রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের ঠিক পাশটিতে দাঁড়িয়ে থাকেন ওঁরা। আপাতমস্তক সেনা পোশাকে সজ্জিত। হাবেভাবে পান থেকে চুন না-খসা নিয়মানুবর্তিতা। এঁদের বলা হয় এইড-দ্য-কাঁ।
সেনা বিভাগেরই একটি সম্মানীয় পদ এটি। দেশ, রাজ্য অথবা সেনাবাহিনীর শীর্ষপদে যিনি রয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত সহায়ক বা আপ্তসহায়কের দায়িত্ব পালন করাই এঁদের কাজ।
ষাটের দশকে ফরাসি সেনাবাহিনীতে সেনা অফিসারের সহায়ক হিসাবে নিয়োগ করা হত এইড-দ্য-কাঁ। পরে রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, গ্রেট ব্রিটেনেও এই রীতি চালু হয়।
ভারতেও এই নিয়ম চালু রয়েছে স্বাধীনতার আগে থেকে। তবে এই ২০২৩ সালে এসে প্রথম ভারত পেল তাদের প্রথম মহিলা এইড-দ্য-কাঁ।
মিজোরামের রাজ্যপালের এইড-দ্য-কাঁ হিসাবে নিয়োগ করা হল এক মহিলা বায়ুসেনা অফিসারকে। নাম মনীষা পাঢ়ি।
বয়স ২৭ বছর। বাড়ি ভুবনেশ্বরে। মনীষা ভারতীয় বায়ুসেনার ২০১৫ সালের ব্যাচের এক জন স্কোয়াড্রন লিডার।
গত ২৯ নভেম্বর, সোমবার মিজোরামের রাজ্যপাল হরি বাবু কম্ভামপাতির এইড-দ্য-কাঁ হিসাবে রিপোর্ট করেন মনীষা। আইজলের রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন।
তিনিই মনীষাকে ওই পদের ব্যাজ পরিয়ে দেন।
ভারতে সাধারণত রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, সেনাবাহিনীর প্রধান, বায়ুসেনা প্রধান এবং নৌসেনা প্রধানদের এইড-দ্য-কাঁ থাকে।
রাষ্ট্রপতির ‘এইড–দ্য-কাঁ’র সংখ্যা পাঁচ জন। এঁদের মধ্যে তিন জনকে নিয়োগ করা হয় সেনাবাহিনী থেকে, এক জন বায়ুসেনা এবং এক জন নৌবাহিনী থেকে।
এ ছাড়া রাজ্যপালের দু’জন করে এইড-দ্য-কাঁ থাকে।
তবে বছরের পর বছর এইড-দ্য-কাঁ নিয়োগের প্রচলন থাকলেও আজ পর্যন্ত কোনও মহিলাকে এই পদে আনা হয়নি, মনীষা দেশের প্রথম মহিলা এইড-দ্য-কাঁ হিসাবে ইতিহাস গড়লেন।
ওড়িশার গঞ্জাম জেলার বহরমপুরের বাসিন্দা মনীষা। জন্ম ১৯৯৬ সালের ২৪ জুলাই।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারেই বড় হয়েছেন তিনি। মা ছিলেন গৃহবধূ। বাবা নৌ বাহিনীর কর্তা।
মনীষার স্কুল-কলেজের পড়াশোনা মূলত ওড়িশাতেই। ভুবনেশ্বরের সিভি রমন কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।
ছোট থেকেই বাবাকে দেখে অনুপ্রাণিত পাঢ়ি পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন বরাবর। বায়ুসেনা বাহিনীতে থাকাকালীনও তিনি বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে কাজ করেছেন। স্কোয়াড্রন লিডার হিসাবে কাজ করেছেন বিদার, পুণে এবং ভাটিন্ডাতে।
মনীষাকে তাঁর নতুন পদে স্বাগত জানিয়ে মিজোরামের রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘মনীষার এইড–দ্য-কাঁ পদে নিয়োগ ভারতে মহিলাদের অগ্রগতির প্রমাণ। ভারতীয় নারীদের এই অগ্রগতিকে আমাদের উদ্যাপন করা উচিত।’’