রোল, সাউন্ড, ক্যামেরা, অ্যাকশন! পরিচালকের নির্দেশ পেয়েই শুরু হল শুটিং। ক্যামেরার ও পারে শাহিদ কপূর এবং করিনা কপূর (তখনও অভিনেত্রীর নামের সঙ্গে খান পদবি যোগ হয়নি)। ছবিতে শাহিদ-করিনা জুটির সঙ্গে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করছেন বহু অপরিচিত মুখ। সেই ভিড়ের মধ্যেই ছিল দাঁতে ব্রেস লাগানো এক নাবালিকা। করিনার তুতো বোনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিল সে। হাসিমুখে হঠাৎ বলে উঠল, ‘‘কন্ট্রোল রাখখো জিজাজি!’’ ১৪ বছর বয়সে হাতে গুনে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডও পর্দার সামনে ছিল না মেয়েটি।
১৬ বছর ধরে অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তেমন প্রচার পাননি। অতিমারির সময় ‘গ্রহণ’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করার পর জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ‘জব উই মেট’ ছবিতে করিনার তুতো বোনের চরিত্রে অভিনয় করা ওয়ামিকা গাব্বি।
শর্ট ফিল্ম থেকে হিন্দি ওয়েব সিরিজ়ের দুনিয়া কাঁপিয়ে চলেছেন ওয়ামিকা। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জুবিলি’ ওয়েব সিরিজ়ে নিলোফারের চরিত্রে অভিনয় করেও দর্শকের মন জয় করেছেন তিনি।
সমাজমাধ্যমেও ঝড়ের বেগে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে ওয়ামিকার অনুরাগীর সংখ্যা। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে নায়িকার অনুরাগীর সংখ্যা ২২ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে। কিন্তু এক সময় অভিনয় ছেড়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওয়ামিকা।
১৯৯৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চন্ডীগড়ের একটি পঞ্জাবি পরিবারে জন্ম ওয়ামিকার। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি কত্থকেও পারদর্শী হয়ে ওঠেন ওয়ামিকা।
ওয়ামিকার বাবা পেশায় লেখক ছিলেন। গব্বি ছদ্মনাম নিয়ে হিন্দি এবং পঞ্জাবি ভাষায় গল্প লিখতেন অভিনেত্রীর বাবা। আট বছর বয়স থেকেই অভিনয় করছেন ওয়ামিকা। ‘সৌদে দিল্লান দে’ নামের একটি পঞ্জাবি ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
তার পরেই কত্থক শিখতে শুরু করেন ওয়ামিকা। নাচের একটি রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণও করেছিলেন তিনি। সেই শোয়ের সঞ্চালক ছিলেন আমির খান। শোয়ে অংশগ্রহণ করার পরেই হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান নায়িকা।
ইমতিয়াজ আলি পরিচালিত ‘জব উই মেট’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে কাজ করেন তিনি। তার পর ‘লভ আজ কাল’, ‘মৌসম’, ‘বিট্টু বস’ প্রভৃতি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান ওয়ামিকা।
বহু বছর হিন্দি ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করার পর ২০১৩ সালে মুখ্য চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পান ওয়ামিকা। ‘তু মেরা ২২ মে তেরা ২২’ নামের একটি পঞ্জাবি ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ইয়ো ইয়ো হানি সিংহ এবং অমরেন্দ্র গিলের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
তার পর আর কেরিয়ারে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ওয়ামিকাকে। একের পর এক পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। শুধু পঞ্জাবি ছবিতেই নয়, তামিল এবং মালয়ালম ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি।
পঞ্জাব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ হয়ে উঠলেও বলিউডজগতে তেমন সুযোগ পাচ্ছিলেন না ওয়ামিকা। বহু দিন পর অতিমারির সময়ে ‘গ্রহণ’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
