পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। প্রকৃতির উপর ভালবাসা অগাধ। বুজে যাওয়া হ্রদ পুনরুদ্ধার করেন তিনি। পরিবেশ রক্ষার জন্য আরও সময় দিতে চাকরিও ছেড়ে দেন আনন্দ মল্লিগভড়।
১৯৮১ সালে কর্নাটকের কোপ্পাল জেলায় জন্ম আনন্দের। পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আনন্দ বর্তমানে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা।
বেঙ্গালুরুর বাসিন্দারা গ্রীষ্মে জলের সমস্যার সম্মুখীন হন। স্নানের জল তো দূর, পানীয় জলও তখন দুর্মূল্য। এই সমস্যাই দূর করার চেষ্টা করছেন আনন্দ।
বেঙ্গালুরু জুড়ে আগে ১৮৫০টি জলাশয় ছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০-এ। কোনও জলাশয় জঞ্জালে ভর্তি, তো কোনওটি শুকিয়ে গিয়েছে। এই জলাশয়গুলি পুনরুদ্ধার করাই মূল উদ্দেশ্য আনন্দের।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে আনন্দ বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় এই জলাশয়গুলি পৃথিবীর ফুসফুস। অর্থ বিনিয়োগ করতে চাইলে জলাশয় সংরক্ষণের জন্য তা খরচ করা প্রয়োজন। জলাশয়গুলিও ভবিষ্যতে সকলকে প্রতিদান দেবে। লোককে উৎসাহ দেওয়ার আগে আমি নিজেই সেই কাজ আরম্ভ করে দিই।’’
২০১৭ সালে টাটা স্টিল সংস্থার তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান বি মুথুরামনের সঙ্গে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন আনন্দ। কলাসনহল্লি জলাশয় সংরক্ষণ করে তিনি প্রথম নিজের পরিচিতি তৈরি করেন।
এখনও পর্যন্ত একশোর বেশি জলাশয় সংরক্ষণ করেছেন আনন্দ। চোল সাম্রাজ্যে যে পদ্ধতিতে জলাশয় পরিষ্কার করা হত, সেই একই পদ্ধতিতে আনন্দ কাজ করেন।
আনন্দ জানিয়েছিলেন, কোনও জলাশয় পুনরুদ্ধার করতে চাইলে সেখানকার অবশিষ্ট জল প্রথমে খালি করে দেন তিনি। তার পর প্রয়োজনে বাঁধ এবং খাল কাটা হয়।
জলজ উদ্ভিদের পাশাপাশি অন্যান্য গাছ দিয়েও জলাশয়ের এলাকায় ছাউনি তৈরি করেন আনন্দ। তার পর বৃষ্টির জল জমে সেই জলাশয় আবার প্রাণ ফিরে পায়।
অধিকাংশের দাবি, বুজে যাওয়া জলাশয় পুনরুদ্ধার করতে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয় আনন্দের। জলাশয় তৈরি করার নামে জবরদখল করা ৯০ একর জমি মুক্ত করেছেন তিনি।
পরিবেশ বাঁচানোর জন্য যে আনন্দ চাকরি পর্যন্ত ছেড়েছেন, সেই আনন্দকেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। কান পাতলে শোনা যায়, অসৎ পথে যাঁরা ব্যবসা করেন অথবা বেআইনি ভাবে জমি নিয়ে কারবার করেন, তাঁরা নাকি আনন্দকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন বার বার।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে কর্নাটকের হিলালিজ গ্রামের কৃষকেরা সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার কাছে আনন্দ এবং তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁদের দাবি, আনন্দ কোনও নিয়ম না মেনে সেখানে জলাশয় পুনরুদ্ধার করেছেন। যার ফলে বৃষ্টির জল জমছে না, চাষবাসেরও অসুবিধা হচ্ছে বলে দাবি করেন কৃষকেরা।
আনন্দের পাল্টা দাবি, কর্নাটক সরকারের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং কয়েকটি নির্মাণ সংস্থার কর্তারা হাত মিলিয়ে ‘অসাধু’ চক্র চালাচ্ছেন। কৃষকদের উন্নতির জন্য তিনি যে কাজ করছেন, এর ফলে সেগুলি বাধা পাচ্ছে।