পিতা ছিলেন বলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেতা। সত্তরের দশকে অমিতাভ বচ্চন এবং রাজেশ খন্নার সঙ্গেই বিনোদ খন্নার নাম আসত। সেই সময় উপার্জনের ভিত্তিতে বলি নায়কদের তালিকায় প্রথম সারিতে ছিলেন বিনোদ। তবে তাঁর বড় ছেলে রাহুল খন্না এখনও পর্যন্ত তাঁর কেরিয়ারে সে ভাবে সাফল্যের মুখ দেখেননি।
১৯৭২ সালের ২০ জুন মুম্বইয়ে জন্ম রাহুলের। শৈশব থেকেই বাড়িতে ছিল অভিনয়ের সংস্কৃতি। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়জগতে আসার কথা ভাবেন রাহুলও।
বাবার কাছে নিজের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন রাহুল। বড় ছেলেকে কোনও বাধা দেননি বিনোদ। মুম্বইয়ে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন রাহুল।
স্কুলের গণ্ডি পার করার পর রাহুলকে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেন বিনোদ। নিউ ইয়র্কের নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।
আমেরিকায় সাধারণত যে সব অন্য ধরনের ছবি তৈরি হয়, সেই ছবিগুলিতে অভিনয় করার জন্য দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন রাহুল।
আমেরিকায় পড়াকালীন রাহুলের জীবন নতুন মোড় নেয়। এক নামী সংস্থার তরফে ভিডিয়ো জকির খোঁজ করা হচ্ছিল। তা জানতে পেরে সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে অডিশন দেন তিনি।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে দেন রাহুল। অডিশন শেষে ভিডিয়ো জকি হিসাবে বেছে নেওয়া হয় রাহুলকে।
১৯৯৪ সাল থেকে টানা চার বছর বিভিন্ন জায়গায় সঞ্চালনার কাজ করতেন রাহুল। এমনকি, বলিপাড়ার বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এমন সময় ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিচালক দীপা মেহতার সঙ্গে পরিচয় হয় রাহুলের। ‘ওয়াটার’, ‘ফায়ার’ এবং ‘মিডনাইট’স চিলড্রেন’-এর মতো ছবি তৈরি করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দীপা।
সেই সময় ‘আর্থ’ নামে একটি ছবি তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন দীপা। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাহুলকে প্রস্তাব দেন তিনি। দীপার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান রাহুল।
১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আর্থ’ ছবিতে আমির খান এবং নন্দিতা দাসের মতো তারকা অভিনয় করেন। এই ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রাখেন রাহুল। কিন্তু আমিরের উপস্থিতির কারণে রাহুলের পারফরম্যান্স ঢা়কা পড়ে যায়।
২০০২ সালে আবার দীপার সঙ্গে কাজ করতে দেখা যায় রাহুলকে। ‘বলিউড/হলিউড’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাহুল। কিন্তু সেই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
এর পর গুটিকতক ড্রামা ঘরানার ছবিতে কাজ করেন রাহুল। কিন্তু কোনও ছবিই তেমন প্রশংসা পায়নি। অনেকেই মনে করেন, হিন্দি ফিল্মজগতের বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয়ের জন্য যে ধরনের অভিনয় দক্ষতার প্রয়োজন, আমেরিকায় থাকাকালীন তা শেখানো হয়নি তাঁকে।
‘দিল কাবাডি’, ‘লভ আজ কাল’ এবং ‘ওয়েক আপ সিড’-এর মতো হিন্দি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন রাহুল। বিনোদ খন্নার জ্যেষ্ঠপুত্রের পরিচয় থাকলেও সে ভাবে কাজ পেতেন না রাহুল।
চলতি বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লস্ট’ ছবিতে ইয়ামি গৌতমের সঙ্গে অভিনয় করেন রাহুল। বরং লেখালিখির দিকে ঝুঁকতে দেখা যায় তাঁকে। ব্লগ লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন নামী সংবাদপত্র, পত্রিকা এবং ওয়েবসাইটে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়।
আমেরিকার সিটকম ‘দ্য আমেরিকানস’-এর কয়েকটি পর্বে অভিনয় করেছেন রাহুল। সমাজমাধ্যমে অধিকাংশ সময় সক্রিয় থাকেন তিনি। ঝুলিতে বিশেষ কোনও ছবি না থাকলেও ইনস্টাগ্রামে দু’লক্ষের বেশি অনুরাগী রয়েছে বিনোদের বড় ছেলেের।