সোমবার আত্মহত্যা করেছেন লিঙ্গায়েত ধর্মগুরু শ্রী বাসবলিঙ্গেশ্বর স্বামী। কর্নাটকের কাঞ্চুগাল বন্দে মঠের ৪৫ বছর বয়সি এই লিঙ্গায়েত গুরুর মৃতদেহ তাঁর আশ্রম থেকে উদ্ধার করা হয়।
মৃত্যুর পরে পুলিশের হাত আসা সুইসাইড নোটে আত্মহত্যার কারণ হিসাবে লিঙ্গায়েত গুরু যা লিখে গিয়েছেন তা দেখে চমকে গিয়েছেন তাবড় পুলিশকর্তারাও।
সুইসাইড নোটে বাসবলিঙ্গেশ্বর আত্মহত্যার জন্য এক মহিলাকে দায়ী করে গিয়েছেন। তিনি মধুচক্রের শিকার বলেও দাবি করেছেন।
বাসবলিঙ্গেশ্বর সুইসাইড নোটে দাবি করেছেন, এক মহিলা ‘অশ্লীল ভিডিয়ো কল’ করে তাঁকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছিলেন। আর এর ফলেই তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সুইসাইড নোট থেকে দু’জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। এই দু’জনই লিঙ্গায়েত গুরুকে আত্মহননের পথে ঠেলে দিয়ছিলেন বলেও তাঁরা জানান।
পুলিশ জানিয়েছে, বাসবলিঙ্গেশ্বরকে না জানিয়েই ওই মহিলা নিজের এবং লিঙ্গায়েত ধর্মগুরুর ব্যক্তিগত মুহূর্ত ভিডিয়ো রেকর্ড করে রাখেন। পরে সেই ভিডিয়ো দেখিয়েই বাসবলিঙ্গেশ্বরকে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা জানান, বাসবলিঙ্গেশ্বর তাঁর চিঠিতে লিখে গিয়েছেন, এক জন অচেনা মহিলা তাঁর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
সুইসাইড নোটে বাসবলিঙ্গেশ্বর এ-ও উল্লেখ করেন যে, ‘কিছু মানুষ আমাকে আমার পদ থেকে সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিল’। এবং তাঁরা-ই তাঁকে ফাঁসিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছেন বলেও চিঠিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাসবলিঙ্গেশ্বর।
পুলিশ জানিয়েছে, মহিলা এবং আরও কয়েক জন অভিযুক্ত মিলে বাসবলিঙ্গেশ্বরকে চারটি অশ্লীল ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আনার হুমকি দিচ্ছিলেন।
সোমবার সকালে কর্নাটকের রামানগর জেলায় কাঞ্চুগাল বন্দে মঠে প্রার্থনাকক্ষের জানালার গ্রিল থেকে বাসবলিঙ্গেশ্বর স্বামীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান আশ্রমের আবাসিকরা।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, মঠের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থাকতে পারে। কিছু গুরুর সঙ্গে রাজনীতিবিদদেরও সুসম্পর্ক থাকে। তবে বাসবলিঙ্গেশ্বরের সুইসাইড নোটে কোনও রাজনীতিবিদদের উল্লেখ নেই বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
এক জন পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি ওই মহিলা কে, তা জানতেও উঠেপড়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে ৪০০ বছরের পুরনো ওই মঠের ভার গ্রহণ করেন বাসবলিঙ্গেশ্বর।
কর্নাটক এবং পড়শি রাজ্যগুলিতে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি মঠ রয়েছে। কর্নাটকের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭ শতাংশ লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ভুক্ত।
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোম্মাই এবং তার পূর্বসূরি বিএস ইয়েদুরাপ্পাও এই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। কর্নাটক ছাড়াও মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর কিছু এলাকায় লিঙ্গায়েতদের আশ্রম রয়েছে।