তাঁর ছিপছিপে পেটাই চেহারা এবং আচার আচরণে রাজকীয় হাবভাব কিছুটা কম। বরং মাঠে নেমে লড়াই করা পরিশ্রমী সৈনিকের রোয়াব অনেকটা বেশি। অথচ তথ্য বলছে, ভারতের প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেন কপিল দেব নিখাঞ্জ ব্যক্তিগত জীবনে রাজা-রাজড়ার মতোই বিলাসবহুল যাপনে অভ্যস্ত।
দিল্লির অভিজাত পাড়ায় নিজের বাংলোবাড়ি কপিলের। ঠিকানা, ৩৯ সুন্দর নগর। এ পাড়ায় দিল্লির অতি অভিজাত এবং ধনী পরিবারের বাস। যাঁদের দিল্লি সমাজের ‘ক্রিম পিপল’ বলে সম্বোধন করে থাকেন দিল্লিবাসীরা।
কপিল-ঘনিষ্ঠরা বলেন, সুন্দর নগরে কপিলের বাংলোটি দেখার মতো। সাজানো-গোছানো সেই বাংলোর দেওয়ালে সাজানো থাকে মকবুল ফিদা হুসেনের মতো নামী চিত্রকরের আঁকা ছবি। ড্রয়িং রুমের ঝাড়লণ্ঠনগুলোও নজরকাড়া।
আসবাবপত্র এবং অন্দরসজ্জায় মেহগনি কাঠের ছড়াছড়ি কপিলের বাংলোয়। যাঁরা সেখানে গিয়েছেন, তাঁরা বলেছেন এই কাঠের সজ্জার জন্যই কপিলের বাড়িটিকে প্রাসাদের মতো দেখায়।
অন্তর্মুখী কপিল নিজের ব্যক্তিগত জীবনের প্রচার পছন্দ করেন না। তবে যাঁরা কপিলের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, প্রাক্তন ক্যাপ্টেনের খাবার টেবিলটি নাকি এতটাই বড় যে, সেখানে একটি গোটা ক্রিকেট টিম স্বচ্ছন্দে একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া সারতে পারে।
টেবিলে বসে যে কাচের বাসনে অতিথিরা খাবার খান, তাতেও রয়েছে ‘রয়্যাল টাচ’। কপিলের বাড়ির সমস্ত কাচের বাসনে তাঁর নামের দু’টি আদ্যক্ষর অর্থাৎ ‘কেডি’ মোনোগ্রাম করা আছে। রাজবাড়ির বাসন কোসনে রাজপ্রতীক খোদাই করা থাকে যেমন।
এ তো গেল বাড়ির কথা। ১৯৮৩-র বিশ্বকাপজয়ী দলের নায়কের বাহনের শখও বেশ রাজকীয়।
এককালে তাঁর বলের গতির তুলনা করা হত ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেনের সঙ্গে। তা থেকেই ডাক নাম ‘হরিয়ানা হ্যারিকেন’। উইকেটের উল্টোদিক থেকে ছুটে আসা তাঁর ছ’ফুট চেহারাটা বাড়তি ভয়ও জাগাত নিশ্চয়ই। এখন বয়স হয়েছে। দৌড়ঝাঁপ সয় না। তবে গতি এখনও সয়। তাঁর গ্যারাজ আলো করে থাকা পোর্শে প্যানামেরা তার প্রমাণ।
গাড়ির দুনিয়ায় প্যানামেরার নাম রয়েছে দ্রুতগামী স্পোর্টস কার তালিকার একেবারে উপরের দিকে। ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি গতিতে ছুটতে পারে। দাম ভারতীয় মুদ্রায় ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। কপিল দেব ওই গাড়ির গর্বিত মালিক।
তাঁর সমসাময়িক ক্রিকেটারদের মধ্যে সুনীল গাওস্কর প্রায় তাঁর সমান উপার্জন করেন। তবে সুনীলের গ্যারাজে সেরা গাড়ি বিএমডব্লিউ। কপিলের পোর্শে গতিতে এবং আভিজাত্যে তার থেকে অনেকটাই এগিয়ে।
এ ছাড়াও কপিলের ব্যক্তিগত সংগ্রহে আরও তিনটি দেশি-বিদেশি গাড়ি রয়েছে। যার মধ্যে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ জিএলএস। দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। গতিবেগ পৌঁছতে পারে ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার পর্যন্ত।
কপিলের গাড়ি সংগ্রহের তিন নম্বরে রাখা যেতে পারে জিপ কম্পাসকে। দাম প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। তবে সাড়ে পাঁচ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ১০০ কিলেমিটারে পৌঁছতে পারে গতিবেগ।
গতি পছন্দ। তবে তথাকথিত শ্লথ গতির একটি বৈদ্যুতিন গাড়িও আছে প্রাক্তন মিডিয়াম ফাস্ট বোলারের সংগ্রহে। তবে এটি কপিলর পাওয়া উপহার। গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা নিসান ইন্ডিয়া তাদের সাম্প্রতিকতম বৈদ্যুতিন গাড়ি ‘লিফ’ উপহার দিয়েছিল কপিলকে। ব্যাটারিচালিত এই গাড়িটি এক বার চার্জ দিলে ৩৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ যেতে পারে।
কপিলের বার্ষিক উপার্জন ২২০ কোটি টাকা। একই উপার্জন তাঁর সতীর্থ সুনীলেরও। তবে রাজকীয় জীবনযাপনে কপিল সমসাময়িকদের তো বটেই, পরবর্তী প্রজন্মের অনেক ধনী ক্রিকেটারকেও টেক্কা দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, অর্থ নয় তাঁর রোয়াবটাই আসল রাজা। আর তিনি এখনও তাতে এক নম্বরেই।