ইচ্ছাশক্তি আর অদম্য জেদ থাকলে যতই ঝড়ঝাপটা আসুক না কেন লক্ষ্যে পৌঁছনো কেউ রুখতে পারবে না। অশান্ত পরিবেশ থেকে উঠে আসা এক মহিলা কী ভাবে আইপিএস হয়ে উঠলেন, তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রুবেদা সালাম।
কাশ্মীরের কুপওয়াড়ার ফারকিনে জন্ম রুবেদার। শৈশব থেকেই বন্দুক, গুলি আর জঙ্গিদের চোখরাঙানি দেখেই বড় হয়েছেন তিনি।
রুবেদা জানিয়েছেন, প্রায়ই অশান্ত হয়ে উঠত কুপওয়াড়া। চারদিকে গোলাগুলির আওয়াজ, সেনাজওয়ানরা দৌড়ে বেড়াচ্ছেন, জঙ্গি দমন অভিযান ইত্যাদি দেখতে দেখতে গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল। স্কুলও ঠিক মতো যেতে পারতেন না। অশান্ত পরিবেশে মাঝেমধ্যেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হত।
স্কুল মাঝেমধ্যেই বন্ধ থাকায় এখানকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ত। রুবেদা নিজেও ছিলেন ভুক্তভোগী। কিন্তু সেই সব বাধাকে অতিক্রম করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছেন।
রুবেদার বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে আইপিএস অফিসার হবেন। বাবার সেই স্বপ্নকে বাস্তব করতে জঙ্গিদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেও এগিয়ে গিয়েছেন রুবেদা।
রুবেদা এক সাক্ষাৎকারে জানান, যে সমাজে তিনি বড় হয়েছেন, সেই সমাজে এক জন মহিলা আইপিএস অফিসার হবেন, সেই বিষয়টি যে ভাল ভাবে নেওয়া হবে না সেটা তিনি আঁচ করেছিলেন। তিনি এটাও জানতেন, এর জন্য অনেক লড়াই করতে হবে।
আইপিএস হওয়ার আগে রুবেদা শ্রীনগর মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। কিন্তু ডাক্তারি তাঁর লক্ষ্য ছিল না। ফলে ডাক্তারির পাশাপাশি ইউপিএসসির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।
এক সাক্ষাৎকারে রুবেদা বলেন, “আইপিএস-কে বেছে নেওয়া যেমন একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল, আইপিএস পাশ করার পর মনের মধ্যে আরও একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছিল, সমাজ এটাকে কী ভাবে নেবে। ফলে আইপিএসের চাকরি করব কি না তা নিয়ে একটা দোলাচল তৈরি হয়েছিল মনে। কিন্তু পরিবারের সমর্থন আমাকে সাহস জুগিয়েছে।”
২০১৩ সালে প্রথম ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন। শুধু তাই নয়, জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম মহিলা হিসাবে ইউপিএসসি পাশও করেন রুবেদা। তিনিই জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম মহিলা আইপিএস আধিকারিক।
আইপিএস পাশ করার পর হায়দরাবাদে প্রশিক্ষণ নেন রুবেদা। তাঁর কথায়, “প্রশিক্ষণ খুব কঠিন ছিল। প্রশিক্ষণ শেষে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার হিসাবে যোগ দিই।”
মহিলাদের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন রুবেদা। এক সাক্ষাৎকারে রুবেদা বলেন, “তামিলনাড়ুতে যখন দায়িত্ব পেয়েছিলাম, দেখেছিলাম সেখানে পুলিশকে কী ভাবে সম্মান দেন সাধারণ মানুষ। হায়দরাবাদে একটি ওয়ার্কশপ করেছিলাম। সেই ওয়ার্কশপে যে সব তরুণী, যুবতীরা এসেছিলেন, দেখেছিলাম তাঁদের চোখে আইপিএস হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু ভয় ছিল, এ কাজ করতে তাঁদের অভিভাবকরা সমর্থন করবেন তো?”
আইপিএস হওয়ার পরেও থেমে থাকেননি রুবেদা। তিনি দ্বিতীয় বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন। এ বারও পাশ করেন তিনি। আইপিএস হিসাবে সাফল্যের পর আমলার দায়িত্বও সামলাচ্ছেন রুবেদা।
রুবেদা জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য কাশ্মীরের মহিলাদের আরও বেশি করে ইউপিএসসি পরীক্ষায় উৎসাহিত করা। এ কাজে যাতে তাঁদের পরিবারও এগিয়ে আসে, সেই কাজও করছেন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে রুবেদা বলেন, “জম্মু-কাশ্মীরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সেই প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে না। পরিবারের সমর্থনের অভাব, অশান্ত পরিবেশ— সব মিলিয়ে অনেকেই সুযোগ পাচ্ছে না।” কিন্তু সেই সব বাধা কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে বলেও মত তাঁর। যে ভাবে তিনি সকল বাধাকে টপকে, সমাজের নানা আপত্তিকে উপেক্ষা করে আজ এক জন আমলা, জম্মু-কাশ্মীরের মেয়েদের মধ্যেও তাঁর এই ছায়া দেখতে চান।