ফ্রাইস্ক্র্যাপার! এই নামেই ডাকা হত লন্ডনের বহুতলকে। এই বহুতল সত্যিই গলিয়ে দিতে পারত গাড়ি! বেশি ক্ষণ এর সামনে কাউকে রেখে দিলে মানুষের শরীরও পুড়ে যেত! লন্ডনের ফেনচার্চ স্ট্রিট-এ রয়েছে এই বহুতলটি।
বহুতলটির প্রকৃত নাম ২০ ফেনচার্চ স্ট্রিট। ২০০৯ সালে লন্ডনের ফেনচার্চ স্ট্রিট-এ এই বহুতলের কাজ শুরু হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে কাজ চলে। ২০১৪ সালে পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায় বহুতলটি।
অদ্ভুতদর্শন এই বহুতল দেখতে অনেকটা ওয়াকি টকির মতো। সে কারণেই উরুগুয়ের রাফায়েল ভিনোলি এর আরও একটি নাম রাখেন। ‘ওয়াকি টকি বিল্ডিং’। রাফায়েলই এর নকশা করেছিলেন।
৩৮ তলার এই বহুতল ৫২৫ ফুট উঁচু। বহুতলের একেবারে উপরের তিন তলা জুড়ে বাগান রয়েছে। প্রচুর গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে ওই তিন তলা। সঙ্গে একটি রেস্তোরাঁ এবং একটি পানশালাও রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে তিন তলার এই বাগান সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
বহুতলটি প্রথমে ৬৫৬ ফুট উঁচু করার কথা ছিল। কিন্তু কিছু সমস্যা থাকায় তার উচ্চতা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়। এটি বানাতে খরচ হয়েছে ২০ কোটি পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা।
ওয়াকি টকি বহুতল লন্ডনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে। একে দেখতে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ ভিড় জমাতে থাকেন। তার অদ্ভুত রূপ যেমন পর্যটকদের আকর্ষণ করত, তেমনই এই বহুতল সাধারণের ভয়ের কারণও হয়ে ওঠে।
বহুতলের বাইরেটা পুরোটাই কাচের। এটি বানানোর সময়ই এক সমস্যা চোখে পড়ে। প্রতি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং সূর্যের আলো সরাসরি এই বহুতলে পড়ে তা হলে এই বহুতল উত্তল লেন্সের মতো কাজ করে।
বহুতলের দক্ষিণে যে রাস্তা রয়েছে তার উপরই সূর্যের আলো সরাসরি গিয়ে পড়ে। উত্তল লেন্সের মাধ্যমে আলোর রশ্মি একটি জায়গায় ফেললে তার তাপমাত্রা বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞান বইয়ের এই তথ্য জেনে ছোটবেলায় অনেকেরই এ ভাবে কাগজ জ্বালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
ঠিক একই ভাবে ওই বহুতল উত্তল লেন্সের মতো কাজ করে সূর্যের বিক্ষিপ্ত রশ্মিকে একত্রিত করে দক্ষিণের রাস্তার উপর প্রতিফলিত করত। রাস্তার ওই অংশের তাপমাত্রা তাতে বহু গুণ বেড়ে যায়। ১১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা হয়ে যায়। গ্রীষ্মে আরও মারাত্মক হত অবস্থা।
২০১৩ সালের একটি ঘটনা জানলে বিস্মিত হয়ে উঠবেন। তখনও বহুতলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। কিন্তু কাজ প্রায় শেষের পথে। বাইরের দেওয়ালে কাচ লাগানো হয়ে গিয়েছে। সে বছর বহুতলের দক্ষিণের ওই রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ধাতব কাঠামো গলিয়ে দিয়েছিল বহুতলটি। সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত হয়েই এই ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটেছিল।
ওই গাড়ির মালিককে প্রায় এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল। রাস্তা এবং তার সংলগ্ন এলাকা এতটাই উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিল যে সেখানে রাস্তার উপর ফ্রাইং প্যানে ডিম ফাটিয়ে সেটা ভেজে ফেলা যাচ্ছিল। ওই এলাকার বহু দোকানের বাইরে রাখা পাপোশ পুড়ে গিয়েছিল।
তখন থেকে বহুতলটির আরও একটি নামকরণ হয়। ‘ফ্রাইস্ক্র্যাপার’। ‘স্কাইস্ক্র্যাপার’ থেকে ‘ফ্রাইস্ক্র্যাপার’। এই ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে দক্ষিণে ওই রাস্তার দিকে বহুতলের সামনে একটি শামিয়ানা ঝোলানো হয়।