জেফ বেজ়োসের বিলাসবহুল প্রমোদতরীর অন্দরমহলের ছবি প্রকাশ্যে। উত্তর সাগরে প্রমোদতরীটিকে পরীক্ষামূলক ভাবে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।
আমাজ়নের প্রতিষ্ঠাতা তথা এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান জেফ বেজ়োস এই মুহূর্তে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে। তাঁর প্রমোদতরীও তাই বিলাসিতায় মোড়া। সুইমিং পুল থেকে শুরু করে হেলিপ্যাড, কী নেই সেখানে?
বেজ়োসের এই প্রমোদতরীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোরু’। সাঙ্কেতিক নাম ‘ওয়াই৭২১’। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নেদারল্যান্ডসের রটারডাম থেকে প্রমোদতরীটির যাত্রা শুরু হয়। কিছু দিনের মধ্যেই এটি বৃহত্তর সমুদ্রে ভাসার জন্য সবুজ সঙ্কেত পেয়ে গিয়েছে।
প্রমোদতরীটি ৪১৭ ফুট দীর্ঘ। একে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা প্রমোদতরীর আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ। এর আগে এত লম্বা প্রমোদতরী নাকি আর কোথাও তৈরি হয়নি।
জলে ভাসার জন্য এই প্রমোদতরীর সঙ্গে একটি পৃথক সহকারী জাহাজের প্রয়োজন হয়। সেই সহকারী জাহাজটির দৈর্ঘ্যই প্রায় ২৫০ ফুট। সমুদ্রের বুকে বেজ়োসের প্রমোদতরী যখন ভেসে বেড়ায়, তার পাশে ছায়াসঙ্গীর মতো তরতরিয়ে এগোয় সেই ‘বন্ধু’ জাহাজও।
২৫০ ফুটের এই সহকারী জাহাজটিতে রয়েছে একটি হেলিপ্যাড। মূলত, মালিক বেজ়োসই কপ্টারে চড়ে জাহাজে এসে নামবেন বলে এই বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জাহাজ থেকে তিনি প্রমোদতরীর অন্দরমহলে পা রাখবেন।
প্রমোদতরীর এই ‘বন্ধু’ জাহাজটিতে স্পিডবোট এবং অন্যান্য গাড়ির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। মূল তরীতে তিন তলা জুড়ে রয়েছে অবসর বিনোদনের নানা উপকরণ।
বেজ়োসের প্রমোদতরীতে ঘুরে বেড়ান স্বল্পবসনা তরুণীরা। তাঁদের কারও পরনে বিকিনি, কেউ আবার পরেছেন মনোকিনি। প্রতি ক্ষেত্রেই ছবিতে বক্ষ বিভাজিকা স্পষ্ট। এই তরীতেই সঙ্গিনী লরেন স্যাঞ্চেসের সঙ্গে সময় কাটাতে দেখা গিয়েছে বেজ়োসকেও।
বিলাসবহুল এই প্রমোদতরী তৈরিতে বেজ়োসের খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এটি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৪০ জন কর্মচারী নিযুক্ত রয়েছেন। তা ছাড়া আরও ১৮ জন অতিথি এই তরীতে সমুদ্র ভ্রমণ করতে পারেন।
আনুমানিক পরিসংখ্যান বলছে, সমুদ্রের বুকে বেজ়োসের এই প্রমোদতরী এক বছর ঘুরে বেড়ালে তার জন্য খরচ হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
আকারে, অন্দরসজ্জায় বেজ়োসের প্রমোদতরী সকলকে চমকে দিয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি একে কেন্দ্র করে বিতর্কও কম হয়নি।
নেদারল্যান্ডসের প্রায় শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সেতু দে হেফ বা ‘কোনিংশ্যাভেন ব্রিজ’। বেজ়োসের বিলাসী প্রমোদতরীর জন্য কোপ পড়েছে এই সেতুতে।
কোনিংশ্যাভেন সেতু ১৩১ ফুট লম্বা। এর নীচে কোনিংশ্যাভেন চ্যানেলের জলেই বেজ়োসের প্রমোদতরী ভাসানো হয়েছে। ৪১৭ ফুটের প্রমোদতরী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় শতাব্দী প্রাচীন সেতুটি ভেঙে ফেলেছে নেদারল্যান্ডস সরকার।
কোনিংশ্যাভেন সেতু ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তে রুষ্ট হয়েছেন স্থানীয়েরা। ঐতিহ্যবাহী এই সেতুর সঙ্গে রটারডাম শহরের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে ছিল। বেজ়োসের বিলাসী তরীর জন্য সেতু ভাঙতে কিছুতেই রাজি ছিলেন না শহরবাসী।
বিতর্কের মুখে বেজ়োসের তরী চলে যাওয়ার পর সেতুটি পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নেদারল্যান্ডস সরকার। হাজার বিতর্ক কাঁধে নিয়েই উত্তর সাগরে যাত্রা শুরু করেছে ‘কোরু’। আগামী দিনে এই প্রমোদতরীতে অনেক চমকের জন্য অপেক্ষা করে আছেন বেজ়োসের অনুরাগীরা।