২০০১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল যশ জোহরের বড় বাজেটের ছবি ‘কভি খুশি কভি গম’। পুত্র কর্ণ জোহরের পরিচালনায় তৈরি ছবিতে প্রযোজক হিসাবে কোনও কার্পণ্য করেননি তিনি। বক্স অফিসও জোহর পরিবারকে এনে দিয়েছিল বিপুল সাফল্য।
সেই ছবির সব তারকাকে একই দিনে নিজের ছবিতে সই করিয়েছিলেন কর্ণ। রায়চাঁদ পরিবারের টানাপড়েনের সঙ্গে রোম্যান্স, আবেগঘন সংলাপ এবং হিট গানের মিশেলে সুপারহিট হয়েছিল ছবিটি।
১৯৯৮ সালের দিওয়ালিতে মুক্তি পায় কর্ণ পরিচালিত প্রথম ছবি ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’। শাহরুখ খান, কাজল ও রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত ছবিটি সে বছরের সবচেয়ে বড় হিটের তকমা পেয়েছিল। তার পরেই ‘কভি খুশি কভি গম’ ছবি তৈরির কথা ভাবেন কর্ণ।
প্রথম ছবির সাফল্যের পর কিছু দিন বিরতি নিয়ে নতুন ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য লেখার কাজে হাত দেন কর্ণ। তিনি চেয়েছিলেন ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির সফল ত্রয়ী আবারও এই ছবিতে কাজ করুন।
কিন্তু বিধি বাম হয় প্রথমেই। তত দিনে কাজলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে অজয় দেবগনের সঙ্গে। বলিউড থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছেন তিনি। তাই প্রিয় বন্ধু কর্ণকেও কাজল জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর নতুন ছবিতে কাজ করবেন না।
অথচ, ভাগ্যের পরিহাসে শুধু কাজলই নন, যাঁকে যে চরিত্রের চেয়েছিলেন কর্ণ, তাঁকে সেই চরিত্রে অভিনয় করাতে সফল হয়েছিলেন তিনি। একই দিনে সব বড় তারকাকে নিজের ছবিতে সই করান কর্ণ।
এক দিন সকাল সকাল অমিতাভ বচ্চনের বাড়ি প্রতীক্ষায় পৌঁছান কর্ণ। অমিতাভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ছবির গল্প ও অমিতাভকে তাঁর চরিত্রটি শোনান তিনি। চরিত্রটি পছন্দ হওয়ায় তৎক্ষণাৎ ছবিতে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন শাহেনশা। যশোবর্ধন রায়চাঁদ নামে এক শিল্পপতির চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
ছবিতে অমিতাভের বিপরীতে জয়া বচ্চনকে নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও, সে দিন জয়াকে ছবির গল্প শোনাতে চাননি কর্ণ। অমিতাভকে সই করানোর আনন্দে প্রতীক্ষা ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন কর্ণ। কিন্তু আচমকাই তাঁর মোবাইলে ফোন করেন জয়া। বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে এসেছো, অথচ দেখা না করেই চলে যাচ্ছো?’’
প্রতীক্ষার দরজা থেকেই জয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান কর্ণ। সেখানেই তাঁকে ছবির গল্প শুনিয়ে ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ করে নেন কর্ণ। যশোবর্ধন রায়চাঁদের স্ত্রী নন্দিনীর চরিত্রে অভিনয় করেন জয়া।
এর পর কর্ণর গন্তব্য ছিল তাঁর বন্ধু শাহরুখের বাড়ি মন্নত। শাহরুখ জানতেন, বন্ধু কর্ণ তাঁকে ছবি স্বাক্ষর করাতে আসবেন। সেখানে পৌঁছে শাহরুখকে ছবির সই করান কর্ণ।
বন্ধুর প্রতি আস্থা থেকে ছবির গল্প কিংবা নিজের চরিত্র প্রসঙ্গেও সে দিন জানতে চাননি বাদশা। ছবিকে যশোবর্ধন ও নন্দিনীর পালিতপুত্র রাহুলের চরিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ।
অমিতাভ, জয়া, শাহরুখকে সই করানোর পর কর্ণ প্রিয় বন্ধু কাজলের বাড়ি যান। শুধু সাক্ষাতের লক্ষ্যেই তাঁর ওই দিন কাজলের বাড়িতে যাওয়া। কাজলকে তাঁর বাড়িতে গিয়েই কর্ণ জানান, বড় তিন তারকাকে নিজের ছবির স্বাক্ষর করিয়েই তাঁর বাড়িতে এসেছেন তিনি।
আগ্রহী হয়ে ছবির গল্প শুনতে চান কাজল। বন্ধুর কর্ণর কাছে ছবির গল্প শুনে তাঁর পছন্দও হয়। কাজল জানতে চান, তাঁর জন্য কোন চরিত্রটি ভেবেছিলেন কর্ণ? শাহরুখের বিপরীতে অঞ্জলির চরিত্রটি ভাবা হয়েছিল তাঁর জন্য। নিজের মত বদল করে কর্ণকে কাজল জানান, তাঁর ছবিতে কাজ করবেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে কাজলও ওই ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।
সেই সময় হৃতিক রোশন ছিলেন নবাগত। বাবার পরিচালিত ছবি ‘কহো না প্যার হ্যায়’ ছবি নিয়েই সেই সময় ব্যস্ত ছিলেন রাকেশ রোশন-পুত্র। কাজলের বাড়ি থেকে সোজা রাকেশের বাড়িতে যান হৃতিকের সঙ্গে দেখা করতে।
হৃতিক জানতেন তাঁর বাড়িতে নিজের ছবি নিয়ে কর্ণ কথা বলতে আসবেন। সন্ধ্যায় কর্ণ পৌঁছান হৃতিকের বাড়ি। গল্প শুনতে শুনতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। কিন্তু গল্প ও চরিত্র শুনে ওই দিনই ছবিতে কাজ করার বিষয়ে নিজের সম্মতির কথা জানিয়ে দেন কর্ণকে। স্বাক্ষর করেন তাঁর চুক্তিপত্রে। রুপোলি পর্দার রোহন হিসাবে হৃতিক ছিলেন এই ছবির অন্যতম প্রাণ।
রাত তখন প্রায় ১০টা। হৃতিকের বাড়ি থেকে কর্ণ পৌঁছন করিনা কপূরের বাড়িতে। সেই সময় করিনাও নবাগতাই। জেপি দত্তর ছবি ‘রেফিউজি’তে অমিতাভ বচ্চনের পুত্র অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে কাজ করছেন। সেই করিনাকেই নিজের ছবিতে নিতে চেয়ে আগেই করিনার সঙ্গে কথা বলে রেখেছিলেন কর্ণ।
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর পর সব নবাগতই কর্ণর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন। তাই ওই দিন রাতে কর্ণর ছবি গল্প ও নিজের চরিত্র না শুনেই তাঁর ছবিতে সই করেন করিনা। ছবিতে পূজা ওরফে পু-এর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর চরিত্রটি জনপ্রিয় হয়েছিল।