বয়সকে হাতের মুঠোয় রাখতে কে না চান। বয়সের চাকা যদি উল্টো দিকে ঘোরানোর উপায় থাকত, তা হলে বোধহয় সকলেই চাইতেন বার্ধক্যকে থামিয়ে দিতে। বার্ধক্যকে যেনতেনপ্রকারেণ ঠেকিয়ে রাখার এই অদম্য বাসনা থেকেই নানা গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়ে।
শরীরে বয়স যাতে থাবা না বসাতে পারে, তার জন্য বার্ধক্যের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছেন স্বয়ং পুতিন থেকে আমেরিকার ধনকুবের ব্রায়ান জনসন। বয়স কমানোর কৌশল খুঁজে বার করতে এই সব রথী-মহারথীরা যে সব পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন তা ভিন্ন ভিন্ন।
ক্ষমতা ধরে রাখতে নাকি বুড়ো হতে চান না পুতিন। তাই খুঁজছেন বয়স থামানোর ওষুধ। আবার বয়সের চাকা উল্টো দিকে ঘোরাতে দেহের প্লাজ়মা বদল করিয়েছেন আমেরিকার বিখ্যাত কোটিপতি ব্রায়ান। তিনি বার্ধক্য চান না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একই রকম থেকে যেতে চান। তার জন্য তিনি ভরসা রেখেছেন বিশেষ চিকিৎসার উপর।
বয়স বাড়লেও তা যেন দেহের ওপর ছাপ না ফেলতে পারে। চেহারায় যৌবন ধরে রাখতে সুপার ক্লিন প্লাজ়মাকেই সমস্ত কৃতিত্ব দিতে চান ব্রায়ান। বয়সের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে একটি বিশেষ প্লাজ়মা থেরাপির উপর ভরসা রেখেছেন ব্রায়ান। তিনি প্রতি বছরই নিয়ম করে এই বিশেষ চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেন।
কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বয়স কমাতে তিনি প্রতি দিন একশোর বেশি ট্যাবলেট খান। তাঁর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নাকি বিভিন্ন রকম যন্ত্র বসানো। সেগুলি প্রতিনিয়ত তাঁর শরীরের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে। ৪৬ বছর বয়সি ব্রায়ানের স্বপ্ন, তাঁকে দেখতে লাগবে বছর ১৮-র তরুণের মতো।
বিশেষ সেই প্লাজ়মা থেরাপিটিকে ‘টোটাল প্লাজ়মা এক্সচেঞ্জ’ (টিপিই) বলা হয়ে থাকে। ব্রায়ান জানিয়েছেন, যৌবন ফিরে পেতে এবং গোটা প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য ৩০ জন চিকিৎসকের একটি দল রয়েছে তাঁর। তাঁদের পরামর্শ মেনেই তাঁর শরীর থেকে প্লাজ়মা বার করে নেওয়া হয়।
প্রথম দিকে ব্রায়ানের শরীরে তাঁর ছেলের প্লাজ়মা দেওয়া হয়েছিল। ১৭ বছর বয়সি ছেলের প্লাজ়মা নিয়ে যৌবন অটুট রাখার চেষ্টা করেন ব্রায়ান। সম্প্রতি তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। জানিয়েছেন, দেহের সমস্ত প্লাজ়মা বার করে ফেলে দিচ্ছেন তিনি।
তার বদলে শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে অ্যালবুমিন। ‘টোটাল প্লাজ়মা এক্সচেঞ্জ’ পদ্ধতিতে রোগীকে দাতার প্লাজ়মা দেওয়া হয় অথবা বিকল্প তরল দিয়ে সেই অভাব পূরণ করা হয়। ব্রায়ানের ক্ষেত্র এই পর্যায়ে প্লাজ়মা ব্যবহার না করে অ্যালবুমিন বেছে নেওয়া হয়েছে।
ব্রায়ানের শরীর থেকে সমস্ত প্লাজ়মা বার করে নেওয়ার পর সমাজমাধ্যমে নিজের প্লাজ়মা হাতে একটি ছবিও পোস্ট করেছেন ব্রায়ান। নিজের সেই প্লাজ়মাকে তিনি ‘তরল সোনা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তাঁর থেরাপির দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকও প্লাজ়মার গুণগত মান দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বলে পোস্টে দাবি করেছেন এই ধনকুবের। এই থেরাপির মূল উদ্দেশ্যই হল শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে আনা।
সাধারণত প্লাজ়মার মধ্যে টক্সিন থাকার কথা। কিন্তু ব্রায়ান এত কঠোর ডায়েট ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকেন যে, প্লাজ়মায় টক্সিন নেই বললেই চলে। এমনটাই নাকি ছিল সেই চিকিৎসকের দাবি।
থেরাপিস্ট তাঁকে জানান, নয় বছরের কর্মজীবনে তিনি এই প্রথম এত বিশুদ্ধ প্লাজ়মা দেখলেন। তাই তিনি এটিকে ফেলে দেবেন না বলে মনস্থ করেন।
সমাজমাধ্যমে তিনি এও জানিয়েছিলেন, নিজের বাবাকেও তাঁর শরীর থেকে এক লিটার প্লাজ়মা দান করেন ব্রায়ান। সেই প্লাজ়মার গুণেই এক ধাক্কায় তাঁর বাবার বয়স ২৫ বছর কমে গিয়েছিল বলে দাবি করেন আমেরিকান এই ধনকুবের।
ওষুধের পাশাপাশি, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারেও নজর রাখেন ব্রায়ান। প্রাতরাশে তিনি খান গ্রিন জায়েন্ট স্মুদি। সেই স্মুদিতে থাকে কোলাজেনের মতো উপাদান। প্রতি বছর এই বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য ১৬ কোটি টাকা খরচ করে থাকেন বলে খবর।