কেরিয়ারের ঝুলিতে ‘লয়লা মজনু’, ‘বুলবুল’, ‘মদগাঁও এক্সপ্রেস’-এর মতো ছবি থেকে শুরু করে রয়েছে ‘বোম্বাই মেরি জান’, ‘কালা’, ‘খাকি: দ্য বিহার চ্যাপ্টার’-এর মতো ওয়েব সিরিজ়। অভিনয়ের প্রতি এমনই নেশা যে, মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমনকি, টানা ছ’মাস দাড়ি না কেটেও দিন কাটিয়েছিলেন বলি অভিনেতা অবিনাশ তিওয়ারি।
১৯৮৫ সালের ১৫ অগস্ট বিহারের গোপালগঞ্জে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম অবিনাশের। তাঁর বয়স যখন তিন বছর, তখন বিহার ছেড়ে মুম্বই চলে যায় অবিনাশের পরিবার। মুম্বইয়ে বাবা-মা এবং দিদির সঙ্গে থাকতেন তিনি।
ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল অবিনাশের। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে মুম্বইয়ের একটি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ে তুলবেন বলে মাঝপথে কলেজ ছেড়ে দেন তিনি।
পড়াশোনা ছেড়ে মুম্বইয়ের একটি নামকরা থিয়েটারের দলে যুক্ত হন অবিনাশ। অভিনয় শেখার জন্য নিউ ইয়র্কের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন তিনি। ২০০৬ সালে ‘অনামিকা: হার গ্লোরিয়াস পাস্ট’ নামে একটি তথ্যচিত্রে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
একাধিক তথ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয় করেন অবিনাশ। ২০০৯ সালে ‘সুনো না… এক নন্হি আওয়াজ’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও অভিনয় করেন তিনি। ২০১৪ সালে ‘যুদ্ধ’ নামের একটি ধারাবাহিকে দেখতে পাওয়া যায় তাঁকে।
২০১৭ সালে ‘তু হে মেরা সানডে’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় অবিনাশকে। কিন্তু চলচ্চিত্র জগতে নিজের পরিচিতি ঠিক মতো তৈরি করতে পারছিলেন না তিনি।
২০১৮ সালে অবিনাশের কেরিয়ার নতুন দিকে মোড় নেয়। সাজিদ আলির পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘লয়লা মজনু’। বলি অভিনেত্রী তৃপ্তি ডিমরির সঙ্গে এই ছবিতে জুটি বেঁধেছিলেন অবিনাশ। দুই নবাগত তারকার জীবনেই এই ছবিটি সাফল্য নিয়ে আসে।
‘লয়লা মজনু’ ছবিতে মজনুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল অবিনাশকে। বলিপাড়া সূত্রে খবর, এই চরিত্রটি পর্দায় নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য টানা ছ’মাস দাড়ি কাটেননি তিনি। এমনকি, ১৭ দিনের মাথায় ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
মজনু যে লয়লাকে পাগলের মতো ভালবাসে, চরিত্রের এই দিকটি পর্দায় নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য জঙ্গলে দিন কাটাতেন অবিনাশ। ‘লয়লা মজনু’ ছবিতে জঙ্গলের দৃশ্য ছিল। শুটিংয়ের সময় শুটিং দলের সদস্যেরা জঙ্গলের কাছে একটি হোটেলে থাকতেন। কিন্তু অবিনাশ সময় কাটাতেন জঙ্গলের মধ্যে। এমনকি, নিজের কাছে ফোনও রাখতেন না তিনি।
মজনুর চরিত্রই অবিনাশকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। ‘লয়লা মজনু’ ছবি মুক্তির দু’বছর পর আবার অবিনাশ এবং তৃপ্তির জুটিকে দেখা যায়। তবে ওটিটির পর্দায়। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বুলবুল’ ছবিতে আবার একসঙ্গে অভিনয় করেন দুই তারকা।
২০২০ সালে ওটিটির পর্দায় মুক্তি পায় ‘গোস্ট স্টোরিজ়’। কর্ণ জোহরের পরিচালনায় একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে ‘গোস্ট স্টোরিজ়’-এ অভিনয় করেন অবিনাশ।
২০২১ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’। এই ছবির মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় পরিণীতি চোপড়াকে। থ্রিলার ঘরানার এই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান অবিনাশ।
‘কালা’, ‘খাকি: দ্য বিহার চ্যাপ্টার’ এবং ‘বোম্বাই মেরি জান’ নামের তিনটি ওয়েব সিরিজ়ে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায় অবিনাশকে। ওয়েব সিরিজ়গুলিতে অভিনয় করে দর্শকমনে আরও বেশি করে জায়গা করে ফেলেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘খাকি: দ্য বিহার চ্যাপ্টার’ ওয়েব সিরিজ়ে নিজের চরিত্রের সঙ্গে আত্মস্থ হওয়ার জন্য বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামের ধাবায় গিয়ে সেখানকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতেন অবিনাশ। স্থানীয়দের হাবভাব লক্ষ করে তা অনুশীলনও করতেন। এমনকি, বেশ কয়েক দিন ধরে খৈনি খাওয়ার পদ্ধতিও রপ্ত করেছিলেন তিনি।
২০২২ সালে ‘জহাঁ’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয় করেন অবিনাশ। এই ছবিতে অবিনাশের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অভিনেত্রী ম্রুনাল ঠাকুর।
‘পন্নিয়িন সেলভন’ নামে জনপ্রিয় তামিল ছবিতে একটি চরিত্রের জন্য হিন্দি ভাষায় নেপথ্য কন্ঠ দিয়েছেন অবিনাশ। এই ছবির দুই পর্বেই ডাবিং করেন তিনি।
চলতি বছরের মার্চ মাসে পরিচালনায় হাতেখড়ি হয় বলি অভিনেতা কুণাল খেমুর। কমেডি ঘরানার ছবি ‘মদগাঁও এক্সপ্রেস’ দর্শকের প্রশংসাও পায়। প্রায় ছ’বছর পর এই ছবির মাধ্যমে আবার বড় পর্দায় দেখা যায় অবিনাশকে।
বহু ছবি এবং ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করলেও অবিনাশ এখনও দর্শকের কাছে ‘লয়লা মজনু’র ‘মজনু’ হিসাবেই অধিক পরিচিত। সমাজমাধ্যমে অভিনেতার অনুরাগীর সংখ্যা নজর কাড়ার মতো। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা দেড় লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।