জোশীমঠ কী ভাবে বসে যাচ্ছে, তা উপগ্রহচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছে ইসরোর ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার (এনআরএসসি)। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসরো দু’টি সময়কালের মধ্যে জোশীমঠ এবং তৎসংলগ্ন এলাকার ভূমি বসে যাওয়ার তুলনা করেছে। তারা দেখিয়েছে, ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ৯ নভেম্বর কতটা ভূমি বসে গিয়েছিল। তার পর দেখিয়েছে, ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি কতটা বসে গিয়েছে ওই এলাকার জমি।
যে অঞ্চলে ভূমি বসে যাচ্ছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সঙ্গে এর পর উপগ্রহ চিত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়েছে। ‘কার্টোস্যাট-২এস’ উপগ্রহের মাধ্যমে ইসরো ওই ছবি তুলেছে বলে তাদের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।
এনআরএসসি-র ওয়েবসাইট থেকে জানা গিয়েছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে উপগ্রহের সেন্টিনেল-১ এসএআর ইমেজরি যন্ত্র দিয়ে ডিআইএনএসএআর কৌশল ব্যবহার করে এই ছবিগুলি তোলা হয়েছিল।
প্রথমে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে অর্থাৎ, গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত জোশীমঠের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবি ওই উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা হয়েছিল। সেই ছবিতে দেখে জোশীমঠ তলিয়ে যাচ্ছে বলে অতটা ধারণা করা যায় না। যদিও সেই ছবি উদ্বেগ তৈরি করার জন্য যথেষ্ট বলে ইসরো মনে করছে।
সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল থেকে নভেম্বর, এই সাত মাসের ব্যবধানে ৮.৯ সেমি মাটির তলায় ঢুকে গিয়েছে জোশীমঠ।
অথচ দু’মাস যেতে না যেতেই একেবারে ভিন্ন চিত্র! যে ছবি ভয় ধরানোর জন্য যথেষ্ট। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারির মধ্যে উপগ্রহের নেওয়া উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে গাড়োয়াল হিমালয়ের জনপদ মাটিতে তলিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে!
স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অর্থাৎ মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে জোশীমঠের মাটি ধসে গিয়েছে ৫.৪ সেন্টিমিটার। যে ছবি প্রকাশ্যে আসতেই আরও উদ্বিগ্ন প্রশাসন। আরও আতঙ্কিত স্থানীয়রা।
ইসরোর রিপোর্ট বলছে, সেই ছবিতে আরও ধরা পড়েছ, মাত্র কয়েক দিনের ভূমিধসের কেন্দ্রবিন্দুতেও বদল এসেছে। মাটির দিকে অবনমন বেশি বেড়েছে শুধুমাত্র জোশীমঠ শহরের মাঝামাঝি থাকা এলাকা।
পাশাপাশি, উত্তরাখণ্ড সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে উপগ্রহ থেকে তোলা আরও একটি চিত্র! সেই ছবিতে, একটি ধসপ্রবণ এলাকাও চিহ্নিত করা হয়েছে। যা জোশীমঠের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে।
‘কার্টোস্যাট-২এস’ উপগ্রহ থেকে ৭ জানুয়ারি নেওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছে, এই ধসপ্রবণ এলাকার মাথা রয়েছে ২১৮০ মিটার উচ্চতায় থাকা জোশীমঠ-আউলি সড়কের কাছে একটি জায়গায়।
ধসপ্রবণ ওই এলাকার প্রায় মাঝামাঝি দু’টি কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ভারতীয় সেনার হেলিপ্যাড এবং নরসিংহ মন্দির।
এনআরএসসি-র রিপোর্টে, উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। ভূমিধসের গতি নিয়ে বিশদে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। নতুন কোনও তথ্য উঠে এলে তা-ও প্রকাশ্যে আনা হবে।
প্রসঙ্গত, জোশীমঠের ভূমিধস ঠেকাতে শহরের একাধিক বাড়িতে এখনও মানুষের থাকা নিয়ে আপত্তি তুলেছে প্রশাসন। প্রশাসনের তরফে ‘মালারি ইন’ এবং ‘মাউন্ট ভিউ’ নামে দু’টি বিলাসবহুল হোটেল এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি নিরাপদ নয় বলেই জানিয়েছে সরকার।
সেই দুই হোটেল ভাঙার কাজ বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই লাল সতর্কতা জারি করা ঘরবাড়িগুলিও ভাঙা শুরু হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২ জানুয়ারি থেকে শুরু করে বিগত কয়েক দিনে জোশীমঠের ৭৬০-এরও বেশি বাড়িতে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। চওড়া ফাটল দেখা গিয়েছে সেই শহরের রাস্তা-মন্দির-জমিতে।
মৃত্যুভয় গ্রাস করায় রাতারাতি ভিটেমাটি ছাড়া সেই শহরের বহু মানুষ। ঠাঁই হয়েছে আশ্রয় শিবিরে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৬৯টি পরিবারকে ত্রাণশিবিরে পাঠানো হয়েছে।
জোশীমঠকে ‘বসবাসের অযোগ্য’ বলেও ঘোষণা করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। তবে এই পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের তরফে করা উন্নয়নকেই দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। এর আগে অলকনন্দা নদীতে হড়পা বানেও বিধ্বস্ত হয়েছিল এই জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা।
ইসরোর রিপোর্ট বলছে, যে হারে ভূমিধস হচ্ছে, তাতে জোশীমঠ থেকে আউলি যাওয়ার রাস্তা ধসে পড়তে পারে। স্থানীয়দের দাবি, এনটিপিসির জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য যে ১২.১ কিমি দীর্ঘ সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে, তার জন্যই জোশীমঠের মাটি আলগা হয়েছে।
এরই মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। সেনা, আইটিবিপি, এনডিআরএফের প্রতিনিধি এবং বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ধামী বলেছেন, অহেতুক উদ্বিগ্ন না হতে। প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ করছে বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু ইসরোর প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, যে হারে ভূমিধস হচ্ছে, তাতে গোটা জোশীমঠই তলিয়ে যেতে পারে।