Jenabai Daruwala

দাউদ ডাকতেন ‘মাসি’, মুম্বই হামলার পর দেশের প্রথম মাফিয়া কুইনের সঙ্গে সম্পর্ক বদলায় ডনের

মুম্বইয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রথম মাফিয়া কুইন ছিলেন তিনি। দাউদ ইব্রাহিম-সহ একাধিক ডন তাঁকে দেখে স্যালুট জানাতেন।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৭:১৪
Share:
০১ ২৩

তখন সবে স্বাধীন হয়েছে ভারত। ধীরে ধীরে দেশের বাণিজ্যনগরী হিসাবে নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেছে মুম্বই। সেই সময়ই আরবসাগরের তীরে ডালপালা মেলতে শুরু করেছিল ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’। বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছিল অপরাধ জগতের ত্রাসেদের। সেই অন্ধকার দুনিয়ায় থেকেও নিজস্ব দাপট দেখিয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন এক নারী। তিনিই ছিলেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রথম মাফিয়ে কুইন।

ছবি সংগৃহীত।

০২ ২৩

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের অবহেলিত হওয়ার অভিযোগ এই আধুনিক যুগেও টাটকা। তবে সেই সময় এক জন নারী হয়েই অপরাধ দুনিয়ায় রাজত্ব করতেন তিনি। বরদারাজন মুদালিয়ার, করিম লালা, দাউদ ইব্রাহিমদের মতো ডনও তাঁকে দেখে স্যালুট ঠুকতেন। তিনি জেনাবাই দারুওয়ালা।

ছবি সংগৃহীত।

Advertisement
০৩ ২৩

অপরাধ জগৎ নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন সাংবাদিক হুসেন জাইদি। যার নাম ‘মাফিয়া ক্যুইন্স অফ মুম্বই’। সেই বইতেই জেনাবাইয়ের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।

ছবি সংগৃহীত।

০৪ ২৩

গত শতাব্দীর বিশের দশকে মুম্বইয়ের ডোঙরি এলাকায় জন্ম জেনাবাইয়ের। তবে তাঁর জন্মতারিখ জানা যায়নি। লোকে ভালবেসে জেনাবাইকে ‘জনাব’ বলে ডাকত। ৬ ভাইবোনের মধ্যে পরিবারে সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্যা ছিলেন জেনাবাই।

প্রতীকী ছবি।

০৫ ২৩

জেনেবাইয়ের পরিবার আর্থিক ভাবে সচ্ছল ছিল না। যাত্রীবহনের কাজ করতেন তাঁর বাবা। স্বাধীনতার জন্য তখন ভারতবাসী লড়াই করছেন। সেই সংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন ডোঙরির মানুষও।

প্রতীকী ছবি।

০৬ ২৩

দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে কিশোরী বয়সে যোগ দিয়েছিলেন জেনাবাইও। তখন মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার চল ছিল। এর ব্যতিক্রম ঘটেনি জেনেবাইয়ের ক্ষেত্রেও। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তাঁর।

প্রতীকী ছবি।

০৭ ২৩

সাম্প্রদায়িক বিভাজন একেবারেই না-পসন্দ ছিল জেনেবাইয়ের। সেই কারণে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পুলিশের হাত থেকে হিন্দুদেরও বাঁচাতে পিছপা হতেন না তিনি। কিন্তু এটা তাঁর স্বামী পছন্দ করতেন না। হিন্দুকে বাঁচানোর জন্য স্বামীর হাতে মারও খেতে হয়েছিল জেনেবাইকে। কিন্তু তবুও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি।

প্রতীকী ছবি।

০৮ ২৩

দেশভাগের সময় ভারত থেকে বহু মানুষ পাকিস্তানে চলে গেলেন। পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য জেনেবাইকে জোর করেছিলেন তাঁর স্বামী। কিন্তু সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন জেনেবাই। অগত্যা তাঁর স্বামী একাই পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। ৫ সন্তানকে নিয়ে ডোঙরিতে থেকে গিয়েছিলেন জেনেবাই।

প্রতীকী ছবি।

০৯ ২৩

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরই জেনেবাইয়ের মাফিয়া কুইন হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় মুম্বইতে রেশনের ঘাটতি ছিল। সস্তায় গরিবদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করেছিল মহারাষ্ট্র সরকার। আর সেই সময়ই কালোবাজারির ব্যবসায় হাত পাকাতে শুরু করেন জেনেবাই।

প্রতীকী ছবি।

১০ ২৩

সেই সময় চালের ব্যবসা শুরু করেছিলেন জেনেবাই। কিন্তু দেখলেন, অনেকেই চালের ব্যবসা করছেন। তাই শুরু করলেন চোরাচালানের কারবার। চালের ব্যবসা না চলায় চোরাচালানের দিকে ঝোঁকেন জেনেবাই।

প্রতীকী ছবি।

১১ ২৩

চালের চোরাকারবারের সময়ই কয়েক জন মদ বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল জেনেবাইয়ের। বুঝলেন যে, মদ ব্যবসায় টাকা রয়েছে। মদ বানানোয় হাত পাকালেন। তার পরই ডোঙরিতে নিজেই মদের ব্যবসা শুরু করলেন। সেই থেকেই তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে গেল ‘দারুওয়ালা’ শব্দ। হয়ে গেলেন জেনেবাই দারুওয়ালা।

