আরজি কর হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য সিআইএসএফ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ইতিমধ্যেই হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বভার চলে গিয়েছে আধাসেনার হাতে। কারা এই সিআইএসএফ? কী কাজ তাদের?
সাধারণত এক কোম্পানি বাহিনীতে ৮০ থেকে ১২০ জন জওয়ান থাকেন। আরজি করে থাকবে দুই কোম্পানি বাহিনী। অর্থাৎ থাকবেন এক সুপারিন্টেন্ডেন্ট-সহ দেড় শতাধিক জওয়ান।
আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ নিয়ে উত্তাল গোটা রাজ্য। প্রতিবাদ, পাল্টা প্রতিবাদের রেশ ধরে গত ১৪ অগস্ট হাসপাতালে তাণ্ডব চালায় কিছু দুষ্কৃতী। এই ঘটনার পর হাসপাতালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়।
সাধারণত কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়ে থাকে বিমানবন্দর, খনি এলাকা, বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে থাকে সিআইএসএফ।
কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে। ১৯৬৯ সালে সংসদের এক আইনে ২৮০০ জওয়ান নিয়ে গঠিত হয় এই বিশেষ বাহিনী।
তিন থেকে চারটি কোম্পানি নিয়ে গঠিত হয় একটি ব্যাটেলিয়ন। বর্তমানে সিআইএসএফ-এ ১৩২টি ব্যাটেলিয়ন রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে, অতিরিক্ত বিভিন্ন বিশেষ ইউনিটও। বর্তমানে এই বাহিনীর অধীনে রয়েছেন ২ লক্ষ জওয়ান। বাহিনীর মূল কার্যালয় নয়াদিল্লিতে।
সংসদ ভবন, দিল্লি মেট্রো ও বিমানবন্দর ছাড়াও দেশের মহাকাশ বিভাগ, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, টাঁকশাল, সমুদ্রবন্দরের মতো স্থানের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে এই কেন্দ্রীয় বাহিনী।
তাজমহল ও লালকেল্লার মতো ঐতিহাসিক সৌধকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে এই আধাসামরিক বাহিনীই।
১৯৫০ সাল থেকে পার্লামেন্ট সিকিউরিটি সার্ভিস বা পিএসএস এবং দিল্লি পুলিশ যৌথ ভাবে সংসদ ভবনের ভিতরের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাত। গত মে মাস থেকেই ৩,৩০০ সিআইএসএফ জওয়ান নিয়োগ করে সেই দায়িত্ব পরিবর্তন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে রয়েছে একটি স্বতন্ত্র অগ্নিবিভাগও। একমাত্র এই কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর হাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ অগ্নিবিভাগ রয়েছে, যা দেশের বৃহত্তম অগ্নিনির্বাপক বাহিনী হিসাবে বিবেচিত।
শিল্পাঞ্চল বা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগলে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনেন এই বিভাগের জওয়ানরাই। এ ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও একটি বড় ভূমিকা পালন করে সিআইএসএফ।
কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর নেতৃত্বে থাকেন ডিরেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার একজন আইপিএস। দেশ জুড়ে বাহিনীর নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। (বিমানবন্দর, উত্তর, উত্তর-পূর্ব, পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ, প্রশিক্ষণ, দক্ষিণ-পূর্ব, কেন্দ্রীয় কার্যালয়)
সিআইএসএফের বর্তমান ডিরেক্টর জেনারেল নীনা সিংহ। এই প্রথম কোনও মহিলা সিআইএসএফের প্রধানের পদ পেয়েছেন।
রাজস্থান ক্যাডারের ১৯৮৯ ব্যাচের আইপিএস অফিসার নীনা এর আগে সিআইএসএফের স্পেশাল ডিজির পদ সামলেছেন। সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তাও ছিলেন তিনি।
প্রাথমিক ভাবে সিআইএসএফে কর্মীদের নিয়োগ এবং পদাধিকার পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী কালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নেয় ৩৩ শতাংশ পদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
২০০৬ সালে, কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীতে বিশেষ নিরাপত্তা দল গঠন করা হয়। এই দলটির কাজ হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মনোনীত ব্যক্তিদের সুরক্ষার দায়িত্ব নেওয়া।
ইনফোসিসের পুণে, মাইসুরু, বেঙ্গালুরুর ক্যাম্পাস, জামনগরে রিলায়্যান্সের শোধনাগার, পতঞ্জলি ফুড অ্যান্ড হারবাল পার্ক-সহ আটটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এই আধাসামরিক বাহিনী পাহারা দেয়।
২০১৯ সাল থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সিআইএসএফ মোতায়েনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে।
বাহিনীর হাতে রয়েছে একটি ডগ স্কোয়াডও। শুধুমাত্র চেন্নাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের দলের ন’টি কুকুর রয়েছে। মাদক ও চোরাচালান রুখতে বাহিনীর কুকুরদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার আরজি করের মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। শুনানিতে শীর্ষ আদালত হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য সিআইএসএফ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে।
তার পরেই বুধবার সকালে আরজি করে যান সিআইএসএফ কর্তারা। নেতৃত্বে ছিলেন বাহিনীর ডিআইজি কে প্রতাপ সিংহ।