বলিউডের এমন বহু তারকা রয়েছেন, যাঁরা নাকি নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলেন না। শ্যুটিংয়ে দেরি করে আসেন। অনেক সময় নিজেদের পছন্দের সহশিল্পীকে সিনেমায় নেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তা সত্ত্বেও সে সব তারকাকে নিয়েই কাজ করতে হয় প্রযোজক-পরিচালকদের।
তবে সব প্রযোজক-পরিচালকই যে তারকাদের কথায় ওঠেন-বসেন, এমনটা নয়। উল্টে তারকা হলেও তাঁদের সেটের অন্যদের মতোই নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। না হলে ‘শাস্তি’ও জোটে। এমনই এক কাণ্ড হয়েছিল জয়াপ্রদার সঙ্গে।
তবে সেই কাণ্ডের গল্প শোনানোর আগে জয়ার কেরিয়ারের দিকে নজর ঘোরানো যাক। সত্তরের দশকে তাঁর বলিউড পথচলা শুরু। এর পর আশির দশকে বলিউডের প্রথম সারির নায়িকা হয়ে ওঠেন জয়া। নব্বইয়ের গোড়াতেও চুটিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তবে কেরিয়ারের তুঙ্গে থাকাকালীনই রুপোলি পর্দা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন।
১৯৯৪ সালে তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-তে যোগ দেন ৩২ বছরের জয়া। ২০১৮ সালে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এনটিআর (এন টি রামা রাও)-এর একটা ফোনে আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম। ছোটবেলা থেকে ওঁর ছবি দেখে বড় হয়েছি। হঠাৎ করে ওঁর হিরোইন হলাম। রাজনীতিতে আসাটাও হঠাৎ করেই হয়েছিল।’’
হঠাৎ করে চলে এলেও রাজনীতিতে কম সফল হননি বলিউডের এই নায়িকা। ১৯৯৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন। তবে এন চন্দ্রবাবু নায়ডু টিডিপি-র দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে চিড় ধরে। এর পর মুলায়ম সিংহ যাদবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমাজবাদী পার্টিতে চলে যান জয়া। যদিও ২০১০ সালে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাঁকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন মুলায়ম। তার আগেই অবশ্য রামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি (২০০৪ এবং ২০০৯)।
২০১১ সালে অমর সিংহের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় লোকমঞ্চ (আরএলএম) গঠন করেন জয়া। তবে তাতেও বেশি দিন ছিলেন না। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি)-এর সদস্য হন। তবে ওই দলের টিকিটে বিজনৌর লোকসভা কেন্দ্র থেকে পরাজিত হওয়ার পর আবারও দলবদল করেন। এ বার বিজেপি। ২০১৯ সালে গেরুয়া শিবিরের টিকিটে রামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেও সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী আজম খানের কাছে পরাজিত হন জয়া।
রাজনীতিতে যোগ দিলেও সিনেমার পর্দাকে পুরোপুরি বিদায় জানাননি। নব্বইয়ের দশক থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সিনেমায় কাজ করে গিয়েছেন।
হিন্দির পাশাপাশি তেলুগু, তামিল, মালয়ালম, কন্নড়, মরাঠি এবং বাংলা সিনেমায়ও জয়াকে দেখা গিয়েছে। তবে একটি তেলুগু সিনেমায় শ্যুটিয়ের সময় বেশ কড়া ‘শাস্তি’ পেয়েছিলেন জয়া। যা বোধ হয় কখনও ভুলবেন না তিনি।
দূরদর্শনে একটি সাক্ষাৎকারে জয়া জানিয়েছিলেন, কে বাপ্পাইয়ার ‘অগ্নি পোলু’ ছবিতে কাজ করার সময় ওই দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। ১৯৯১ সালে ওই তেলুগু ছবিতে কৃষ্ণম রাজুর সঙ্গে ছিলেন তিনি।
‘অগ্নি পোলু’-র একটি নাচের দৃশ্যে শ্যুটিং করাটা বেশ কষ্টকর হয়ে উঠেছিল বলে জানিয়েছিলেন জয়া। ওই ছবির একটি গানে তাঁকে সর্পিল ভঙ্গিতে নাচতে হয়েছিল। তবে সেই ভঙ্গিতে জয়া নাচতে পারবেন কি না, তা নিয়েই নাকি সন্দিহান ছিলেন পরিচালক বাপ্পাইয়া। তাতে অপমানিত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন জয়া। তিনি বলেন, ‘‘(পরিচালকের কথা শুনে) আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল।’’
কেমন ছিল সেই শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা? জয়া বলেন, ‘‘প্রবল জ্বর নিয়েও ওই নাচের রিহার্সালে হাজির হয়েছিলাম। সে সময় আমার ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। কোরিয়োগ্রাফার ছিলেন খুব কড়া ধাতের। আমার রিহার্সালে ঢুকতে মাত্র পাঁচ মিনিট দেরি হয়েছিল। তার জন্য আমাকে আধ ঘণ্টা এক পায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল।’’
চার দশকের বেশি কেটে গেলেও সে দিনের অভিজ্ঞতার কথা ভোলেননি জয়া। তিনি বলেন, ‘‘ওই শাস্তি পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছিলাম। কারণ আমার শরীর ভাল ছিল না।’’ এর পরেও রিহার্সাল চালিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান জয়া।
রিহার্সাল করতে গিয়েও বেশ কষ্ট পেতে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জয়া। তিনি বলেন, ‘‘রিহার্সালের সময় আমার পিঠে র্যাশ বেরিয়ে গিয়েছিল। চুলও উঠতে শুরু হয়েছিল। কোনও খাবার খেতে পারতাম না। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে যা খেতাম, সব বমি করে দিতাম।’’
যদিও ওই সিনেমায় সকলেই তাঁর কাজের প্রশংসা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন জয়া। তাঁর কথায়, ‘‘ছবি মুক্তির পর সকলেই আমার কাজের খুব তারিফ করেছিলেন। ওই ছবি হিট হয়েছিল। মনে হয়েছিল, এত কষ্ট হলেও, তা সার্থক!’’