মঙ্গলবার খণ্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ। কলকাতার আকাশ থেকেও এই গ্রহণ দেখা যাবে। দেশের নানা প্রান্তে সূর্যের আংশিক গ্রহণ দেখতে উদ্গ্রীব হয়ে আছেন আগ্রহীরা।
মঙ্গলবার ১২ মিনিট সূর্যগ্রহণ দেখতে পাবেন কলকাতার বাসিন্দারা। গ্রহণ দেখা যাবে বিকেল ৪টে ৫২ মিনিট থেকে। সূর্যাস্ত হবে বিকেল ৫টা ৪ মিনিটে।
সূর্যকে আংশিক ‘গ্রাস’ করবে চাঁদ। দুপুরের পর গ্রহণ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তা স্পষ্ট দেখা যাবে সূর্যাস্তের ২ ঘণ্টা আগে থেকে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত গ্রহণ দেখা যাবে।
সোমবার পর্যন্ত কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে গ্রহণ দর্শন ছিল প্রায় অনিশ্চিত। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়াও বইছিল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে। ফলে মেঘলা আকাশে গ্রহণের সূর্য দেখা যাবে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন সকলে।
কিন্তু মঙ্গলবার সকালেই ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়েছে। কলকাতায় দেখা গিয়েছে রোদ ঝলমলে আকাশ। তাই সকাল থেকেই শহরে গ্রহণ নিয়ে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন মানুষ। তাঁরা সূর্যের আংশিক গ্রহণ দেখতে পাবেন বলে মনে করছেন।
আন্দামান নিকোবার এবং উত্তর পূর্ব ভারতের কিছু অংশ ছাড়া সারা ভারতেই এই গ্রহণ দেখা যাবে। উত্তর পূর্বের আইজল, ডিব্রুগড়, ইম্ফল, ইটানগর, কোহিমা, শিবসাগর, শিলচরে গ্রহণ দেখা যাবে না।
মঙ্গলবার সূর্যের মাত্র ৪ শতাংশ আড়াল করতে পারবে চাঁদ। ‘অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’-র তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের উত্তর পশ্চিমের রাজ্যগুলি থেকে মঙ্গলবারের গ্রহণ খুব স্পষ্ট দেখা যাবে।
ভারতীয় সময় অনুযায়ী, গ্রহণ শুরু হবে মঙ্গলবার দুপুর ২টো ২৯ মিনিটে। সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিটে গ্রহণ শেষ হবে। অর্থাৎ, খণ্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ চলবে ৪ ঘণ্টা ৩ মিনিট।
কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশন্যাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার (পিএসি)-এর তরফে জানানো হয়েছে, দিল্লি এবং মুম্বইয়ে যথাক্রমে ১ ঘণ্টা ১৩ মিনিট এবং ১ ঘণ্টা ১৯ মিনিট গ্রহণ দেখা যাবে।
ভারত ছাড়া মঙ্গলবার সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, এশিয়ার পশ্চিম অংশে, অতলান্তিক মহাসাগরের উত্তর ভাগ এবং ভারত মহাসাগরের উত্তর ভাগে।
যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করে সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গ্রহণের সময় খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকানো যাবে না। এতে চোখের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
এমপি বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের অধিকর্তা দেবীপ্রসাদ দুয়ারি এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘সূর্যের মাত্র ৪ শতাংশ ঢাকা পড়বে। খালি চোখে একেবারেই গ্রহণ দেখা যাবে না। এক্স রে প্লেট বা সাধারণ সানগ্লাস দিয়ে গ্রহণের সময় সূর্যের দিকে তাকালেও চোখের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।’’
গ্রহণ দেখার জন্য সোলার গগলস্ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ১৪ নম্বর ওয়েল্ডিং গ্লাস দিয়েও সূর্যগ্রহণ দেখা যেতে পারে।
জ্যোতিষশাস্ত্র বলছে, সূর্যগ্রহণের সময়ে দান, জপ ইত্যাদির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই সময়ে পবিত্র নদী এবং হ্রদে স্নানের মন্ত্র জপ করা হয়। এই সময়ে মন্ত্র সিদ্ধিও করা হয়। যদিও বিজ্ঞান এ সব সমর্থন করে না।
সূর্যগ্রহণের সময় বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন অনেকে। তাঁরা এই সময় যতটা সম্ভব ঈশ্বরকে স্মরণ এবং মন্ত্র জপ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ সবই বিশ্বাস এবং নির্দিষ্ট শাস্ত্রে বক্তব্য, বিজ্ঞানের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
জ্যোতিষশাস্ত্রের পরামর্শ, গ্রহণের সময় কোনও শুভ কাজ না করাই ভাল। বরং গ্রহণের পর দানের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া, গ্রহণকালে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত বলে মনে করেন কেউ কেউ। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞান বলেছে, গ্রহণের সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের যত্নের কোনও সম্পর্ক নেই।
তবে এই সমস্ত দাবি একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন দেবীপ্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘আজকাল সমাজমাধ্যম এবং নানা সংবাদমাধ্যমে গ্রহণ সম্পর্কে নানা খবর চোখে পড়ছে। গ্রহণের সময় কী কী করা উচিত বা অনুচিত, অনেকে তা বলে দিচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি, এগুলি অন্ধ কুসংস্কার ছাড়া কিছুই নয়। এর পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। আধুনিক সময়ে মানুষ যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব রকম সুবিধা ভোগ করছে, তখন এই ধরনের মানসিকতা রাখার যৌক্তিকতা নেই।’’
কালীপুজোয় সূর্যগ্রহণের ঘটনা বিরল। ২৭ বছর পর ফের তেমন মুহূর্তের সাক্ষী থাকবে দেশ। এর আগে ১৯৯৫ সালের ২৭ অক্টোবর পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হয়েছিল।
পরবর্তী আংশিক সূর্যগ্রহণ হবে ২০২৭ সালের ২ অগস্ট। এ ছাড়া, চলতি বছরের ৮ নভেম্বর পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে। তা গোটা ভারত থেকে দেখা যাবে।
২০২২ সালে মোট ৪টি গ্রহণ হওয়ার কথা। বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ হয়েছে ৩০ এপ্রিল। তার পর ১৬ মে চন্দ্রগ্রহণের সাক্ষী হয়েছিল দেশ। মঙ্গলবারের আংশিক সূর্যগ্রহণ চলতি বছরের তৃতীয় গ্রহণ। শেষ গ্রহণটি হবে নভেম্বরের ৮ তারিখ।