Hamas Chief Yahya Sinwar

ভাঙা চেয়ারে পড়ে মৃতদেহ, গাজ়ায় খতম হামাস নেতার দেহ নিয়ে একা বসেছিলেন ইহুদি সৈনিক

হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে খতম করার পর তাঁর দেহ নিয়ে কিছু ক্ষণ বসে থাকতে হয়েছিল এক ইহুদি সৈনিককে। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ১২:০৩
Share:
০১ ২০

গাজ়ায় ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) ‘অপারেশন সিনওয়ার’। ইরান মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী ‘হামাস’-এর গোপন ডেরায় ঢুকে তাঁদের নতুন প্রধানকে নিকেশ করেছে ইহুদি ফৌজ। শুধু তাই নয়, অভিযান শেষে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃতদেহ থেকে আঙুল কেটে নেয় আইডিএফ।

০২ ২০

এ হেন দুঃসাহসিক অপারেশনের অভিজ্ঞতা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন এক ইহুদি সৈনিক। সিনওয়ারের মৃতদেহের সঙ্গে কয়েক মিনিট কাটাতে হয়েছে তাঁকে। পোস্টে যার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

Advertisement
০৩ ২০

আইডিএফের ওই বীর ফৌজির নাম ইতামার ইটাম। বর্তমানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে রয়েছেন তিনি। শেষ সময়ে ভাঙা কুর্সির উপর পড়েছিলেন সিনওয়ার, জানিয়েছেন ইটাম। হামাস প্রধানকে ‘বেঁটে, কুৎসিত ও ভগ্ন স্বাস্থ্যের’ অধিকারী বলে উল্লেখ করেছেন ইহুদি সেনার এই লেফটেন্যান্ট কর্নেল।

০৪ ২০

আইডিএফের থেকে বাঁচতে দক্ষিণ গাজ়ার শহর রাফাকেই ‘নিরাপদ’ বলে মনে করেছিলেন সিনওয়ার। সূত্রের খবর, তাঁর গোপন ডেরার হদিস মিলতেই সেখানে অভিযান চালায় ইহুদি ফৌজ। কয়েক ঘণ্টার অপারেশনে ভবলীলা সাঙ্গ হয় হামাস প্রধানের।

০৫ ২০

সিনওয়ারের মৃতদেহ শনাক্তকরণের পর সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইটাম। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘সবেমাত্র রাফা ছেড়েছি। খুব বেশি ক্ষণ হবে না। আমি ওকে দেখেছি... সিনওয়ার... নিজের চোখে ওর মৃতদেহটা দেখেছি।’’

০৬ ২০

এর পরই জঙ্গি নেতার মৃতদেহের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলির বর্ণনা দিয়েছে আইডিএফের এই বীর সৈনিক। ‘‘আমি কয়েক মিনিট ওর সঙ্গে কাটিয়েছি। তখন সম্পূর্ণ একা ছিলাম। আমি ওকে দেখেছি। বেঁটেখাটো, কুৎসিত ও ভগ্ন স্বাস্থ্যের একটা মানুষ। ভাঙাচোরা একটা কুর্সিতে যাঁর দেহটা পড়েছিল।’’ পোস্টে লিখেছেন ইটাম।

০৭ ২০

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজ়া থেকে ইহুদি ভূখণ্ডে হওয়া ভয়ঙ্কর হামলায় প্রাণ হারান প্রায় ১ হাজার ২০০ ইজ়রায়েলি। আইডিএফের দাবি, গোটা ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সিনওয়ার। এক বছরের মাথায় যাকে খতম করল বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার।

০৮ ২০

হামাস প্রধানের মৃত্যুতে এক বছর আগের সেই হাড়হিম করা জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করেছেন আইডিএফের ওই লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ইটাম লিখেছেন, ‘‘এই মানুষটা কত যন্ত্রণা দিয়েছে। যখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শহরের দিকে তাকাই, তখন সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য কষ্ট হয়। তবে সব কিছুর চেয়ে যেটা বেশি, তা হল ঈশ্বরের হয়ে অপমানিত বোধ করছি।’’

০৯ ২০

সমাজমাধ্যমে করা লম্বা পোস্টের দ্বিতীয় অংশে কিছুটা আবেগপ্রবণ ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইটাম। ‘‘সিনওয়ারও একটা সময়ে শিশু ছিল। ওর হয়তো একটা স্বপ্ন ছিল। বড় হয়ে সে শুধু খারাপটাই বেছে নিল। দুর্বৃত্তপনায় হাত পাকাল। বিকৃতমনস্ক একটা মানুষ!’’ লিখেছেন আইডিএফের ওই লেফটেন্যান্ট কর্নেল।

১০ ২০

লেখার একেবারে শেষ অংশে যুদ্ধজয়ের কথা বলেছেন ইটাম। হামাস প্রধানের মৃত্যুতে বিশ্বে শান্তি ফিরেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। ইহুদি সেনার লেফটেন্যান্ট কর্নেলের কথায়, ‘‘আজকের দুনিয়াটা কত সুন্দর। আমরা বিভ্রান্ত হব না। আশাও ছাড়ব না। আমরা একসঙ্গে জিতব।’’

১১ ২০

অন্য দিকে আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, রাফায় রুটিনমাফিক টহলের সময়ে সিনওয়ারকে খতম করে ইহুদি ফৌজ। হামাস প্রধানের সঙ্গে আরও কয়েক জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁরা সিনওয়ারের দেহরক্ষী ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

১২ ২০

‘‘রাফায় টহলের সময়ে আমরা তিন জন জঙ্গির মুখোমুখি হই। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সিনওয়ার। নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্যত্র পালাচ্ছিলেন তিনি। আইডিএফকে দেখেই একটি বাড়িতে লুকোন হামাস প্রধান। ড্রোন দিয়ে চিহ্নিত করার পর সেখানে হামলা চালানো হয়েছিল।’’ বলেছেন ইহুদি ফৌজের মুখপাত্র হাগারি।

১৩ ২০

সিনওয়ারের মৃত্যুর পর একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে ইজ়রায়েল। সেখানে হামাস নেতাকে আইডিএফের ড্রোনকে লাঠি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। এর পরই তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়। হামাসের অভিযোগ, সিনওয়ারকে আত্মসমর্পণের কোন সুযোগই দেওয়া হয়নি।

১৪ ২০

অন্য দিকে হামাস প্রধানের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা ‘সিএনএন’। সেখানে বলা হয়েছে, দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকলেও মাথায় গুলি লাগার কারণেই সিনওয়ারের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মাথার খুলির একাংশ উড়ে গিয়েছে।

১৫ ২০

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের অনুমান, ট্যাঙ্ক শেলের আঘাতেও গুরুতর জখম হন হামাস প্রধান। তাঁর ডান হাতের তর্জনী ছিল না। যা মৃত্যুর পর আইডিএফ কেটে নিয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষায় হামাস প্রধানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করে ইহুদি ফৌজ।

১৬ ২০

ইজ়রায়েলের ন্যাশনাল সেন্টার অফ ফরেনসিক মেডিসিনের প্রধান প্যাথলজিস্ট চেন কুগেল জানিয়েছেন, একটা সময়ে ইহুদি জেলে বন্দি ছিলেন সিনওয়ার। ২০১১ সালে মুক্তি পান তিনি। জেলে থাকা রেকর্ডের সঙ্গেও সিনওয়ারের আঙুলের নমুনা মিলিয়ে দেখা হয়েছে।

১৭ ২০

কুগলের দাবি, প্রথমে দাঁত দিয়ে হামাস প্রধানকে চিহ্নিত করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেটা যথেষ্ট ছিল না। ফলে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইজ়রায়েলি বিদেশ মন্ত্রক।

১৮ ২০

রাফার তেল আল-সুলতান এলাকায় সিনওয়ারের মৃতদেহ খুঁজে বার করে আইডিএফের ৮২৮ ব্রিগেড। ইহুদি সেনার জারি করা ভিডিয়োতে হামাস নেতার দেহের পাশে দু’জন সৈনিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। প্যালেস্তানীয় জঙ্গি গোষ্ঠীর অভিযোগ, সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় তাঁদের শীর্ষ নেতার উপর হামলা চালায় ইহুদি ফৌজ।

১৯ ২০

বছর ৬১-র হামাস নেতা সিনওয়ারের জন্ম হয়েছিল গাজ়ার খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে। প্রায় দু’দশক ইজ়রায়েলের জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে মুক্তি দেয় ইহুদিরা। ২০১৭ সালে হামাস নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পান সিনওয়ার।

২০ ২০

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুতে নেতৃত্বের সঙ্কটে পড়েছে হামাস। এক জন রাজনৈতিক নেতার সন্ধান করছে ইরান সমর্থিত এই গোষ্ঠী, যিনি গাজ়ার বাইরে থেকে সংগঠন পরিচালনা করতে পারবেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement