যাঁকে এক সময় ভালবেসেছিলেন, তাঁর বুকেই ছুরির কোপ মারেন এক যুবক। এক বার নয়, ছুরি দিয়ে প্রেমিকার বুকে ৩৭ বার কোপ মেরেছিলেন ওই যুবক। যার জেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন তরুণী। এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর জেলবন্দি করা হয়েছিল যুবককে। দেওয়া হয়েছিল কঠোর সাজাও। কিন্তু সেই সাজা ভোগ করার আগেই নিজেকেই শেষ করে দিলেন যুবক। কারাগারের মধ্যে থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হল।
সম্প্রতি এই ঘটনাটি ঘটেছে তুরস্কের আদানা এ টাইপ কারাগারে। কুঠুরিতে বেডশিট দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ২৭ বছর বয়সি ওই যুবক পেশাদার এক জন বক্সার। তাঁর নাম সেলুম আহমেত কেমালোগলু।
তাঁর জেলবন্দি হওয়ার কারণ শিউরে ওঠার মতো। নিজের প্রেমিকাকে যে ভাবে নৃশংস ভাবে খুন করেছিলেন ওই যুবক, সেই ঘটনা হইচই ফেলে দিয়েছিল।
জানা গিয়েছে, জেইনেপ সেনিপার নামে এক ২৪ বছর বয়সি তরুণীর সঙ্গে ওই বক্সারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, সম্পর্কে থাকাকালীন তাঁদের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকত।
দক্ষিণ পশ্চিম তুরস্কের মেন্টেস জেলায় বক্সারের বাড়িতে গিয়েছিলেন জেইনেপ। সে বার তাঁদের মধ্যে গোলমাল বাধে। আর তার পরই রণমূর্তি ধারণ করেন ওই যুবক। যে মানুষটিকে কাছের মনে করছেন, সেই মানুষটিরও অন্য চেহারা দেখেন ওই তরুণী।
রান্নাঘর থেকে পাঁউরুটি কাটার ছুরি নিয়ে এসে প্রেমিকার বুকে একের পর এক কোপ মারেন যুবক। পুলিশ সূত্রে দাবি, ৩৭ বার ছুরির কোপ মারেন যুবক। ঘটনাস্থলেই জেইনেপের মৃত্যু হয়।
এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে ২০২০ সালের ২৪ মে। জানা যায়, প্রেমিকাকে কোপানোর পর নিজেকেও আঘাত করেন ওই যুবক। আহত অবস্থায় যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এই হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগেই ওই যুগলের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পরও তাঁরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করতেন।
এমনকি, হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহ দুয়েক আগেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জেইনেপ। সে সময় তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁকে মারধর করেছেন ওই যুবক।
হাসপাতালে চিকিৎসায় সেরে ওঠার পর প্রেমিকাকে খুনের অভিযোগে যুবককে অভিযুক্ত করা হয়।
এই ঘটনায় গত ২২ অক্টোবর সেলিম নামে ওই যুবককে ২৪ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। তার কিছু দিনের মধ্যেই কারাগারের কুঠুরিতে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হল।
পুলিশ সূত্রে খবর, এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক অপরাধের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ওই বক্সারের। ১৪ বার দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন তিনি।
শেষ বার ২০১৯ সালের ২৮ অগস্ট যৌন হেনস্থার অভিযোগে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, তুরস্কে নারীহত্যার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে সে দেশে ২৮০ জন মহিলাকে খুন করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ২১৭ জন মহিলার রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়। তবে এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রেমিকাকে নৃশংস ভাবে খুনের পর কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় আসামির আত্মহত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।