মধ্যবয়সে সঙ্গীহীন জীবন। স্ত্রী, সন্তান বা বান্ধবী নেই। একাকিত্বকে অন্য ভাবে উপভোগ করতেন প্রৌঢ়।
তাঁর একাকী জীবনে সঙ্গ দিত ম্যাগাজিন। একরাশ রংচঙে পত্রিকার মাঝে সুখ খুঁজে নিয়েছিলেন প্রৌঢ়। ছবি দেখে, প্রতিবেদন পড়ে দিব্যি কাটিয়ে দিতেন দিন।
জাপানের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সি ওই প্রৌঢ়ের নাম জোজি। গাড়ি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন তিনি। ২০১৭ সালে তাঁর রহস্যময় মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসে। মৃত্যুর কারণ সাড়া ফেলে দিয়েছিল চারদিকে।
প্রৌঢ়ের কাছে যে ম্যাগাজিনগুলি ছিল, তা সাধারণ কোনও ম্যাগাজিন নয়। সবই ছিল পর্নোগ্রাফি ম্যাগাজিন। দুষ্টু ছবি আর লেখায় ভরা থাকত সে সব যৌনপত্রিকার পাতা। দিনভর তাতেই মজে থাকতেন জোজি।
অনেকে বলেন, এই পর্ন ম্যাগাজিনই জোজির মৃত্যু ডেকে এনেছিল। যে পৃষ্ঠাগুলির মাঝে তিনি যৌনতার আস্বাদ খুঁজে পেয়েছিলেন, তা-ই কেড়ে নিয়েছিল তাঁর প্রাণ। মৃত্যুর মাসখানেক পর তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল স্তূপীকৃত যৌনপত্রিকার মধ্যে থেকে।
ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন জোজি। দীর্ঘ দিন ভাড়া না দেওয়ায় তাঁর খোঁজ নিতে আসেন বাড়ির মালিক। তাঁর দাবি ছিল, বাড়িতে জোজিকে খুঁজে পাননি তিনি। বাড়ির চারদিকে ছিল পর্ন ম্যাগাজিনের ছড়াছড়ি। আর ছিল কটু গন্ধ।
এর পর এক সাফাইকর্মী বাড়ির ভিতরে একটি ঘরে পর্ন ম্যাগাজিনের স্তূপের মধ্যে থেকে প্রৌঢ়ের দেহ উদ্ধার করেন। পুলিশ মৃতদেহ পরীক্ষা করে জানায়, অন্তত এক মাস আগেই জোজির মৃত্যু হয়েছে।
অনেকের দাবি, জোজির ঘাড়ে পর্ন ম্যাগাজিনের স্তূপ এসে পড়েছিল। আচমকা সেই ভারের বোঝা সইতে না পেরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন প্রৌঢ়। একা বাড়িতে ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। তাঁর মৃত্যুর কথা কেউ জানতেও পারেননি।
অনেকে আবার বলেন, পর্ন ম্যাগাজিনের চাপে নয়, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছিল জোজির। পরে তাঁর মৃতদেহটি ম্যাগাজিনের ভারে চাপা পড়ে গিয়েছিল।
জোজির মৃতদেহ উদ্ধারের পর তাঁর দেহের উপর চেপে থাকা ম্যাগাজিনগুলি ওজন করে দেখা হয়েছিল। অন্তত ৬ টন ওজনের পত্রিকার ভারে পিষে ছিল প্রৌঢ়ের দেহ।
জোজির পরিবারের তরফেই ম্যাগাজিনগুলি বাড়ি থেকে সরানোর জন্য সাফাইকর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ পর্ন ম্যাগাজিনের কথা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল পরিবার।
সাফাইকর্মী জানান, জোজির বাড়িতে এমন কোনও কোনা ছিল না, যেখানে পর্ন সংক্রান্ত ম্যাগাজিন পাওয়া যায়নি। রান্নাঘর, শৌচালয় থেকে শোয়ার ঘর, ঠাসা ছিল ম্যাগাজিনে। বাড়ির প্রতিটি টেবিল, তাক জুড়ে পর্ন ম্যাগাজিন সাজিয়ে রেখেছিলেন প্রৌঢ়।
জোজির বাড়ি থেকে একাধিক সেক্সটয়ও পাওয়া গিয়েছিল বলে জানান ওই সাফাইকর্মী। মনে করা হয়, সেগুলিও প্রৌঢ়ের একাকিত্বের সঙ্গী হয়েছিল।
ম্যাগাজিনের মাঝেই জোজির দেহে পচন ধরেছিল। বইয়ের পাতার সঙ্গে প্রায় মিশে গিয়েছিলেন প্রৌঢ়। তাঁর দেহের সঙ্গে পচন ধরেছিল ওই ম্যাগাজিনগুলিতেও। ফলে ঘরটি সাফ করতে কর্মীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।
ম্যাগাজিনের কারণেই প্রৌঢ়ের দেহ পচে যাওয়ার গন্ধ খুব বেশি ছড়ায়নি বলে দাবি করেন কেউ কেউ। এক মাস ধরে মৃতদেহ পচতে থাকলে যে পরিমাণ দুর্গন্ধ ছড়ানো উচিত, তা আশপাশের বাসিন্দাদের সচেতন করতে বাধ্য। কিন্তু দাবি, বিপুল পরিমাণ বই জোজির দেহের তরল শুষে নিয়েছিল। তাই দুর্গন্ধ ছিল তুলনামূলক কম।
জাপানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, জোজির মৃত্যু যে পর্ন ম্যাগাজিনের চাপেই হয়েছিল, তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। বরং হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি। দেহ উদ্ধারের পর যে যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে ম্যাগাজিনের ভারে পিষে মৃত্যুর আশঙ্কাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।