ছ’বছরের পেশাদার জীবনে হাজারেরও বেশি পর্ন ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ওই স্বল্প সময়েই নীল ছবির দুনিয়ায় তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। হাতে এসে গিয়েছিল বিপুল অর্থ।
তবে কেরিয়ারের তুঙ্গে থাকাকালীন আচমকাই সে সব ছেড়েছুড়ে দেন জশুয়া ব্রুম। আমেরিকার ওই প্রাক্তন পর্ন তারকা আজকাল বাইবেলের বাণী প্রচার করেন। সেই সঙ্গে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতিকর দিকের কথাও জনসমক্ষে তুলে ধরছেন তিনি।
নীল ছবির দুনিয়ায় অবশ্য রোকো রিড নামেই পরিচিত জশুয়া। ওই ছদ্মনামেই পর্ন ছবিতে অভিনয় করতেন তিনি। তবে খ্যাতির আলোয় আসার পরেও ২০১২ সালে হঠাৎই পর্ন ছবির জগৎকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। জশুয়ার ওই সিদ্ধান্তে পর্ন ছবির দুনিয়ায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল।
পর্ন ইন্ডাস্ট্রিকে বিদায় জানালেন কেন? একটি বিবৃতিতে সে কারণ খোলসা করেছিলেন জশুয়া। ৩৯ বছরের প্রাক্তন পর্ন তারকা জানিয়েছিলেন, পর্ন ছবির দুনিয়ায় থাকাটা তাঁকে মানসিক ভাবে আঘাত করতে শুরু করেছিল।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টের কাছে একটি সাক্ষাৎকারে জশুয়া জানিয়েছেন, কেরিয়ারের অন্তিম লগ্নে মানসিক ভাবে ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিলেন। সে কারণেই ওই ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেন।
জশুয়ার কথায়, ‘‘আক্ষরিক অর্থেই আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলেছিলাম। (পর্ন ছবির দুনিয়ায়) সব কিছুই বানানো, ভুয়ো। কল্পকাহিনির মতো...। এক সময় নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। তবে তা করার সাহসও জোটাতে পারিনি।’’
পর্ন ছবিতে প্রায় ছ’বছর কাজ করেছেন জশুয়া। যদিও তাঁর দাবি, পর্ন ছবিতে অভিনয় করার কোনও ইচ্ছেই ছিল না তাঁর। হলিউড অভিনেতা হওয়ার জন্যই লস অ্যাঞ্জেলসে পা রেখেছিলেন তিনি।
আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনার শার্লট শহর থেকে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হলিউডে গিয়েছিলেন কুড়ির কোঠায় থাকা জশুয়া। তবে চেষ্টা সত্ত্বেও অভিনয়ের সুযোগ আসেনি। রুজির তাগিদে একটি রেস্তরাঁয় ওয়েটার হিসাবে কাজ করতে থাকেন। সে সময় তাঁর বয়স ২৩।
রেস্তরাঁয় আসা এক দল মহিলা জশুয়াকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করলে হয়তো তিনি হলিউডের হোমড়াচোমড়াদের নজরে পড়ে যেতে পারেন। অভিনয়ের নেশায় সে পরামর্শ মেনে নিয়েছিলেন জশুয়া।
ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই প্রথম পর্ন ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। কিছুকালের মধ্যেই তাঁর হাতে কাজের প্রস্তাব চলে আসে। ফি-মাসে ডজনখানেক দৃশ্যে শ্যুটিং করতে শুরু হত তাঁকে।
কাজের সঙ্গে সঙ্গে রোজগারও বেড়ে গিয়েছিল জশুয়ার। তিনি বলেন, ‘‘বেশ রোজগার হতে শুরু করেছিল। ১০ লক্ষ ডলারের বেশি জমে গিয়েছিল। এ বার আমি যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াতে পারি। যত রকমের যৌনসঙ্গম কল্পনা করা যায়, সে সবই করতে পারি।’’
অর্থকরী সাফল্য সত্ত্বেও মানসিক শান্তি ছিল না জশুয়ার জীবনে। তিনি বলেন, ‘‘একসঙ্গে সব কিছু হাতে এলেও জীবন ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে শুরু করেছিল। কারণ বরাবর যে মানসিক শূন্যতা অনুভব করতাম তা বেড়ে গিয়েছিল।’’
পর্ন ছবির দুনিয়াকে বিদায় জানানোর পরেও তার ‘কলঙ্ক’ ধাওয়া করত বলে জানিয়েছেন জশুয়া। ছ’বছর ধরে ওই ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার ফলস্বরূপ যে অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিলেন, সে দাবিও করেছেন তিনি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে একটি জিমে কাজ নেন তিনি। ভেবেছিলেন, সেখানে কেউ তাঁর পরিচয় জানতে পারবেন না।
জিমে কাজ করার সময়ই হোপের দেখা পান জশুয়া। তাঁর ভাবী স্ত্রী। আক্ষরিক অর্থেই জশুয়ার জীবনে আশার আলো নিয়ে আসেন হোপ।
হোপের সঙ্গে আলাপ ঘনিষ্ঠতায় গড়াতে বেশি সময় লাগেনি। তবে তখনও জশুয়ার পুরনো পেশা সম্পর্কে কিছু জানতেন না হোপ। এক বার দু’জনে দৌড়তে গিয়েছিলেন। সে সময়ই জশুয়া স্থির করেন, হোপকে তাঁর পুরনো পেশার কথা খুলে বলবেন।
তিনি যে পর্ন ছবিতে অভিনয় করতেন, তা স্বীকার করার পরেও তাঁকে হেয় করেননি হোপ। সংবাদমাধ্যমে এ কথা জানিয়েছেন জশুয়া। পরের সপ্তাহান্তে দু’জনে একসঙ্গে গির্জায় যান।
জশুয়া জানিয়েছেন, গির্জায় যাতায়াত করতে করতেই তাঁর মধ্যে ধর্মীয় জাগরণ ঘটে গিয়েছিল। দীর্ঘ দিন ধরেই যার খোঁজে ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে হোপের সঙ্গে নতুন জীবনে পা রাখেন জশুয়া।
তাঁদের বিয়ের আগে অবশ্য বাইবেলে বর্ণিত ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছিলেন জশুয়া। দম্পতির তিনটি ছেলেও রয়েছে।
আজকাল আইওয়ার সেডার র্যাপিডস শহরের একটি গির্জায় বাইবেলের বাণী প্রচার করে জশুয়া। সেই সঙ্গে গোটা আমেরিকা ঘুরে ধর্মীয় তত্ত্ব প্রচার করেন। ইনস্টাগ্রামের মতো নেটমাধ্যমে পডকাস্টের সাহায্যে সে কাজে মেতে থাকেন প্রাক্তন এই পর্ন তারকা। ইতিমধ্যেই তাঁর ভক্তসংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
ধর্মীয় বাণী প্রচার করা ছাড়াও পর্ন ছবির ক্ষতিকারক দিক নিয়ে সরব হয়েছেন জশুয়া। তাঁর মতে, নীল ছবির দুনিয়ায় প্রবেশ করলে তা সকলকেই গ্রাস করে ফেলে।