প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইংল্যান্ড শাসন করেছে যে দেশ, সেই ভারতের জামাইয়ের হাতে ব্রিটেন শাসনের ভার বর্তেছে। যাঁর হাত ধরে এই অসাধ্যসাধন হয়েছে, তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। এই ‘কীর্তি’ ঘিরে ভারতীয়দের মধ্যে বাড়তি উচ্ছ্বাস চোখে পড়েছে। তবে শুধু ঋষিই নন, ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চর্চায় উঠে এসেছেন আরও এক ভারতীয়।
তাঁর বয়স সবে ১৯। ঋষির কোর কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের যুবক প্রোজ্জ্বল পাণ্ডে।
সুনকের প্রচার দলে ৩০ জন সদস্যের কোর কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিতেই জায়গা পেয়েছেন ধানবাদের সিন্দ্রির বাসিন্দা ওই যুবক।
পড়াশোনায় বরাবরই উজ্জ্বল ছিলেন প্রোজ্জ্বল। পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজসেবার কাজেও নিজেকে উজাড় করে দেন ওই যুবক। অর্থনীতি ও গণিতে তাঁর দখল দেখার মতো।
ব্রিটেনের রাজনীতিতে প্রোজ্জ্বলের উত্থানও চমকপ্রদ। সাল ২০১৯। ওই বছরেই মাত্র ১৬ বছর বয়সে কনজ়ারভেটিভ পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন প্রোজ্জ্বল। তার পর থেকেই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উত্তরণ ঘটছে সিন্দ্রির যুবকের।
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই রাজনীতির অঙ্ক কষে সাফল্যের মুখ দেখেছিলেন প্রোজ্জ্বল। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে রেকর্ড ভোট পেয়ে ব্রিটেনের ইউথ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর ওই বছরের নভেম্বর মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হিসাবে প্রথম বার বক্তৃতা দেন প্রোজ্জ্বল।
ঝাড়খণ্ডের সিন্দ্রিতে বাড়ি হলেও প্রোজ্জ্বলের বাবা রাজেশ পাণ্ডের কর্মকাণ্ড ব্রিটেনে। ঝাড়খণ্ড থেকে সোজা ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। প্রোজ্জ্বলের বাবা পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর মা মনীষা শিক্ষিকা।
প্রোজ্জ্বলের কাজ পছন্দ করেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী। সে কারণেই চলতি বছরের অগস্ট মাসে যখন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দখলের লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন ঋষি, সে সময় তাঁর ‘কোর ক্যাম্পেন’ দলে যোগ দেওয়ার জন্য প্রোজ্জ্বলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমের খবর, ঋষিকে বহু পরামর্শও দেন প্রোজ্জ্বল।
পুত্রের কীর্তিতে গর্বিত প্রোজ্জ্বলের বাবা রাজেশ বলেছেন, ‘‘ঋষির একাধিক শীর্ষ উপদেষ্টার সঙ্গে কাজ করেছে ও। এমপি, মন্ত্রী এবং ঋষির সঙ্গে ওর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।’’ ঋষির প্রচার-পর্বে আগামী দিনে সে দেশের কর ব্যবস্থা, আয়, শিক্ষা, বিদেশ ও প্রতিরক্ষানীতির উপর আলোকপাত করেছিলেন প্রোজ্জ্বল।
প্রোজ্জ্বলর পড়াশোনা ব্রিটেনেই। এসেক্সের চেমসফোর্ড শহরে ‘কিং এডওয়ার্ড সিক্থ গ্রামার স্কুলে’ পড়াশোনা করেছেন প্রোজ্জ্বল। রাজেশের কথায়, ‘‘অর্থনীতি এবং গণিতে ও তুখোড়।’’
২০১৯ সালে ‘চেমসফোর্ড ইউথ স্ট্র্যাটেজি গ্রুপ’-এর ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রোজ্জ্বল। অর্থনীতিতে তাঁর পারদর্শিতার স্বরূপ ২০২১ সালে ‘হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স এসে কনটেস্ট’-এ বিজয়ীর মুকুট ওঠে তাঁর মাথায়।
২০২০ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ‘এসেক্স ক্লাইমেট অ্যাকশন কমিশনে’র কো-চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন প্রোজ্জ্বল। জলবায়ু নীতি নিয়ে সে সময় অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান ঝাড়খণ্ডের ওই তরুণ।
নাতির সাফল্যে উচ্ছ্বসিত প্রোজ্জ্বলের দাদু বাগীশ পাণ্ডে। তাঁর কথায়, ‘‘পড়াশোনা ও সমাজসেবামূলক কাজে প্রোজ্জ্বল দারুণ করছে, এতে আমরা খুবই খুশি।’’
প্রোজ্জ্বলের বোনও ব্রিটেনে থাকেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পড়ছেন তাঁর বোন প্রাঞ্জল।
সপরিবারে ব্রিটেনে থাকলেও প্রোজ্জ্বলের শিকড় এখনও সিন্দ্রিতেই। তাঁর দাদু জানিয়েছেন, তাঁরা সিন্দ্রিতেই থাকেন। তবে তাঁর পুত্র রাজেশ ব্রিটেনে বসবাস করেন। চলতি বছরে দুর্গাপুজোর সময় সিন্দ্রির বাড়িতে গিয়েছেন প্রোজ্জ্বলের বাবা।
প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ঋষি সুনকের বসার পর থেকেই ভারতীয়দের একাংশের মধ্যে উচ্ছ্বাস ধরা পড়েছে। ঋষির সঙ্গে ভারতীয় যোগসূত্র নিয়ে চর্চাও চলছে বিস্তর। এই আবহে ঋষির পাশাপাশি আরও এক ভারতীয় হিসাবে ব্রিটেনে নিজেকে যে ভাবে প্রজ্জ্বলিত করলেন ঝাড়খণ্ডের যুবক, তাতে শুধু সিন্দ্রিই নয়, গর্বিত গোটা দেশ।