বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে কংগ্রেসের ‘হাত’ ধরেছে কর্নাটক। কন্নড়বাসীর মন জেতার নেপথ্যে সে রাজ্যের কংগ্রেসের অন্দরে তাঁর বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করেন তাঁর অনুগামীরা। দক্ষিণ ভারতের ওই রাজ্যে তাঁর নেতৃত্বেই বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে শামিল হয়েছিল শতাব্দীপ্রাচীন দল। শীর্ষনেতৃত্বের আস্থা অটুট রেখে জয় ছিনিয়ে এনেছেন কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার।
গত ১৩ মে, শনিবার দুপুর গড়ানোর পর যখন নির্বাচনী ফলাফলের ছবিটা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তখন সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন ৬১ বছর বয়সি ওই প্রবীণ নেতা। কথা বলতে গিয়ে কান্নায় তাঁর গলা বুজে আসছিল। এটা ছিল শিবকুমারের আনন্দাশ্রু।
বিরাট ব্যবধানে জিতে কর্নাটকের কুর্সি দখল করেছে কংগ্রেস। কনকপুরা কেন্দ্র থেকে নিজেও জয়ের হাসি হেসেছেন শিবকুমার। তবে জয়ের কৃতিত্ব দলের নেতাকর্মীদের হাতেই সমর্পণ করেছেন শিবকুমার। বলেছেন, ‘‘এই জয় কারও একার নয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। নেতাকর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন।’’
জয়ের পর প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সময় কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম নিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন শিবকুমার। শীর্ষনেতৃত্ব তাঁর প্রতি যে আস্থা রেখেছিলেন, সেই কথাই বলছিলেন তিনি।
কর্নাটকে কংগ্রেসের বিরাট জয়ের পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন শিবকুমার। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিও উঠেছে। পাশাপাশি শিবকুমারের বৈভব নিয়েও আলোচনা চলছে।
বেঙ্গালুরুর কাছে কনকপুরায় জন্ম শিবকুমারের। ওই কেন্দ্র থেকেই নির্বাচনে লড়ে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের এই প্রবীণ নেতা। ১৯৮৯ সাল থেকে টানা বিধানসভায় জিতে আসছেন তিনি।
কর্নাটকে ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের সদস্য শিবকুমার। তাঁর পুরো নাম ডোড্ডালাহাল্লি কেম্পেগৌড়া শিবকুমার।
অতীতে কর্নাটকে কংগ্রেস সরকারের আমলে মন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি। সিদ্দারামাইয়া এবং এইচডি কুমারস্বামী সরকারের আমলে মন্ত্রী ছিলেন শিবকুমার।
১৯৯৩ সালে বৈবাহিক জীবনে পা রেখেছিলেন শিবকুমার। তাঁর স্ত্রীর নাম ঊষা শিবকুমার। তাঁদের দুই কন্যা এবং এক পুত্রসন্তান রয়েছে।
শিবকুমারের দুই মেয়ের নাম ঐশ্বর্য এবং আভরণা। পুত্রের নাম আকাশ। ঐশ্বর্যের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে কফি ব্যারন ভিজি সিদ্ধার্থের পুত্র অমর্ত্যের। বর্তমানে সেই বিখ্যাত কপিশপ চেনের মালিক অমর্ত্য।
শিবকুমারের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে। সেই কলেজটি বর্তমানে চালান তাঁর কন্যা ঐশ্বর্য।
এ তো গেল শিবকুমারের ঘরের কথা। এ বার নজর দেওয়া যাক তাঁর সম্পত্তির দিকে। কর্নাটক তো বটেই, দেশের মধ্যেও অন্যতম ধনী রাজনীতিক শিবকুমার।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, ২০১৮ সালে শিবকুমারের পরিবারের স্থাবর এবং অস্থাবর মিলিয়ে মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৮৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে সেই অঙ্কটা ১৪০০ কোটি টাকারও বেশি।
শিবকুমার-ঘরনির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৫৩.৫ কোটি টাকা। তাঁদের যৌথ সম্পদের অঙ্ক ৬১ কোটি টাকা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবকুমারের পরিবারের বছরে আয় ১৫ কোটি টাকারও বেশি।
কংগ্রেসের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, দলের জন্য অর্থ খরচে কখনওই কার্পণ্য করেননি শিবকুমার।
টাকাপয়সা তো রয়েইছে। পাশাপাশি শিবকুমারের বাড়িতে নানা অলঙ্কারের সম্ভারও চোখে পড়ার মতো। ২ কেজি ১৮৪ গ্রাম সোনা, সাড়ে ১২ কেজি রুপো, ৩২৪ গ্রাম হিরে রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। এ ছাড়াও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও সোনা, রুপো, হিরের অলঙ্কার রয়েছে।
শিবকুমারের বাড়িতে রয়েছে বিভিন্ন নামী সংস্থার ঘড়ি। যার দাম কয়েক লক্ষ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন গাড়ি তো রয়েইছে।
কর্নাটক কংগ্রেসে অন্যতম জনপ্রিয় নেতা শিবকুমার। এক সাফল্যের মধ্যেও কলঙ্কের দাগ লেগেছিল তাঁর গায়ে। দুর্নীতির মামলায় অতীতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন শিবকুমার।
দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন শিবকুমার। সেই সময় তাঁকে দেখতে সেখানে গিয়েছিলেন সনিয়া গান্ধী। কর্নাটক জয়ের পর সেই দুর্দিনের স্মৃতিচারণা করেছেন শিবকুমার।
পুরনো দিনের সেই কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন শিবকুমার। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের হাত ছাড়েননি তিনি। শনিবার কর্নাটক জয়ের পর সেই ‘হাত’ আরও শক্ত করলেন শিবকুমার।