চিরায়ত পদ্ধতি ছাড়াও কি সৃষ্টি সম্ভব? সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমশ এগোচ্ছে সভ্যতা। আধুনিক হচ্ছে জীবনযাপন। প্রযুক্তি থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান— সবতেই অগ্রগতির ছাপ দেখা যাচ্ছে। তা বলে কিনা এ বার গবেষণাগারেই জন্ম নেবে শিশু!
এ-ও সম্ভব? এমনটা যদি হয়, তা হলে তো অসাধ্যসাধন হবে। সম্প্রতি জাপানের বিজ্ঞানীরা এমন অসম্ভবকে সম্ভব করারই দাবি করেছেন। শুধু তাই নয়, সেই লক্ষ্যে কয়েক কদম এগিয়েও গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এই নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দাবি করেছেন, ২০২৮ সালের মধ্যেই গবেষণাগারে জন্ম নেবে শিশু।
কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এই নিয়ে কাজ করছেন। সাধারণ মানবকোষ থেকে কৃত্রিম ভাবে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। এই চেষ্টা সফল হলে এক আশ্চর্য দিগন্ত খুলে যাবে মানবজীবনে।
‘নেচার’ পত্রিকায় নিজেদের গবেষণার বিষয়টি তুলে ধরেছেন ওই বিজ্ঞানীরা। কোন পদ্ধতিতে গবেষণাগারে শিশু জন্মাবে— এই নিয়ে সেখানে আলোকপাত করেছেন তাঁরা।
গবেষণাগারে শিশুর জন্মের প্রক্রিয়া সফল করার আগে ইঁদুরের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেই প্রক্রিয়ায় তাঁরা সফল হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পুরুষ ইঁদুরের ত্বকের কোষ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের কোষ এবং কলা তৈরি করেছেন তাঁরা।
তার পর ওই কোষ এবং কলাগুলি ওষুধের সাহায্যে পরিণত করা হয়। এর পরে তা পুরুষের স্টেম সেল থেকে মহিলা কোষে পরিবর্তিত করা হয়।
মহিলা কোষ থেকে তৈরি করা হয় ডিম্বাণু। ওই ডিম থেকেই কৃত্রিম ভাবে পুরুষ ইঁদুরের জন্ম হয়েছে।
কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী কাতসুহিকো হায়াশি এবং তাঁর দল সম্প্রতি এই পদ্ধতিতে ২টি পুরুষ ইঁদুরকে ব্যবহার করে ৭টি ইঁদুরের জন্ম দিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যে পদ্ধতি ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে, তা শীঘ্রই মানবকোষে ব্যবহার করা হবে। আর তার পরেই সৃষ্টির নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, এর ফলে সন্তান না হওয়ার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন মহিলারা।
এই পদ্ধতিতে কোনও মহিলাকে ছাড়াই দু’জন পুরুষও বাবা হতে পারবেন। অর্থাৎ, সমকামী পুরুষেরা মহিলাদের সাহায্য ছাড়াই পিতৃত্বের স্বাদ পাবেন।
কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী কাতসুহিকো হায়াশি দাবি করেছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যেই এই কৌশলে মানুষেরও জন্ম হবে।
তবে এই পদ্ধতি ঘিরে নানা উদ্বেগও রয়েছে। যেমন যে কোনও বয়সেই মহিলারা সন্তান ধারণ করতে পারবেন। আবার, নিজেদের জিনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এবং পছন্দমতো সন্তানের দাবি করবেন বাবা-মায়েরা।
হায়াশির দাবি, মানবকোষ থেকে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু তৈরি করা যাবে আর ৫ বছরের মধ্যেই। তবে এই প্রক্রিয়া আদৌ কতটা নিরাপদ, তা পরীক্ষার জন্য আরও ১০ থেকে ২০ বছর সময় লাগবে বলে মনে করছেন অনেক বিজ্ঞানী।
বিজ্ঞানীদের মতে, মানবকোষ থেকে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু তৈরি করা হয়তো যাবে। কিন্তু ভ্রুণ তৈরি করা একটা চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনে সেই অসাধ্যসাধন হয় কি না সে দিকে তাকিয়ে বিশ্ব।