অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন, পরবর্তী ১০০ বছর নির্ধারণ করবে আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে ধ্বংস করবে না আরও উন্নত করবে। সভ্যতার যে স্তরে আমরা আছি সেখানেই থাকব, না কি আরও অগ্রসর হব। এবং আমরা এই নক্ষত্রমণ্ডল থেকে আদৌ অন্য নক্ষত্রমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারব কি?
বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, একটি সভ্যতা যত বড় হয়, তত উন্নত হয়। বৃদ্ধি পায় জনসংখ্যাও। বিজ্ঞানের উন্নতি হলে প্রাকৃতিক শক্তির চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
এই সভ্যতার কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছিল কার্দাশেভ স্কেল। এই স্কেল সভ্যতার প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাপকাঠি হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল। একটি সভ্যতার কাছে কতটা ব্যবহারযোগ্য শক্তি রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এই স্কেল।
১৯৬৪ সালে রাশিয়ার জ্যোতির্পদার্থবিদ নিকোলাই কার্দাশেভ এই স্কেল তৈরি করেন। কার্দাশেভ মহাজাগতিক সঙ্কেতের সাহায্যে পৃথিবীর বাইরে প্রাণ (পড়ুন ভিনগ্রহী) আছে কি না তার খোঁজ করছিলেন।
এই স্কেলে সভ্যতার তিনটি মাপকাঠি রয়েছে। প্রতিটি মাপকাঠিতে একটি শক্তি নিষ্পত্তি স্তর রয়েছে। এই তিন সভ্যতা হল, টাইপ-১, টাইপ-২, এবং টাইপ-৩।
অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই স্কেলে সভ্যতার আরও দু’টি মাপকাঠি যোগ করেছেন, টাইপ-৪ এবং টাইপ-৫।
. টাইপ-৪ এবং টাইপ-৫ সভ্যতার অর্থ, এই ধরনের সভ্যতায় উপলব্ধ শক্তি কেবল আমাদের নক্ষত্রমণ্ডলে নয়, সমস্ত মহাবিশ্বে এবং সমস্ত সময়-রেখায় উপলব্ধ সমস্ত শক্তির সমান।
তবে উল্লেখযোগ্য যে, মানবসভ্যতা এখনও এই স্কেলে জায়গা পায়নি। কারণ মানুষ এখনও মৃত গাছপালা এবং প্রাণীদের থেকে প্রাপ্ত জ্বালানি (জীবাশ্ম জ্বালানি) থেকেই শক্তির চাহিদা মেটায়। তাই মানবজাতি এখনও পড়ে টাইপ-০ সভ্যতায়।
তাত্ত্বিক পদার্থবিদ মিশিও কাকুর মতে, আমাদের সভ্যতা একটি বিশেষ মোড়ে এসে পৌঁছেছে। কাকুর বিশ্বাস, খুব শীঘ্রই মানবসভ্যতার মানোন্নয়ন হবে। আগামী একশো-দু’শো বছরে মানবসভ্যতা টাইপ-১ সভ্যতায় পৌঁছবে।
এই স্কেল অনুযায়ী, একটি টাইপ-১ সভ্যতা সেই সভ্যতাকে ধরা হয়, যারা শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অন্য নক্ষত্র থেকে শক্তি সংগ্রহ এবং সঞ্চয় করতে সক্ষম।
পৃথিবীকে টাইপ-১ সভ্যতায় পৌঁছতে হলে বর্তমানের তুলনায় এক লক্ষ গুণ বেশি শক্তি উৎপাদন করতে হবে। এবং এর অর্থ, মানুষ তখন অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প এবং আবহাওয়ার শক্তিকেও নিয়ন্ত্রণ ও সংগ্রহ করতে পারবে।
পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ টাইপ-২ সভ্যতার প্রাণীরা নিজেদের নক্ষত্রের সমস্ত শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে। এই সভ্যতার মানুষেরা নক্ষত্রের আলো শক্তিতে রূপান্তরিত করার পাশাপাশি সমস্ত নক্ষত্রকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এই সভ্যতার এমনই ক্ষমতা থাকবে যা সহজেই গ্রহের দিকে ছুটে আসা কোনও গ্রহাণুকে নিমেষে ধ্বংস করতে পারবে।
টাইপ-৩ সভ্যতার মানুষদের পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকে। এ ছাড়াও, এই সভ্যতায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত শক্তিকেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই সভ্যতার প্রাণীরা জৈবিক এবং যান্ত্রিক সংমিশ্রণে তৈরি, যাদের ‘সাইবর্গ’ বলা হয়।
এই সভ্যতার মানুষেরা এক নক্ষত্রমণ্ডল থেকে অন্য নক্ষত্রমণ্ডলে সহজেই যাতায়াত করতে পারে। পাশাপাশি এই সভ্যতার প্রাণীরা চিন্তা-ভাবনাযুক্ত রোবট তৈরিতেও সক্ষম।
কার্দাশেভ বিশ্বাস করতেন, টাইপ-৪ সভ্যতা খুব বেশি উন্নত। তিনি মনে করেছিলেন, এই সভ্যতার প্রজাতিদের ক্ষমতা অপরিসীম হবে। টাইপ-৪ সভ্যতার মানুষ মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম এবং এই সভ্যতার মানুষেরা কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যেও অনায়াসে বসবাস করতে পারবে।
কার্দাশেভ মনে না করলেও আরও অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করতেন টাইপ-৪ সভ্যতার পরও আর একটি সভ্যতারও অস্তিত্ব থাকতে পারে।
কল্পনাতীত উন্নত এই সভ্যতা টাইপ-৫ সভ্যতা। এই সভ্যতার মানুষেরা অসীম ক্ষমতার অধিকারী হবে। ইচ্ছেমতো মহাবিশ্বকে পরিচালনা করার ক্ষমতা থাকবে টাইপ-৫ সভ্যতার মানুষদের। এই সভ্যতাতে মানুষ নিমেষের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়।
তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বর্তমান সভ্যতার মানুষের উন্নত সভ্যতায় যাওয়া অতটা সহজ নয়। তার জন্য অবশ্যই পৃথিবী এবং পরিবেশের যত্ন নিতে হবে। যত্ন নিতে হবে প্রকৃতি থেকে পাওয়া ক্ষমতার উৎসগুলিরও।