কখনও কৌতুকে মোড়া, কখনও বা গুরুগম্ভীর— যে ধরনের চরিত্রই হোক না কেন, পর্দায় তা নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলেন বিজয় রাজ। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকমনে জায়গা করে নিলেও অভিনেতাকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছিল।
১৯৬৩ সালের ৫ জুন উত্তরপ্রদেশের ইলাহাবাদে জন্ম বিজয়ের। তার পর দিল্লি চলে যান তিনি। দিল্লিতেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন বিজয়।
অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায় কলেজে থাকাকালীন সেখানকার নাটকের দলের সদস্য হন বিজয়। অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার তৈরি করবেন বলে দিল্লিতে নাটকের একটি জনপ্রিয় দলের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পরে মাসপ্রতি ১২ হাজার টাকা বেতনের বিনিময়ে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় কাজ করতে শুরু করেন।
‘পাগল ঘর’ নামের একটি নাটকে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান বিজয়। এই নাটকে এক পুলিশকর্মীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। বলিপাড়া সূত্রে খবর, মঞ্চে বিজয়ের পারফর্ম্যান্স দেখার পর বলিপাড়ার খ্যাতনামী ছবিনির্মাতাদের কাছে বিজয়ের অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন বলি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ।
চার বছর দিল্লিতে নাটক করার পর ১৯৯৮ সালে মুম্বই চলে যান বিজয়। বড় পর্দায় অভিনয়ের আগে টানা ১০ বছর মুম্বইয়ে নাটকে অভিনয় করতেন তিনি।
গিরিশ কারনাদের ‘অগ্নি অউর বরখা’ নাটকে ৯০ বছর বয়সি বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিজয়। দর্শকের আসনে বসেছিলেন নাসিরুদ্দিন। মঞ্চে বিজয়ের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তার পর বলিপাড়ার ছবিনির্মাতাদের কাছে গিয়ে বিজয়ের কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৯ সালে ‘ভোপাল এক্সপ্রেস’ ছবির হাত ধরে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন বিজয়। নাসিরুদ্দিনের কথা শুনে বিজয়কে অভিনয়ের সুযোগ দেন ‘ভোপাল এক্সপ্রেস’ ছবির পরিচালক মহেশ মাঠাই। এমনকি, ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘মনসুন ওয়েডিং’-এ নাসিরুদ্দিনের কথা শুনে বিজয়কে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন পরিচালক মীরা নায়ার।
‘মনসুন ওয়েডিং’-ও বিজয়ের অভিনয় সকলের মনে ধরে। তার পর ‘লাল সালাম’, ‘শক্তি: দ্য পাওয়ার’, ‘কোম্পানি’, ‘জঙ্গল’, ‘লভ ইন নেপাল’, ‘রান’, ‘যুবা’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় বিজয়কে। তবে অধিকাংশ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
হিন্দি ছবির পাশাপাশি মালয়ালম এবং তামিল ছবিতেও অভিনয় করেন বিজয়। ২০১৪ সালে পরিচালনায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। ‘কয়া দিল্লি কয়া লাহোর’ নামের একটি হিন্দি ছবির পরিচালনা করেন তিনি। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে বিজয়কে।
‘ডেলি বেলি’, ‘সনম তেরি কসম’, ‘ঢিসুম’, ‘স্ত্রী’, ‘গাল্লি বয়’, ‘ফোটোগ্রাফ’, ‘চপস্টিক্স’, ‘ড্রিম গার্ল’, ‘বালা’, ‘গুলাবো সিতাবো’, ‘লুটকেস’, ‘শেরনি’, ‘গঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’, ‘কাঁঠাল’-এর মতো ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ‘মেড ইন হেভেন’ এবং ‘মার্ডার ইন মাহিম’-এর মতো ওয়েব সিরিজ়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবু ধাবির বিমানবন্দর থেকে পাকড়াও করা হয় বিজয়কে। শোনা যায়, তাঁর ব্যাগ তল্লাশি করে ২৫ গ্রাম মাদক পাওয়া গিয়েছিল।
২০২১ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছিল ‘শেরনি’ ছবিটি। এই ছবিতে বিদ্যা বালন এবং নীরজ কবির মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন বিজয়। বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, ‘শেরনি’ ছবির শুটিংয়ের সময় দলের সদস্যেরা যে হোটেলে ছিলেন, সেখানে দলের এক মহিলা সদস্য নাকি বিজয়ের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিলেন।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে মহারাষ্ট্র পুলিশ এক বিলাসবহুল হোটেল থেকে বিজয়কে গ্রেফতার করে। মহিলার দাবি, মধ্যপ্রদেশের বালাঘাটের একটি হোটেলে ‘শেরনি’ ছবির শুটিং দলের সকল সদস্য ছিলেন। বিজয়ের বিরুদ্ধে মহিলার অভিযোগ, সেই হোটেলেই নাকি তিনি শ্লীলতাহানির শিকার হন। পরে অবশ্য গ্রেফতারির দিন জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয় বিজয়কে।
বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন এমনকি একাধিক হিন্দি ছবিতে কণ্ঠশিল্পী হিসাবে কাজ করেছেন বিজয়। সম্প্রতি প্রেক্ষাগৃহে ‘কর্তাম ভুগ্তম’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে বিজয়কে। বিজয়ের সঙ্গে এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন শ্রেয়স তালপাড়ে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিজয় জানান, অমিতাভ বচ্চনের পুত্র অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তিনি অভিনয় করতে চাননি। বার বার প্রত্যাখ্যান করার পর শেষ পর্যন্ত পঞ্চম বারে অভিনয় করতে রাজি হন তিনি।
২০০৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘রান’ নামের একটি হিন্দি ছবি। অভিষেক বচ্চন এবং ভূমিকা চাওলার সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেন বিজয়। বচ্চন-পুত্রের এই ছবিতেই অভিনয় করতে চাননি তিনি।
বিজয় বলেন, ‘‘আমি ‘রান’ ছবিতে কাজ করতে চাইনি। আমায় বার বার ফোন করা হচ্ছিল। আমি বার বার মানা করছিলাম। তার পর বনি কপূর আমায় ফোন করেছিলেন। আমি পারিশ্রমিক হিসাবে প্রচুর টাকা চেয়েছিলাম। বনি আমার কথায় রাজি হয়ে গেলেন। আগে চার বার প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আর প্রস্তাব ফেরাতে পারিনি। খানিকটা বাধ্য হয়েই আমি অভিনয় করি।’’ যদিও বক্স অফিসে ছবিটি ব্যর্থ হয়েছিল।