Vegetarian Crocodile

পুকুরের মাছ ছুঁয়েও দেখত না, প্রতিদিন এক কেজি চালের ভাত খেত ‘সাত্ত্বিক’ কুমির

বাবিয়ার ‘বন্ধু’ ছিলেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত চন্দ্রশেখর। বাবিয়া পুকুরে থাকাকালীনই সেখানে নেমে দু’বেলা স্নান করতেন তিনি। আসলে ববিয়া কতটা নিরীহ তা প্রমাণ করতে চাইতেন তিনি।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৪২
Share:
০১ ২০

নাম বাবিয়া। কুমিরের এমন নামকরণ সাধারণের একটু বিসদৃশ ঠেকতে পারে। হয়তো বা একটু অকারণ আদুরেও। তবে ভাতের থালা হাতে নিয়ে মন্দিরের পুরোহিত যখন নাম ধরে ডাকেন, তখন লেজ ঝাপটে দিব্য চলে আসত সে। ‘সোনা মুখে’ খেয়েও নিত যত্ন করে আনা নিরামিষ খাবার। সেই নিরামিশাষী কুমিরের মৃত্যু হল কেরলে।

০২ ২০

কেরলের শ্রী আনন্দপদ্মনাভ মন্দিরের লাগোয়া পুকুরে থাকত বাবিয়া। মন্দিরের সিঁড়ি যেখানে থেমেছে, সেখান থেকেই শুরু পুকুর ঘাট। সেই পুকুরই ছিল বাবিয়ার চারণ ক্ষেত্র।

Advertisement
০৩ ২০

এ মন্দিরের বিষ্ণু পূজিত হন। নাম শ্রী অনন্ত পদ্মনাভস্বামী। কথিত আছে, কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের পদ্মনাভস্বামীর আদিরূপ এই বিগ্রহ। দিন-রাত তারই প্রসাদান্নে তুষ্ট থাকত বাবিয়া।

০৪ ২০

বেলা গড়ালেই থালা সাজিয়ে অন্নভোগ লাগে বিগ্রহের। বাবিয়ার নিরামিষ ভোজ হত তার পর। প্রসাদান্নের থালা হাতে মন্দিরের লাগোয়া পুকুর ঘাটে নেমে আসতেন পুরোহিত। বাবিয়াকে নিজে হাতে প্রসাদের ভাত খাওয়াতেন তিনি।।

০৫ ২০

মন্দিরে মাছ মাংস ছোঁওয়াও পাপ। কুমির হলেও বাবিয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের হের ফের হয়নি। মন্দিরের পুরোহিত বলেছিলেন, ‘‘এই ব্যবস্থায় বাবিয়ারও অসুবিধা হয়নি কোনও দিন। আজন্ম শাকাহারি ছিল সে। মাছ বা মাংস নয়, ভাতই ছিল তার প্রিয় খাবার।

০৬ ২০

দুপুরে পেট ভরে ভাত । রাতের খাবারও তাই। মেনু বিশেষ বদলাত না। বাবিয়া দিনভর যে পরিমান ভাত সারাদিনে খেত তাতে তাকে ‘ভেতো কুমির’ও বললেও অত্যুক্তি হয় না।

০৭ ২০

প্রতিদিন দু’বেলা এক কেজি চালের ভাত লাগত বাবিয়ার। যে পুকুরে তার বাসস্থান ছিল সেখানে মাছের কমতি ছিল না। তবে তাদের না কি সে ছুঁয়েও দেখত না বাবিয়া।

০৮ ২০

বয়স সত্তর পার। দু চোয়ালে ঝকঝকে ধারালো দাঁতের সারি। কিন্তু সেই দাঁত মাংস ছোঁয়নি কখনও। উৎসব-পার্বণে মন্দিরের ভোগের সামান্য হেরফের হত না, তা নয়। তখন নিরামিষ হলেও ভাল মন্দ খাবার জুটত। বছরের বাকি দিনগুলিতে গত ৭০ বছরে অন্ন ভোগই ছিল বাবিয়ার নিত্যদিনের খাবার।

০৯ ২০

বাবিয়ার ‘বন্ধু’ ছিলেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত চন্দ্রশেখর। বাবিয়া পুকুরে থাকাকালীনই সেখানে নেমে দু’বেলা স্নান করতেন তিনি। আসলে ববিয়া কতটা নিরীহ তা প্রমাণ করতে চাইতেন তিনি।

১০ ২০

মন্দিরে আসা ভক্তদের বাবিয়ার কাছে যাওয়ার উৎসাহও দিতেন চন্দ্রশেখর। বহুবার ভক্তরা তাঁকে বলতে শুনেছেন, ‘‘ওর কাছে গেলেও কিছু করবে না। ও সাধারণ কুমির নয়, সাক্ষাৎ ঈশ্বরের দূত।’’

