গত কাল হয়ে গেল বহু প্রতীক্ষিত আইপিএল ২০২৪ এর নিলাম। সব দলই তাঁদের প্রয়োজনীয় ক্রিকেটারদের যোগ্য দাম দিয়ে দলে নিয়েছেন আগামী মরসুমের জন্য।
আইপিএল এর দলগুলির মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। পাঁচ বার আইপিএল-এর খেতাব জয়ী এই দলের মালিক অম্বানিগোষ্ঠী। হাতে বেশি টাকাও ছিল না। মাত্র ১৭.৭৫ কোটি টাকা। নিলামে তারাও গুছিয়ে নিয়েছে তাদের দল। কেমন হল মুম্বই-এর ২০২৪ আইপিএল ‘স্কোয়াড’?
নিলামের আগেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দল চমক দিয়েছিল। রোহিত শর্মার বদলে অধিনায়ক করে আনা হয় হার্দিক পাণ্ড্যকে। তার পরেই কার্যত সমালোচনার ঝড় ওঠে চারিদিকে।
জল্পনা হয় রোহিতের মুম্বই দলে থাকা নিয়েও। তবে সে সব জল্পনার অবসান করেই মুম্বই দলের এক কর্তা জানিয়ে দিয়েছেন রোহিত থাকছেন মুম্বইয়েই। ব্যাটার হিসাবে মাঠে নামবেন তিনি। তবে এ তো গেল অধিনায়কের কথা। তা ছাড়া কেমন হল বাকি দল? কাদের কিনল, কারাই বা রইল?
অম্বানিরা এই বছর নিলামে মোট ১৬.৭০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে এখন মোট খেলোয়াড়ের সংখ্যা ২৫। যার মধ্যে ১৭ জন এ দেশীয় এবং ৮ জন বিদেশী।
নিলামে বিড করে যাঁদের ছিনিয়ে এনেছে মুম্বই দল তাঁদের মধ্যে অন্যতম হল আফগানিস্তান অলরাউন্ডার মহম্মদ নবি। দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে তাঁকে দলে নিয়েছে মুম্বই।
জেরাল্ড কোয়েৎজে, দক্ষিণ আফ্রিকার এই অল রাউন্ডারকেও দলে নিয়েছে মুম্বই। বেস প্রাইস ২ কোটি থাকলেও দরাদরিতে ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে কোয়েৎজিকে দলে পেয়ে যায় রোহিতরা।
বোলারদের মধ্যে এই বছরে মুম্বইয়ের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি দিলশান মদুশঙ্ক। শ্রীলঙ্কার এই বোলার ইতিমধ্যেই দেখিয়েছেন নতুন বলে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন। বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচ উইকেটশিকারির মধ্যে ছিলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা সাধারণত বাঁহাতি পেসারদের সামনে সমস্যায় পড়েন। সেখানে মদুশঙ্ক ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। ৪.৬০ কোটি টাকার এই বোলারকে কেনে মুম্বই।
দিলশান ছাড়াও শ্রীলঙ্কার আর এক বোলারকেও দলে নিয়েছে হার্দিকরা। তিনি হলেন নুয়ান তুসারা। প্রথমে কলকাতা এবং বেঙ্গালুরু এই বিডিং শুরু করলেও পরে লড়াই দাঁড়ায় মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুর মধ্যে। অবশেষে ৪.৮০ কোটি টাকার বিনিময়ে এই বোলারকে দলে নেয় মুম্বই।
এ ছাড়াও ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে দলে নিয়েছে ভারতীয় স্পিনার শ্রেয়স গোপালকে। ২০১৪ সালে প্রথম আইপিএল খেলা এই বোলারের প্রথম দল ছিল মুম্বই। তবে পরে রাজস্থান, হায়দরাবাদ ঘুরে আবার এই দলে ফিরে এসেছে।
শিবালিক শর্মা, অংশুল কাম্বজ এবং নমন ধীর এই তিন ভারতীয় অল রাউন্ডারকেও দলে নিয়েছে মুম্বই। বেস প্রাইস ২০ লক্ষ টাকাতেই তাঁদের দলে নিয়েছেন অম্বানিরা।
