দ্বাদশ শ্রেণিতে ইংরেজিতে ফেল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার। মহারাষ্ট্রের উমেশের গল্প যেন মিলে যায় ‘টুয়েল্ভথ ফেল’-এর মনোজ কুমার শর্মার সঙ্গে।
এক জন ডাকাতিয়া চম্বলের গ্রামের ছেলে। টুকতে দেওয়া হয়নি বলে ফেল করেছিলেন দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায়। অন্য জন মহারাষ্ট্রের মাহিরাভনি গ্রামে মানুষ। ইংরেজিতে পেয়েছিলেন মাত্র ২১, সেই দ্বাদশেই। অর্থাৎ ‘ফেল’। দু’জনই আজ আইপিএস অফিসার।
প্রথম জন, মনোজকুমার শর্মা। তাঁর জীবনে ‘ফেল’ থেকে দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা টপকে শীর্ষস্তরের পুলিশ আধিকারিক হওয়ার গল্প নিয়ে সম্প্রতি বিধুবিনোদ চোপড়া তৈরি করেছেন ‘টুয়েল্ভথ ফেল’।
যা দেখতে দেখতে নিজের পুরনো কথা মনে পড়ছিল দ্বিতীয় জনের। তিনি উমেশ গণপত খণ্ডবহালে। মরাঠি এই যুবক এখন জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার। মনোজের মতো তাঁর জীবনেও ছিল ‘ফেল’, ‘রিস্টার্ট’-এর মতো পর্ব।
দ্বাদশে ফেল করার পরের বছর ফের পরীক্ষা দেন মনোজ। না টুকেও পাশ করেন। তার পরে ঘটনাক্রম তাঁকে নিয়ে আসে দিল্লিতে। সিনেমা সূত্রে এই কাহিনি অনেকেরই এখন জানা।
উমেশের গল্প কিন্তু একটু অন্য। দ্বাদশ শ্রেণিতে ফেল করে বোর্ডিং স্কুল থেকে গ্রামে ফিরে এসেছিলেন। বাবা গণপত খণ্ডবহালে ছিলেন গ্রামের দুধ বিক্রেতা, চাষবাসও ছিল।
‘টুয়েল্ভথ ফেল’ ছেলেটি পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বাবার সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। গ্রাম থেকে রোজ দুধ নিয়ে বিক্রি করতে যেতেন নাসিক বাজারে। মনোজ যেমন চাকরি করতেন আটাকলে।
যেতে-আসতে রোজই উমেশের চোখে পড়ত রাস্তার পাশে মহারাষ্ট্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হোর্ডিং। এক দিন কী মনে হল, সটান গিয়ে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীর কাছে জানতে চাইলেন, “আমি টুয়েল্ভথ ফেল। আবার পড়ার সুযোগ পাব?”
কৃষিবিদ্যা নিয়ে স্নাতক হয়ে স্নাতকোত্তরে বেছে নিলেন সেই ইংরেজিকে। ইংরেজি কেন? উমেশ বলেন, “জেদ চেপে গিয়েছিল। যে বিষয়ে ফেল করেছি, সেটাতেই পাশ করতে হবে।”
এক দিকে দুধ বিক্রি, বাবাকে চাষে সাহায্য করা, অন্য দিকে পড়াশোনা। স্নাতকোত্তর পড়ার সময়ে দিল্লি যেতে হয়। সেখান থেকেই ইউপিএসসি তথা আইপিএস অফিসার হওয়ার লড়াই।
উমেশ বলেন, “মহারাষ্ট্রের সিভিল সার্ভিসে প্রথম সুযোগে পাশ করে যাই। তখন ভেবেছিলাম, তা হলে আইপিএসের পরীক্ষাতেও পারব।”
প্রথম দু’বারে আইপিএস পরীক্ষায় কৃতকার্য হননি। তৃতীয় বারের চেষ্টায়, ২০১৫ সালে আসে সাফল্য। পুজোর আগে জেলার দায়িত্বে এসেছেন।
উমেশের স্ত্রী চৈতালি বলেন, ‘‘ওঁর জীবনের লড়াইয়ের গল্প এত দিন ওঁর মুখে শুনেছি। ‘টুয়েল্ভথ ফেল’ দেখতে দেখতে বার বার মনে হয়েছে সে গল্পই যেন দেখছি। গায়ে কাঁটা দিয়েছে।’’
ডাক পেলে স্কুল-কলেজে চলে যান আইপিএস উমেশ। পড়ুয়াদের বলে আসেন, “জেদ থাকলে, সব সম্ভব। জীবনের যে কোনও পরীক্ষায় ফেলের পরে, নতুন করে শুরু করা যায়, জেতা যায়। আমি বলছি…।”