প্রতিটি দেশেরই সামরিক সঙ্ঘাতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেই দেশের বায়ুসেনা। এমনকি কিভ-ক্রেমলিন সঙ্ঘাতেও বায়ুসেনার বিশেষ গুরুত্ব লক্ষ করা গিয়েছে।
আকাশপথে শত্রুপক্ষকে দুর্বল করার জন্য বায়ুসেনার জুড়ি মেলা ভার। আর এই ক্ষেত্রে বিশেষ নাম রয়েছে আমেরিকার বায়ু সেনার।
বড় বড় জাহাজের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় এই বিমানগুলিকে। এ রকমই একটি বিমানবাহী জাহাজ হল আমেরিকার ‘কিটি হক’।
রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উত্তর ক্যারোলিনায় কিটি হক এলাকায় প্রথম সফলভাবে নিজেদের বিমানটি উড়িয়েছিলেন। তাই সেই জায়গার নাম অনুসারেই এই জাহাজের নাম কিটি হক।
ভিয়েতনাম থেকে শুরু করে প্রথম ইরাক যুদ্ধ, আমেরিকার বহু রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘাতের সাক্ষী এই বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ১৯৬০ সালে নিজের যাত্রা শুরু করে।
এই বিমানবাহী জাহাজ এক হাজার ৪৭ ফুট লম্বা এবং ২৫২ ফুট চওড়া।
এক সময় কিটি হক ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে আমেরিকার সামরিক শক্তির সব থেকে বড় নিদর্শন ছিল।
রাশিয়ার সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই-এর সময় বিশেষ দক্ষতার পরিচায়ক হয়ে উঠেছিল কিটি। এমনকি রাশিয়ার সাবমেরিনের গুঁতোর মুখে পড়েও অটল ছিল এই জাহাজের যাত্রাপথ।
কিটি হক-ই আমেরিকার শেষ তেলচালিত বিমানবাহী জাহাজ। এর পর থেকে সব বিমানবাহী জাহাজই পরমাণু-শক্তি চালিত।
তবে নেভি অফিসারদের মধ্যে বর্ণ সংক্রান্ত হিংসাও দেখেছে এই জাহাজ। ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষে এই জাহাজ যখন ফিরে যাচ্ছিল, তখন ফিলিপিন্সের এক পানশালায় বর্ণবিদ্বেষের কারণে নিজেদের মধ্যেই বিবাদে জড়ান নাবিকরা। শেষ পর্যন্ত হাতাহাতি এবং হিংসায় গড়ায় এই বিবাদ।
প্রায় ৫০ বছর ধরে পরিষেবা দেওয়ার পর অবশেষে ২০০৯ সালে কিটি হক-কে বাতিল করে আমেরিকার সামরিক বিভাগ। কিটি হক-কে যুদ্ধবিমান বহন করার জন্য অযোগ্য মনে করেই তাকে বাতিল করা হয়।
২০২১ সালে টেক্সাসের ইন্টারন্যাশনাল শিপব্রেকিং লিমিটেড ব্রাউনসভিল এই জাহাজটি এক ডলারেরও কম মূল্যে (ভারতীয় মুদ্রায় ৭৬.৫২ টাকায়) আমেরিকার সামরিক বিভাগের কাছে থেকে এই জাহাজটিকে কিনে নেয়।
এই জাহাজটি বর্তমানে ওয়াশিংটন থেকে ১৬ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে টেক্সাসের পথে ভেসে যাচ্ছে।
সেখানেই এই জাহাজটিকে ভেঙে ফেলা হবে। চিরতরে থেমে যাবে কিটি হকের যাত্রা।
তবে কিটি হক এতটাই বড় যে, পানামা খাল পেরোতে পারবে না এই জলযান।
অগত্যা দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলীয় তট বরাবর এই জাহাজ মেক্সিকো দিয়ে টেক্সাসে প্রবেশ করবে।