এ ছাড়াও গত কয়েক মরসুম ধরে দলে রয়েছেন তারকা খেলোয়াড় সূর্যকুমার যাদব। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর মতো খেলোয়াড় খুব কম রয়েছে।
২০২২ সাল থেকে মুম্বইয়ে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ তুর্কি ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য ইতিমধ্যেই তিনি ‘বেবি এবি’ নামে পরিচিত। এই মরসুমে রোহিত, হার্দিকদের পাশাপাশি ডেওয়াল্ড ব্রেভিস হয়ে উঠতে পারেন মুম্বই দলের ব্যাটিং স্তম্ভ।
অসি অলরাউন্ডার টিম ডেভিড ইতিমধ্যেই নাম কিনেছেন তাঁর খেলার মধ্যমে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর পারফরম্যান্স বেশ ভাল। রোহিতদের সঙ্গে দলে রয়েছেন এই অসি তারকাও। রয়েছেন আরেক অসি ক্রিকেটার জেসন বেহরেনডর্ফ।
রোমারিয়ো শেফার্ড, বিশ্বকাপের মাঝেই তাঁকে দলে নিয়েছিল মুম্বই। হার্দিক পাণ্ড্যর সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের এই অলরাউন্ডার হতে পারেন তুরুপের তাস। হার্দিককে দলে নেওয়ার আগেই রোমারিয়োকে দলে নেয় অম্বানিরা।
রয়েছেন ভারতের অন্যতম তরুণ ক্রিকেটার ঈশান কিশান। আইপিএলে তাঁর ব্যাট বেশ ভরসাযোগ্য। কেবল ব্যাটার হিসাবেই নয়, উইকেটের পিছনেও ভরসাযোগ্য নাম ঈশান।
কোনও কারণে ঈশান খেলতে না পারলে উইকেট রক্ষক হিসাবে খেলতে পারেন ভারতীয় ব্যাটার বিষ্ণু বিনোদ। যদিও আগের বছর সেরকম নজর কারতে পারেননি বিষ্ণু। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৪১৪ বলে ৫৭৮ রান করা নেহাল ওয়াধেরাও রয়েছেন দলে।
ব্যাটে এবং বলে দুটিতেই ভরসা জোগানোর জন্য রয়েছেন ভারতীয় অলরাউন্ডাররাও। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন তিলক বর্মা। সম্প্রতি কেএল রাহুলের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক দিনের ফরম্যাটে ভারতীয় দলে রয়েছেন এই অল রাউন্ডার।
ঘরোয়া ক্রিকেট মাতানো এই বাঁহাতি স্পিনার শামস মুলানিকেও দলে রেখেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আইপিএলে উইকেট রয়েছে তাঁর। তবে সে ভাবে এখনও চোখে পড়েননি কোনও ম্যাচেই।
২০২৩ সালে মুম্বই আবার কেনে ডানহাতি স্পিনার পিউস চাউলাকে। ২০২৪ আইপিএল দলেও রয়েছেন তিনি। বেস প্রাইস ৫০ লক্ষ টাকাতেই তাঁকে গত বছর কেনেন অম্বানিরা। দলে রয়েছেন সচিন-পুত্র অর্জুন তেন্ডুলকরও।
যশপ্রীত বুমরা রয়েছেনই। মুম্বই দলের অন্যতম ভরসা তিনি। ডেথ ওভার হোক বা শুরু, বুমরার জুড়ি মেলা ভার।
আইপিএলে মুম্বই দলের নেট বোলার হিসাবে শুরু করে প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন কুমার কার্তিকেয়। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আগের আইপিএলে বেশ কয়েকটি উইকেটও পেয়েছিলেন কার্তিকেয়। এই বছরও রোহিতদের সঙ্গে খেলতে পারেন কার্তিকেয়।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বোলার আকাশ মাধোয়ালকে ২০২৩-এর আইপিএলের আগে কেউই চিনতেন না। সেই আকাশকে এখন সকলেই চিনে গিয়েছেন। আগের আইপিএলে মুম্বই দলে বুমরার অভাব ঢেকে দিয়েছিলেন মাধোয়াল। একটি ম্যাচে পাঁচ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আট ম্যাচে ১৪টি উইকেট নিয়েছিলেন। এই মরসুমেও মুম্বই দলের পেস আক্রমণ তৈরি হতে পারে তাঁকে ঘিরেই।