প্রতীকী ছবি।

১২ ২৩

চোরাচালানের কারবার, মদ ব্যবসা— এই ভাবেই মুম্বইয়ে নিজেকে ক্ষমতাবান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন জেনেবাই। রোজগার করতে শুরু করলেন প্রচুর টাকা।

প্রতীকী ছবি।

১৩ ২৩

ষাটের দশকে ভেজাল মদ বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল জেনেবাইকে। কিন্তু জেনেবাইয়ের যা প্রতাপ ছিল সেই সময়, পুলিশকেও পিছু হটতে হয়েছিল। গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জেনেবাইকে ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। তার পর থেকে পুলিশের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে জেনেবাইয়ের।

প্রতীকী ছবি।

১৪ ২৩

সত্তরের দশকে মুম্বইয়ে অনেক ডনের প্রতাপ বাড়তে শুরু করেছিল। যাঁদের মধ্যে ছিলেন হাজি মস্তান, দাউদ ইব্রাহিম, ছোটা শাকিল। সকলেই জেনেবাইকে মাসি বলে ডাকতেন। নিজেদের ব্যবসা এবং কারবার নিয়ে দাউদ-সহ বাকি ডনরা জেনেবাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন।

ছবি সংগৃহীত।

১৫ ২৩

সেই সময় সমস্ত দাগী অপরাধীরা জেনেবাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। শুধু তাই নয়, জেনেবাইয়ের আদেশ ছিল তাঁদের কাছে শিরোধার্য। জেনেবাইকে খুবই মান্যিগণ্যি করে চলতেন সেই অপরাধীরা। আর এই ভাবেই মাফিয়া কুইন হিসাবে নিজের জায়গা পাকা করে নেন জেনেবাই। হাজি মস্তান যখন বিপদে পড়তেন, ছুটে যেতেন জেনেবাইয়ের কাছে।

ছবি সংগৃহীত।

১৬ ২৩

সাংবাদিক জাইদি আরও একটি বই লিখেছিলেন। তার নাম ‘ডোঙরি সে দুবাই তক’। ওই বইতে দাউদের সঙ্গে জেনেবাইয়ের সম্পর্ক কেমন ছিল, তা তুলে ধরেছেন জাইদি।

ছবি সংগৃহীত।

১৭ ২৩

দাউদের বাবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল জেনেবাইয়ের। সেই সূত্রে দাউদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল জেনেবাইয়ের। আর জেনেবাইকে মাসি বলে ডাকতেন দাউদ।

ছবি সংগৃহীত।

১৮ ২৩

অপরাধ দুনিয়ায় যখন পা রাখেন দাউদ, সেই সময় জেনেবাইয়ের কাছে কাছে থাকতেন তিনি। দেশে জরুরি অবস্থার পর দেশের রাজনীতিতে বদল ঘটতে শুরু করেছিলেন। অনেক ডনের আবির্ভাব ঘটেছিল সেই সময়। ডনেদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষও ঘটত। গোটা পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন জেনেবাই।

ছবি সংগৃহীত।

১৯ ২৩

অপরাধ জগতে পা রেখেছিলেন জেনেবাইয়ের বড় ছেলেও। নিজস্ব পরিচিতি তৈরির চেষ্টায় ছিলেন তিনি। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। সন্তান হারানোর শোকে স্বভাবতই ভেঙে পড়েছিলেন জেনেবাই। কিন্তু সেই অপরাধীদের ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, উপরওয়ালা তাঁদের শাস্তি দেবেন।

প্রতীকী ছবি।

২০ ২৩

ছেলে মারা যাওয়ার পর ধীরে ধীরে নিজেকে যেন গুটিয়ে নিয়েছিলেন জেনেবাই। ধর্মের প্রতি ঝুঁকেছিলেন তিনি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কাজ শুরু করেছিলেন। যেখানেই সাম্প্রদায়িক অশান্তি হত, সেখানে ছুটে যেতেন জেনেবাই।

প্রতীকী ছবি।

২১ ২৩

ধীরে ধীরে মুম্বইয়ে বেআইনি কারবারের ধারা বদলাতে থাকল। মাদক কারবারের রমরমা শুরু হল। এ সব থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন জেনেবাই। পাশাপাশি তাঁর দাপটও ক্রমশ কমছিল। শোনা যায়, এর পরই নাকি জেনেবাইয়ের থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন দাউদ, হাজি মস্তানরা।

ছবি সংগৃহীত।

২২ ২৩

সাল ১৯৯৩। মুম্বইয়ে ঘটে গেল বিস্ফোরণ। এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছিলেন জেনেবাই। শোনা গিয়েছিল যে, এই নিয়ে তাঁর অনুতাপ ছিল। বলেছিলেন, তাঁর যদি সেই ‘নেটওয়ার্ক’ থাকত, তা হলে হামলার কথা আগাম জানলে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করতেন। এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল জেনেবাইকে। দাউদের উপর অসন্তুষ্টও হয়েছিলেন।

ছবি সংগৃহীত।

২৩ ২৩

দীর্ঘ রোগভোগের পর মৃত্যু হয়েছিল জেনেবাইয়ের। কবে কোথায় তাঁর মৃত্যু হয়, জানা যায়নি। তবে তাঁর মৃত্যু হলেও এখনও জ্যান্ত রয়েছে এক জন সাধারণ নারীর মাফিয়া কুইন হওয়ার কাহিনি।

ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement