পাঁচ বছর বয়স থেকে বড় পর্দায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় শুরু। মার্শাল আর্টসে পারদর্শী অভিনেতার কেরিয়ারে একে একে জুড়ে চলেছে ‘দ্য নাইট অফ শ্যাডোস’, ‘লিটল বিগ সোলডার’, ‘টুইন ড্রাগন্স’, ‘ড্রাগন লর্ড’, ‘স্নেক ইন দ্য ইগল্স শ্যাডো’, ‘শাওলিন’, ‘সাংহাই নাইট্স’, ‘ড্রাগন ফিস্ট’, ‘দ্য ক্যারাটে কিড’, ‘রাশ হাওয়ার’-এর মতো জনপ্রিয় ছবি। শোনা যায়, হং কং-এর এই খ্যাতনামী তারকা জ্যাকি চ্যানের জন্মের পর নাকি কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা।
১৯৫৪ সালের ৭ এপ্রিল ব্রিটিশ শাসনাধীন হং কংয়ে জন্ম জ্যাকির। জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল চ্যান কং-স্যাং। চিনের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন জ্যাকির বাবা-মা দু’জনেই উদ্বাস্তু হন।
১৯৩৭ সালে চিনের গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে কাজ করতেন জ্যাকির বাবা। কিন্তু কমিউনিস্ট সরকারের হাতে গ্রেফতারির ভয়ে তিনি হং কং পালিয়ে যান। সেই সময় হং কং ছিল ব্রিটিশের অধীনে।
১৯৪০ সাল নাগাদ হং কং গিয়ে পদবি বদলে ফেলেন জ্যাকির বাবা। নিজের পদবি ত্যাগ করে স্ত্রীর পদবি গ্রহণ করেন তিনি। পরিচয় গোপন করে সেখানে রাঁধুনির কাজ শুরু করেন।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জ্যাকি দাবি করেছিলেন যে, তিনি তাঁর বাবার আসল পরিচয় জানতেন না। বাবার অতীত জানার পর নিজের নাম বদলে ফেলেন অভিনেতা।
সাধারণত মাতৃগর্ভে ন’মাস থাকার পর সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু জ্যাকির মায়ের ক্ষেত্রে তা ছিল ভিন্ন।
জ্যাকি এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, মাতৃগর্ভে এক বছর ছিলেন তিনি। জন্মের সময় তাঁর ওজন সাড়ে পাঁচ কিলোগ্রামের বেশি ছিল।
জ্যাকি জানিয়েছিলেন যে, জন্মের সময় বেশি ওজন হওয়ার কারণে তাঁর মায়ের অস্ত্রোপচার করানো হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসার খরচ মেটানোর সাধ্য ছিল না জ্যাকির পরিবারের।
সাক্ষাৎকারে জ্যাকি জানিয়েছিলেন যে, তাঁর বাবা-মা দু’জনেই জন্মের পর চিকিৎসার খরচ মেটানোর জন্য তাঁকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আসলে যে চিকিৎসক জ্যাকির মায়ের অস্ত্রোপচার করেছিলেন, তাঁর সন্তান ছিল না।
হাসপাতালের চিকিৎসক জ্যাকির বাবা-মাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, তিনি চিকিৎসার সব খরচ মাফ করে দিতে পারেন যদি তাঁরা জ্যাকিকে দিতে রাজি হন।
শুধু চিকিৎসার খরচই নয়, জ্যাকির বাবা-মাকে ৫০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রা অনুযায়ী ৪১ হাজার টাকা) দিতেও রাজি হয়ে ছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক।
জ্যাকির জন্মের সময় তাঁর বাবা-মা দরিদ্র ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন অভিনেতা। চিকিৎসার খরচ মেটানোর জন্য কী করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না তাঁরা। তাই টাকার বিনিময়ে জ্যাকিকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দু’জনে।
জ্যাকির বাবার বন্ধুরা নিরস্ত করেন তাঁকে। তিনি যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না তা জানান জ্যাকির বাবাকে। বন্ধুদের কথায় হুঁশ ফেরে তাঁর। তার পর কোনও ভাবে চিকিৎসার খরচ মেটান তিনি।
জ্যাকি তাঁর আত্মজীবনী ‘নেভার গ্রো আপ’-এ লিখেছেন, ‘‘আমি ছোটবেলায় এত মোটা ছিলাম যে, সকলে বলতেন আমি নাকি শহরের সবচেয়ে ভারী শিশু। অনেকে আমার ওজনের জন্য ক্যাননবল বলে ডাকতেন।’’