জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জন্মদিন। একই মাসের শেষের দিকে সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন বলি অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিন্হা। অন্তত বলিপাড়ায় এমন গুঞ্জনই ছড়িয়েছে। বলিপাড়ার তারকারা ইতিমধ্যে বিয়ের আমন্ত্রণপত্র পেতে শুরু করেছেন। বিয়ের কার্ডটি পত্রিকার কভারের ডিজ়াইনে তৈরি। উপরে লেখা ‘গুঞ্জন সত্যি হল’। সোনাক্ষীর হবু স্বামী জ়াহির ইকবাল রত্নাসি বলিউডের নামকরা অভিনেতা নন। তবে তাঁর সঙ্গে রয়েছে বলিপাড়ার খান পরিবারের যোগ।
১৯৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম জ়াহিরের। বাবা-মা, ভাই এবং দিদির সঙ্গে মুম্বইয়ে থাকেন তিনি। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন জ়াহির।
জ়াহিরের বাবা পেশায় ব্যবসায়ী। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল জ়াহিরের। এমনকি, ছাত্রজীবনে তিন বন্ধুর সঙ্গে ছবি বানাবেন বলে পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি। সেই ছবিতে বন্ধুরা প্রযোজক, পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকারের ভূমিকা পালন করলেও জ়াহিরের ইচ্ছা ছিল ক্যামেরার সামনে থাকার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। বরং কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর পারিবারিক ব্যবসার কাজে ঢুকে পড়েন তিনি।
কলেজের গণ্ডি পার করার পর টানা ছ’বছর ব্যবসার কাজকর্ম দেখাশোনা করেন জ়াহির। তবে বলিউডের তারকাদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, জ়াহির যে স্কুলে পড়তেন সেই স্কুলে জ়াহিরের সিনিয়র ছিলেন বলি অভিনেতা রণবীর কপূর। সলমন খানের বোন অর্পিতা খান সহপাঠী ছিলেন জ়াহিরের। সেই সূত্রেই সলমনের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁর।
জ়াহিরের বাবা ইকবাল রত্নাসির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে সলমনের। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জ়াহির জানিয়েছিলেন যে, প্রেমিকার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার জন্য তাঁর বাবার কাছ থেকে ২০১১ টাকা ধার করেছিলেন সলমন। জ়াহিরের কেরিয়ার গড়ে সেই টাকা সুদসমেত ইকবালকে ফেরত দিতে চেয়েছিলেন বলিউডের ‘ভাইজান’।
জ়াহির সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমার দিদির বিয়ের সময় সলমনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সে দিন বিশেষ প্রয়োজনে রাজস্থান যাওয়ার কথা ছিল সলমনের। আমরা ভেবেছিলাম যে তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে আসবেন না। কিন্তু কোনও কারণে তাঁর যাওয়ার সময় পিছিয়ে যায়। তাই দিদির বিয়েতে চলে এসেছিলেন তিনি।’’
জ়াহিরের দাবি, দিদির বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচ করছিলেন তিনি। তাঁর নাচ দেখেই নাকি জ়াহিরকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সলমন।
জ়াহির সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘দিদির বিয়েতে আমি নাচছিলাম। হঠাৎ দেখি, সলমন আমার সঙ্গে নাচতে শুরু করেছেন। দু’জনে প্রায় এক ঘণ্টা নেচেছিলাম। তখনই তিনি আমায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, আমি কোনও কাজ করছি কি না। আমি যখন জানালাম তেমন কিছু করি না, তখন আমাকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন সলমন।’’
জ়াহিরকে সব কিছু ছেড়ে শুধু অভিনয়ে মন দিতে বলেন সলমন। অভিনয়ের পাশাপাশি নাচ এবং মার্শাল আর্টসের প্রশিক্ষণ নেওয়ার নির্দেশও দেন সলমন।
সলমনের সহকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন জ়াহির। দুই থেকে তিন বছর সলমনের সঙ্গে কাজ করার সূত্রে অভিনেতার সঙ্গে ছবি নিয়ে আলোচনা করারও সময় পেতেন জ়াহির।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জ়াহির জানিয়েছিলেন, সলমন কোনও ছবির শুটিং করলে সেখানে চলে যেতেন জ়াহির। সলমন কী ভাবে অভিনয় করছেন তা অনুসরণ করতেন তিনি। এমনকি, পড়াশোনার জন্য জ়াহিরকে বহু ছবির চিত্রনাট্য দিতেন সলমন। দু’জন মিলে সংলাপ বলে মহড়াও দিতেন। এই ভাবে ধাপে ধাপে জ়াহিরকে অভিনয় শেখান সলমন। এমনটাই দাবি করেন জ়াহির।
২০১৪ সালে সলমনের ভাই সোহেল খানের ছবি ‘জয় হো’তে সহ-পরিচালনার কাজ করেন জ়াহির। পাঁচ বছর ক্যামেরার পিছনে থেকে ফিল্মজগতের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। ২০১৯ সালে সলমনের ‘নোটবুক’ ছবির হাত ধরে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন জ়াহির।
২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডাবল এক্সএল’ ছবিতে সোনাক্ষী সিন্হা এবং হুমা কুরেশির সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান জ়াহির। সেই সূত্রে দুই অভিনেত্রীর সঙ্গেই ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাঁর।
বহু জনপ্রিয় গায়কের মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করতে দেখা যায় জ়াহিরকে। ২০২২ সালে সোনাক্ষীর সঙ্গে ‘ব্লকবাস্টার’ নামের একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করেন তিনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, সোনাক্ষীর সঙ্গে জ়াহিরের প্রেমপর্ব চলেছে বহু দিন ধরেই। এক বছর থেকেই দু’জনে নিজেদের প্রেমে ‘অঘোষিত’ সিলমোহর দেন। নানা জায়গায় ঘুরতে গিয়েছেন দুই তারকা। সমাজমাধ্যমেও একসঙ্গে ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করেন তাঁরা। পোস্টের তলায় একে অপরের জন্য ভালবাসা-আদরে মাখা বার্তা দেন দু’জনেই। কিন্তু প্রকাশ্যে কখনওই সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি তাঁরা। প্রশ্ন করা হলে বরং কায়দা করে রহস্য তৈরি করে এড়িয়ে গিয়েছেন।
মায়ানগরীতে এ বার গুঞ্জন, আগামী ২৩ জুন মুম্বইয়ে একটি বিলাসবহুল হোটেলে জ়াহির এবং সোনাক্ষীর বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। সদ্য তৃণমূলের টিকিটে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় বারের জন্য সাংসদ হয়েছেন সোনাক্ষীর বাবা শত্রুঘ্ন সিন্হা। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের জন্যই নাকি অপেক্ষা করছিলেন শত্রুঘ্ন-কন্যা। ভোটের লড়াইয়ে বাবার জয়ের পরেই বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অভিনেত্রী।
খান পরিবারের সঙ্গে সোনাক্ষীর সম্পর্ক অজানা নয়। সলমনের ছবিতে অভিনয় করেই কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। জ়াহিরের সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়েছিল সলমনের মাধ্যমে।
গত বছর ক্যামেরার সামনে জ়াহির এবং সোনাক্ষী প্রথম এক ফ্রেমে ধরা দেন সলমনের বোন অর্পিতা খানের ইদের পার্টিতে। তবে তা ব্যক্তিগত পরিসরে। অন্দরের খবর, সেই পার্টিতে নাকি সোনাক্ষীর পাশ থেকে নড়েননি জ়াহির।
পার্টির একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে সোনাক্ষীকে ‘বৌদি’ বলে উল্লেখও করেন অর্পিতা। কিন্তু সেই ছবি সমাজমাধ্যমের পাতা থেকে মুহূর্তের মধ্যে সরিয়ে দেন তিনি।
সোনাক্ষীর আগে যদিও অন্য অভিনেত্রীদের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে জ়াহিরের। বলিপাড়া সূত্রে খবর, দক্ষিণী মডেল-অভিনেত্রী দীক্ষা সিংহের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়।
কানাঘুষো শোনা যায়, দীক্ষার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির শিশু অভিনেত্রী সানা সইদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান জ়াহির। কিন্তু সেই সম্পর্কের স্থায়িত্বও বেশি দিন ছিল না।
বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, ট্র্যাফিক নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা করা হয়েছিল জ়াহিরকে। মুম্বইয়ের বান্দ্রা এলাকায় অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালিয়েছিলেন বলে জরিমানা করেছিল মুম্বই পুলিশ।
অভিনয়ের পাশাপাশি সাঁতার কাটতে, সাইকেল চালাতে এবং দৌড়তে পছন্দ করেন জ়াহির। দেশ-বিদেশের নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
অবসর সময়ে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসেন জ়াহির। তবে একা ঘুরতে যাওয়ায় বিশ্বাসী নন তিনি। বন্ধুবান্ধব অথবা পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে যেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন অভিনেতা। বলিপাড়া সূত্রে খবর, দুবাই সরকারের তরফে তাঁকে ‘গোল্ডেন ভিসা’ দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সলমনের ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান জ়াহির। তার পর আর কোনও ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
বলিপাড়ায় অভিনেত্রী হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সোনাক্ষী। সম্প্রতি ‘হীরামন্ডি’ সিরিজ়ে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন তিনি। কিন্তু অভিনেতা হিসাবে দর্শকের মনে এখনও ছাপ ফেলতে পারেননি জ়াহির। অথচ, সলমনের হাত ধরে দু’জনেই বলিপাড়ায় পদার্পণ করেছেন।
কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, জ়াহির-সোনাক্ষীর বিয়েতে তেমন কোনও ‘থিম’ নেই। বরং অতিথিদের সাধারণ পোশাকেই আসতে বলা হয়েছে। নিমন্ত্রিতের তালিকায় রয়েছে ‘হীরামন্ডি’র তারকারা। এ ছাড়াও সলমন খানের বাড়ির সকলেই যে নিমন্ত্রিত থাকবেন, তা বলাই বাহুল্য।
এক সময় সোনাক্ষীর সঙ্গে রণবীর সিংহের প্রেমের চর্চা চলত বলিপাড়ায়। ‘লুটেরা’ ছবির শুটিংয়ের সময় নাকি কাছাকাছি এসেছিলেন তাঁরা। তার পর সেই সম্পর্ক নাকি ভেঙেও যায়। নিজের বিয়েতে প্রাক্তনকে নিমন্ত্রণ করেন কিনা, সেটাই দেখার। তবে শত্রুঘ্নের সঙ্গে বলিউডের সকলের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই মেয়ের বিয়েতে অতিথি-তালিকা যে লম্বা হতে চলেছে, তেমনই আভাস মিলছে।
সম্প্রতি ‘হীরামন্ডি’ সিরিজ়ের প্রচারের ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শর্মা’র শো-এ এসে বিয়ে করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন সোনাক্ষী। অভিনেত্রী জানান, কী ভাবে একের পরে এক তাঁর সমসাময়িক অভিনেতারা বিয়ে করে ফেলছেন। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘কেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিচ্ছ? ও (কপিলকে দেখিয়ে বলেন) জানে, আমি সত্যিই বিয়ে করতে চাই।’’ তবে পাত্রটি কে, তা ঊহ্য রাখেন সোনাক্ষী।
সোনাক্ষীর বিয়ে প্রসঙ্গে তাঁর পরিবারের কাউকে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়েছেন। কখনও বলেছেন, ‘‘সরাসরি সোনাক্ষীকেই জিজ্ঞাসা করুন।’’ কখনও বলেছেন, ‘‘আমরা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
সোনাক্ষীর উত্তর অন্য ধারায় বয়ে যায়। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আমার বিয়ে নিয়ে আমার পরিবার এতটা চিন্তিত নয়। কিন্তু বাইরের লোকের প্রচুর চিন্তাভাবনা। আমার জীবন আমার সিদ্ধান্ত। লোকজনের এ নিয়ে এত মাথাব্যথা কিসের তা বুঝি না। তবে এ নিয়ে আমি এখন কিছু ভাবি না। সব সয়ে গিয়েছে। মানুষের কৌতূহল রয়েছে, তা নিয়ে আমার কিছু করার নেই।’’
বিয়ে নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানাননি সোনাক্ষী এবং জ়াহির। তবে এ কি শুধু রটনা? না কি সকলের অগোচরে বিয়ের আয়োজন সেরে ফেলছেন দুই তারকা?