৬১ হাজার কোটি ডলার)।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, শুধু পাকিস্তানের দ্বিগুণ নয়, এলআইসির অর্থ আরও দুই দেশের অর্থনীতিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে একটি এশিয়া এবং একটি ইউরোপের দেশ রয়েছে।
ইউরোপের ডেনমার্কের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ ৪১ হাজার কোটি ডলার। আবার সিঙ্গাপুরের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এখন ৫২ হাজার কোটি ডলার। এই দু’টি দেশকেই সম্প্রতি ছাপিয়ে গিয়েছে এলআইসি।
এলআইসির এইউএম-এর পরিমাণ পাকিস্তান-সহ ভারতের তিন পড়শি দেশের সম্মিলিত অর্থনীতির চেয়েও বেশি। তালিকায় রয়েছে নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা।
পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, নেপালের মোট অর্থনীতির পরিমাণ ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। শ্রীলঙ্কার জিডিপি বর্তমানে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারতের মোট অর্থনীতির পরিমাণ ছিল ৪৩ লক্ষ কোটি টাকা। অন্যান্য দেশে যখন জিডিপি দুই কিংবা তিন শতাংশ বেড়েছে, সেখানে এক বছরে ১৬ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতের জিডিপি।
এলআইসির এই সম্পদবৃদ্ধির নেপথ্যে শেয়ার বাজারে তার অগ্রগতিকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন অনেকে। গত ছ’মাসে বিমা সংস্থার শেয়ারের পরিমাণ ৩২.৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে স্টক থেকে এলআইসি ৭১.৭৪ শতাংশ রিটার্ন পেয়েছে। এই সাফল্য আকর্ষণ করেছে বিনিয়োগকারীদেরও। যা সংস্থার নির্ভরযোগ্যতা এবং বৃদ্ধিকে সুনিশ্চিত করেছে।
গত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ভিত নড়বড়ে হয়ে রয়েছে। গলা অবধি ঋণে ডুবে রয়েছে দেশের সরকার। তবে সামরিক খাতে তাদের বিনিয়োগ কমেনি।
আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার ঋণ দিতে অস্বীকার করলে মন্দার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় পাকিস্তান। পরে চিনের অর্থসাহায্যে আবার পাক অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। তবে অন্য অনেক দেশের চেয়ে অর্থনীতির দিক থেকে পিছিয়ে পাকিস্তান।
অন্য দিকে, ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। তার আগে রয়েছে কেবল আমেরিকা, চিন, জার্মানি এবং জাপান। চলতি অর্থবর্ষের শেষে জাপানকে পেরিয়ে আরও এক ধাপ উঠতে চলেছে ভারত। সে ক্ষেত্রে তারা চতুর্থ স্থানে পৌঁছে যাবে।
ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ এখন ৩ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় তার পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি ৩৯ লক্ষ কোটি টাকা।