১১ ২০

প্রধান পুরোহিতের অভয়বাণী পেয়ে বাবিয়ার কাছে যাওয়ার সাহস না পেলেও বাবিয়াকে নিয়ে উৎসাহ বেড়েছে। নিরামিষাশী কুমিরের নাম ছড়িয়েছে দূর দূরান্তে। একটা সময়ে শুধু বাবিয়াকে দেখতেই কেরলের ওই মন্দিরে ভিড় জমাতেন অনেকে।

১২ ২০

কিন্তু কুমির কি সত্যিই নিরামিষাশী হয়? তার স্বাভাবিক খাবার মাংস বা মাছ না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে? তা-ও বছরের পর বছর! কেরলের ওই মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের ব্যখ্যা, সাধারণ কুমির হয়তো পারত না। কিন্তু বাবিয়া তো আর ‘সাধরণ’ নয়। সে স্বয়ং ‘ঈশ্বরের দূত’। দেবালয়কে রক্ষা করতে স্বয়ং ঈশ্বরই পাঠিয়েছেন তাকে। তাই সে অসাধ্য সাধন করতে পারে।

১৩ ২০

ঘটনাটি কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা বোঝাতে ভক্তদের মাঝেমধ্যে একটি পৌরাণিক গল্পও শোনাতেন চন্দ্রশেখর। সেই গল্প ৩ হাজার বছরের পুরনো। অনন্তপদ্মনাভস্বামীর বিগ্রহ তৈরি হওয়ার আগের ঘটনা।

১৪ ২০

কথিত আছে, বিগ্রহটি তৈরি করেছিলেন দিবার্ক মুনি বিল্বমঙ্গলম স্বামী। তাঁকে ওই বিগ্রহ তৈরির অনুমতি দিয়েছিলেন খোদ বিষ্ণু দেবতা-ই। এমনকি বিগ্রহ তৈরির সময় এক বালকের বেশে সাহায্যও করেছিলেন শিল্পীকে।

১৫ ২০

কিন্তু মূর্তি গড়ার পর নিজের কাজ দেখে অহংকারী হয়ে পড়েন শিল্পী। তাঁকে শিক্ষা দিতে বালকরূপী বিষ্ণু তাঁর চোখের সামনেই অদৃশ্য হয়ে যান। বিষ্ণু যেখানে অদৃশ্য হন সেখানে তৈরি হয় একটি গুহা। শোনা যায়, সেই গুহাপথে হেঁটে গিয়েছিলেন বিল্বমঙ্গলও। বাবিয়া সেই গুহাতেই থাকত।

১৬ ২০

চন্দ্রশেখরের কথায়, বাবিয়া আসলে বিষ্ণুরই দেবালয়ের প্রহরী। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

১৭ ২০

কুমির বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরী বলছেন, ‘‘বিষয়টি কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক। যে কুমিরটিকে নিরামিষাশী বলে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেটি আসলে মিষ্টি জলের কুমির (মগর)। মাছ এদের স্বাভাবিক খাদ্য। তবে হরিণ, বন্য শূকরের মতো প্রাণীর মাংসও খায় এরা।’’

১৮ ২০

তবে অনির্বাণের কথায়, ‘‘কুমিরের বেঁচে থাকার তাগিদ অন্যান্য জীবজন্তুর থেকে অনেক বেশি। এরা যে কোনও পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। তবে বিকল্প থাকলে এরা সব সময় স্বাভাবিক খাবার বেছে নেয়। সে ক্ষেত্রে মাছ পেয়েও তা না খাওয়ার বিষয়টি কিছুটা অদ্ভুত।’’

১৯ ২০

আরেক কুমির বিশেষজ্ঞ জিগর উপাধ্যায়ের ব্যখ্যা, ‘‘মগর সাধারণত একটু লাজুক প্রকৃতির। হয়তো দিনের বেলায় সবার সামনে মাছ খায় না। কিন্তু রাতে পুকুরের মাছ খাচ্ছে কি না তা কে দেখতে যাচ্ছে!’’

২০ ২০

কিন্তু জলে নামা সত্ত্বেও পুরোহিতকে আক্রমণ না করা— এর কি ব্যখ্যা হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত কুমিরেরা ভাল পোষ মানে। কুকুরের থেকেও সহজে পোষ মানানো যায় তাদের। তা ছাড়া যারা এদের খাবার দেয়, তাদের সঙ্গেও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাবিয়ার সঙ্গেও হয়ত পুরোহিতের তেমনই সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে সেই বন্ধুকে হারালেন চন্দ্রশেখর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement