সম্প্রতি একটি ৩০০ বছর পুরনো মমি নজরে আসার পর সেটির উৎসসন্ধানে দিন রাত এক করে দিচ্ছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা।
মমিটির মাথা হনুমানের মতো। শরীরের নীচের অংশ মাছের লেজের মতো। দেখেতে যেন ঠিক ‘জলপরী’!
জাপানি সংবাদপত্র ‘দ্য আসাহি শিমবান’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আসাকুচি শহরের মন্দিরের একটি বাক্সের মধ্যে মমিটি রাখা ছিল। মমিটির পাশে ছিল একটি চিঠিও।
চিঠিতে লেখা, ১৭৩৬ থেকে ১৭৪১ এর মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরে শিকাকু দ্বীপের কাছে এক মৎস্যজীবীর জালে ধরা পরে প্রাণীটি।
পরে সেটিকে একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। শুকিয়ে যাওয়া ‘জলপরী’ বছরের পর বছর হাতবদল হতে হতে শেষমেশ মন্দিরে ঠাঁই পেয়েছে। মমিটি মন্দিরে ঠাঁই পেল কী ভাবে, তা এখনও অজানা।
১২ ইঞ্চি লম্বা মমিটির দাঁত ছুঁচালো, বিষণ্ণ মুখ, মাথায় রয়েছে চুল। কিন্তু শরীরের নীচের অংশ মাছের মতো লেজ বিশিষ্ট এবং আঁশও রয়েছে।
এই মমির সঙ্গে জাপানের দু’টি পৌরাণিক প্রাণীর সাদৃশ্য রয়েছে। প্রাণীগুলি হল ‘অ্যামাবিস’ এবং ‘নিনগিয়োস’। ‘অ্যামাবিস’ হল চঞ্চু বিশিষ্ট লেজ যুক্ত প্রাণী এবং ‘নিনগিয়োস’ হল মানুষের মাথা বিশিষ্ট মাছ জাতীয় প্রাণী।
মমিটির রহস্য উন্মোচন করতে কুরাশিকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সিটি স্ক্যানের সাহায্য নিচ্ছেন। ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে মমিটির।
মমিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে ‘ওকায়ামা ফোকলোর সোসাইটি’র সদস্য হিরোশি কিনোশিতা সংবাদপত্রকে বলেন, ‘‘জাপানি লোককথায় জলপরীরা তাঁদের অমরত্বের জন্য বিখ্যাত। কথায় আছে, এই জলপরীদের মাংস যদি কেউ খায় তবে সে অমরত্ব লাভ করবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও কোনও জায়গার লোককথায় এ-ও বলা আছে যে, এক মহিলা ভুলবশত জলপরীর মাংস খেয়ে ফেলেছিলেন। তিনি প্রায় ৮০০ বছর বেঁচেছিলেন।’’
লোকমুখে এই কথাও ঘোরাফেরা করে যে, এই জলপরীদের জন্যই জাপানের মানুষ অনেক সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
দর্শনার্থীদের প্রার্থনা করার জন্য মমিটি আগে মন্দিরে একটি কাচের বাক্সে প্রদর্শনযোগ্য করে রাখা হয়েছিল। খারাপ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মন্দিরের মধ্যে একটি অগ্নিরোধী বাক্সে গত ৪০ বছর ধরে মমিটি রাখা ছিল। ‘দ্য আসাহি শিমবান’ অনুযায়ী, অনুরূপ জলপরীর মমি জাপানের অন্য আরও দু’টি মন্দিরে পুজো করা হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে প্রাণীটি সম্ভবত একটি বানরের ধড়ের সঙ্গে একটি মাছের লেজ সেলাই করে তৈরি করা হয়েছে, যা সম্ভবত এক জন মানুষের চুল এবং নখ দিয়ে অলঙ্কৃত।
বিদেশি পর্যটক এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকদের বোকা বানাতে সম্ভবত এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।