‘গ্রহণ’ ওয়েব সিরিজ়ে দুর্দান্ত অভিনয় করার পর দর্শকের মনে জায়গা করে নেন ওয়ামিকা। অভিনয়ের পাশাপাশি সৌন্দর্যের জন্যও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু ভাগ্য বেশি দিন সহায় ছিল না ওয়ামিকার। ‘গ্রহণ’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয়ের পর রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেলেও তা ছিল ক্ষণিকের। বহু দিন কাজ ছাড়াই বসেছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত আবার ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পান ওয়ামিকা। ‘জুবিলি’ ওয়েব সিরিজ়ের জন্য বহু বার স্ক্রিন টেস্টে গিয়েও বাতিল হয়ে যান অভিনেত্রী।
ওয়ামিকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, ‘জুবিলি’ ওয়েব সিরিজ়ে কাজ না পেলে অভিনয় ছেড়ে ব্যবসা করবেন। অতিমারির সময় নিজের অবসরে ইনস্টাগ্রামে মজার রিল ভিডিয়ো পোস্ট করতেন ওয়ামিকা।
ওয়ামিকার ইনস্টাগ্রামের রিল ভিডিয়ো দেখে মত পরিবর্তন করেন ‘জুবিলি’ ওয়েব সিরিজ়ের পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে। ওয়ামিকাকে সিরিজ়ের অন্যতম মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিক্রমাদিত্য।
‘জুবিলি’ ওয়েব সিরিজ়ের অভিনেতা অপারশক্তি খুরানার মারফত ওয়ামিকাকে খবর পাঠান বিক্রমাদিত্য। তাঁর সঙ্গে অভিনেত্রীকে দেখাও করতে বলেন। বিক্রমাদিত্যের প্রস্তাবে রাজি হন ওয়ামিকা।
নিলোফার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জিতে নেন ওয়ামিকা। শুধু তা-ই নয়, চলতি বছরে বিশাল ভরদ্বাজের পরিচালনায় একটি শর্ট ফিল্মেও অভিনয় করেন তিনি।
ঈশান খট্টরের বিপরীতে ‘ফুরসত’ শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেন ওয়ামিকা। চলতি মাসেই অ্যামাজ়ন প্রাইমে মুক্তি পেতে চলেছে ‘মডার্ন লভ চেন্নাই’ ওয়েব সিরিজ়টি। এই ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যাবে ওয়ামিকাকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, বলি অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত টুইটার মাধ্যমে ব্লক করেছিলেন ওয়ামিকাকে। নয়াদিল্লির কৃষক আন্দোলনকে সমর্থনের কারণেই নাকি রাগের বশে ওয়ামিকাকে ব্লক করে দেন কঙ্গনা।
কঙ্গনা ব্লক করে দেওয়ার পর উদ্বিগ্ন হওয়ার পরিবর্তে আনন্দিত হয়েছিলেন ওয়ামিকা। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘কঙ্গনা যে আমায় ব্লক করেছেন, তাতে আমি খুশিই হয়েছি। অন্য মহিলাদের সঙ্গে কঙ্গনা যা ব্যবহার করেন, তার চেয়ে ব্লক করে দেওয়াই ভাল।’’
‘জুবিলি’ ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংয়ের আগে নিজের শরীর নিয়ে সচেতন হয়ে পড়েছিলেন ওয়ামিকা। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতেন তিনি।
এক ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওয়ামিকা বলেন, ‘‘আমি প্রতি দিন আয়নার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়াতাম। যে হেতু আমি পঞ্জাবি, তাই আমার শরীরের ধাঁচও একটু ভারী। নিজের চেহারা নিয়ে সচেতন হয়ে পড়েছিলাম আমি।’’
ওয়ামিকা আরও বলেন, ‘‘আমি যে এখনও সুন্দর, সে কথাই নিজেকে বার বার বলতাম। বলতাম, ‘‘ওয়ামিকা তুমি সুন্দরী, তুমি আত্মবিশ্বাসী।’’ যদিও কেউ আমায় এমন করতে বলেননি। তবুও এই কথাগুলি বলার পর মনে অদ্ভুত বল পেতাম আমি।’’
ওয়ামিকার মন্তব্য, অভিনয়ের জন্য হাজার বার নিজের চেহারা ভাঙচুর করতে রাজি তিনি। তাঁর বিশ্বাস, দর্শক ক্যামেরার ও পারে থাকা চরিত্রকে ভালবাসেন। চরিত্রের পিছনে থাকা শরীরকে নয়। তাই চরিত্রের প্রয়োজনে নিজের ওজন বাড়াতে বা কমাতে দ্বিধাবোধ করেন না ওয়ামিকা।