১৫ অগস্ট, ১০৪তম জন্মদিনের ঠিক দু’সপ্তাহ আগে মারা গেলেন ব্রিটেনের বিমানচালিকা জে এডওয়ার্ডস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের বিমানবাহিনী ‘রয়্যাল এয়ার ফোর্স (র্যাফ)’-এর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধবিমান পৌঁছনো বিমানচালিকাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
জে ছিলেন ব্রিটেনের অসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা ‘এয়ার ট্রান্সপোর্ট অক্সিলিয়ারি (এটিএ)’-এর বিমানচালিকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই সংস্থা ব্রিটেনের হয়ে যুদ্ধবিমান সরবরাহের কাজ করতে শুরু করে।
মাত্র ২১ বছর বয়স থেকে ব্রিটেন জুড়ে র্যাফ ঘাঁটিগুলিতে যুদ্ধবিমান পরিবহণ শুরু করেন জে। জার্মানির বিমানবাহিনী ‘লুফৎওয়াফ’-এর সঙ্গে লড়াই করার জন্য এই যুদ্ধবিমানগুলি কাজে লাগাত ব্রিটেনের বায়ুসেনা।
স্পিটফায়ার, হ্যারিকেন এবং বোল্টন ডিফিয়েন্ট-সহ ২০টি আলাদা আলাদা বিমান চালানো শিখেছিলেন জে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ব্রিটেন এবং আমেরিকা-সহ বাকি জোট সঙ্গীরা ১৯৪৪ সালে ফ্রান্সের নরমান্ডি পৌঁছনোর পর (যা ইতিহাসে ডি-ডে নামেও পরিচিত) জে এবং তাঁর সহকর্মীদের ইংলিশ চ্যানেলের উপর দিয়ে ফ্রান্সে তৈরি করা ঘাঁটি পর্যন্ত যুদ্ধবিমান চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এটিএ সংস্থা ব্রিটেনের বায়ুসেনার হয়ে মোট তিন লক্ষ বিমান সরবরাহ করেছিল। এর মধ্যে ১০০-রও বেশি অভিযানে ছিলেন জে। দু’টি বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষাও পান জে।
প্রশিক্ষণের সময় এক বার তাঁর বিমান গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এই দুর্ঘটনায় তাঁর একটি দাঁতও ভেঙে যায়। পরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান চালানোর সময় তাঁর বিমানে গোলযোগ দেখা দেয়। সে বারও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
যুদ্ধের পর জে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে চলে আসেন। এক জন শিক্ষক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন। বিল নামক এক কাঠুরেকে বিয়েও করেন। পরে তাঁদের একটি ছেলে হয়।
এর পর থেকে দীর্ঘ দিন বিমানচালনা থেকে দূরেই ছিলেন জে। ৮০ বছর বয়সে শেষ বারের মতো তিনি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার হোয়াইট রকের উপর একটি ছোট বিমান চালান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পর ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে এটিএ তৈরি করা হয়। যুদ্ধের সময় ২৫টি বিভিন্ন দেশের ১,২৫০ জন পুরুষ ও মহিলাকে এই সংস্থায় নিয়োগ করা হয়। ১৪৭টি আলাদা আলাদা বিমান ব্রিটেনের বায়ুসেনার জন্য সরবারহের কাজ দেওয়া হয় তাঁদের। এর মধ্যে ছিল একাধিক যুদ্ধবিমানও।
এটিএ-র এই বিশেষ দলের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন জেরার্ড ডি’এরল্যাঞ্জার। যুদ্ধ শুরুর আগে জেরার্ড ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পরিচালক ছিলেন।
এটিএ-তে প্রাথমিক ভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের বহু অভিজ্ঞ পাইলটকে নেওয়া হয়। তবে তাঁদের অনেক বয়স হয়ে যাওয়ায় নতুন বিমানচালকদের নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৯৪০ সালে এটিএ মহিলাদের বিমানচালনার জন্য নিয়োগ শুরু করে। কিন্তু সেই সময় বিমানচালিকাদের বেতন বিমানচালকদের তুলনায় ২০ শতাংশ কম ছিল। এই বিমানচালিকাদের বিভিন্ন সময়ে র্যাফ-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যৌন হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল।
১৯৪১ সালে উইনি ক্রসলে এটিএ-র প্রথম বিমানচালিকা ছিলেন যিনি হ্যারিকেন যুদ্ধবিমান চালিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৪৩ সাল থেকে এটিএ-তে বিমানচালক এবং বিমানচালিকাদের সমান বেতন দেওয়ার নিয়ম চালু হয়।
জে মারা যাওয়ার পর এটিএ-র সেই সময়ের বিমানচালিকাদের মধ্যে এক জনই বেঁচে আছেন।