Iran Nuclear Sites

খোঁজ পায়নি মোসাদও! ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিকে নিশানা করা ইহুদিদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বদলা দিতে ইরানের উপর প্রত্যাঘাত শানানোর সুযোগ খুঁজছে ইজ়রায়েল। শিয়া দেশটির পরমাণু কেন্দ্রগুলিকে এ বার নিশানা করবে ইহুদিরা, আশঙ্কা তেমনই। কোথায় কোথায় রয়েছে সেগুলি?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৪৭
Share:
০১ ২২

শিয়া মুলুক ইরানের উপর প্রত্যাঘাতের সুযোগ খুঁজছে ইহুদি রাষ্ট্র ইজ়রায়েল। কী ভাবে, কোন পথে আক্রমণ শানাবে তেল আভিভ? যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে তেহরানের পরমাণু ঠিকানা গুঁড়িয়ে দেবে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)? না কি সেখানে আছড়ে পড়বে ইহুদিদের ক্ষেপণাস্ত্র? এই নিয়ে দুনিয়ার তাবড় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে চলছে চর্চা।

০২ ২২

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলে ঢুকে হামলা চালায় ইরান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘হামাস’। নির্বিচারে নিরীহ ইহুদিদের খুন করে সন্ত্রাসীরা। পাশাপাশি, বেশ কয়েক জনকে অপহরণ করে গাজ়ায় নিয়ে যায় তারা। ওই ঘটনার পরেই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

Advertisement
০৩ ২২

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ৭ অক্টোবরের বর্ষপূর্তিতে ইরানের উপর হামলার পরিকল্পনা করছে আইডিএফ। তেহরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলির সঙ্গে তেলের ভান্ডারও উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইহুদি ফৌজের। যার প্রস্তুতি আইডিএফের বিমান বাহিনী শুরু করেছে বলেও সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

০৪ ২২

তবে শিয়া মুলুকের পরমাণু কেন্দ্র চোখের নিমেষে উড়িয়ে দেওয়া মোটেই সহজ নয়। কারণ ইরানের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে আণবিক কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, ইজ়রায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারেও এই সংক্রান্ত গবেষণা চালায় তেহরান। ফলে আকাশপথে বোমাবর্ষণ করে বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে সেগুলিকে ধ্বংস করা যথেষ্ট কঠিন।

০৫ ২২

আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ইরানের হাতে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম রয়েছে, তা দিয়ে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত তিনটি পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে তেহরান। এই হাতিয়ার তৈরি করতে হলে ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া জানতে হয়। যার অনেকটাই নাকি আয়ত্ত করে ফেলেছেন পারস্য উপসারের তীরের দেশটির প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

০৬ ২২

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে মূলত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরির প্রক্রিয়া চলে। এই ধরনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রটি রয়েছে তেহরানের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইস্ফাহান প্রদেশের নাটাঞ্জে। এতে ইউরেনিয়াম বিশুদ্ধকরণের দু’টি প্ল্যান্ট রয়েছে। যার মধ্যে একটি ভূগর্ভস্থ।

০৭ ২২

২০০২ সালে ইরানের নির্বাসিত বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীদের মুখেই প্রথম বার নাটাঞ্জের কথা জানা গিয়েছিল। তেহরান অতি গোপনে এটি নির্মাণ করেছে বলে দাবি করেন তাঁরা। যা জানার পর ইরানের পারমাণবিক উদ্দেশ্য নিয়ে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলির মধ্যে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। যা আজও অব্যাহত রয়েছে।

০৮ ২২

আইডিএফের বিমানবাহিনী এই নাটাঞ্জের কতটা ক্ষতি করতে পারবে তা নিয়ে সন্দিহান প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। কেন্দ্রটি ভূগর্ভস্থ হওয়ায় এটিকে ধ্বংস করা রীতিমতো কঠিন বলে মনে করেন তাঁরা। অতীতে বেশ কয়েক বার ইরানের এই কেন্দ্র উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনও বারই সাফল্য আসেনি। ওই হামলাগুলির নেপথ্যে ইহুদিদেরই হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল তেহরান।

০৯ ২২

ইরানের দ্বিতীয় পরমাণু কেন্দ্র ফোর্দোর নাগাল পাওয়া আরও কঠিন। পাহাড় কেটে এই কেন্দ্রটি তৈরি করেছে তেহরান। ফোর্দোর কেন্দ্রটি যাতে পারস্য উপসাগরের দেশটি তৈরি করতে না পারে, তার জন্য ২০১৫ সালে যথেষ্ট চাপ তৈরি করেছিল পশ্চিমি বিশ্ব। কিন্তু তাঁদের লাল চোখ এড়িয়েই এটিতে গড়ে তোলেন তেহরানের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

১০ ২২

গোয়েন্দাদের দাবি, বর্তমানে ফোর্দোতে এক হাজারের বেশি ‘সেন্ট্রিফিউজ়’ চলছে। এতে কয়েকটি অত্যাধুনিক আইআর-৬ মেশিন রয়েছে। যা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করতে সক্ষম। ফোর্দোর এই আইআর-৬ মেশিনের সংখ্যা ইরান দ্বিগুণ করছে বলে খবর এসেছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইজ়রায়েল।

১১ ২২

ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ইসফাহানের উপকণ্ঠেও একটি বড় পরমাণু কেন্দ্র রয়েছে। যাতে রয়েছে ‘ফুয়েল প্লেট ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট’ এবং ‘ইউরেনিয়াম কনভার্সান ফেসিলিটি’। দ্বিতীয়টির মাধ্যমে ইউরেনিয়ামকে বদলে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড তৈরি করা যায়, যা সেন্ট্রিফিউজ়ে ব্যবহারের যোগ্য।

১২ ২২

সূত্রের খবর, এ ছাড়াও ইসফাহানের পরমাণু কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম রয়েছে। এটি পারমাণু বোমার কোর প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএএএ) জানিয়েছে, ইসফাহানে সেন্ট্রিফিউজ়ের যন্ত্রাংশ তৈরির মেশিন রয়েছে। ২০২২ সালে যা নতুন জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যায় তেহরান।

১৩ ২২

পরমাণু হাতিয়ার তৈরিতে দ্বিতীয় যে বস্তুটির প্রয়োজন হয় তা হল ভারী জল বা হেভি ওয়াটার। এর গবেষণা চুল্লি রয়েছে ইরানের খোন্দবে। ভারী জল ব্যবহার করে অতি সহজেই প্লুটোনিয়াম তৈরি করা যেতে পারে যা ইউরেনিয়ামের মতোই তেজস্ক্রিয়।

১৪ ২২

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক চুক্তিকে মান্যতা দিয়ে খোন্দবের ভারী জল গবেষণা কেন্দ্র বন্ধ করে দেয় তেহরান। ওই সময়ে কংক্রিট দিয়ে একটিকে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ফের তা চালু করার পরিকল্পনা করে ইরান। শিয়া মুলুকটির তরফে আইএএএ-কে জানানো হয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই খোন্দবের ভারী জল তৈরির কেন্দ্র ফের চালু করা হবে।

১৫ ২২

সূত্রের খবর, তেহরান গবেষণা কেন্দ্রও পরমাণু হাতিয়ার তৈরির জন্য ব্যবহার করেন ইরানি প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ‘নিউক্লিয়ার মেডিসিন ডায়াগনস্টিক’ হিসাবে এর পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্রের আড়ালে চলে অত্যাধুনিক হাতিয়ার তৈরির গবেষণা। আর তাই এখানে রেডিয়ো আইসোটোপ উৎপাদন করা হচ্ছে। যা যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যায়।

১৬ ২২

এ ছাড়া বুশেহরে রাশিয়ার সহযোগিতায় একটি পারমাণবিক চুক্তি তৈরি করেছে তেহরান। এটি অবশ্য অসামরিক কাজে ব্যবহার করে ইরান। একই কথা কারাজ গবেষণা কেন্দ্রটির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে এই কেন্দ্রগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে মিলেছে খবর।

১৭ ২২

ইরানের ইয়াজদ প্রদেশের সাগান্ডে মরুভূমির মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়ামের খনি। তেহরানের দাবি, সেখানে নিম্নমানের ইউরেনিয়ামের আকরিক পাওয়া যায়। ২০১৩ সাল থেকে খনিটি থেকে উত্তোলন শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

১৮ ২২

এ ছাড়া পারচিনে রয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস বা আইআরজিসির ঘাঁটি। অতীতে এখানে বহু বার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে তেহরান। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ এই ঘাঁটিতেও ইউরেনিয়াম লুকিয়ে রাখতে পারে শিয়া মুলুকের সামরিক কর্তারা।

১৯ ২২

এ বছরের ১ অক্টোবর ইহুদি-ভূমে প্রায় ২০০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় আইআরজিসি। যার অধিকাংশই মাঝ আকাশে ধ্বংস করে ইজ়রায়েলি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। তবে বেশ কয়েকটি অবশ্য দেশের মাটিতে আছড়ে পড়েছিল। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময়ে বাসিন্দাদের বম্ব শেল্টারে সরিয়ে নেওয়ায় সে ভাবে জীবনহানি হয়নি।

২০ ২২

ইরানের উপর ইজ়রায়েলের প্রত্যাঘাত নিয়ে আমেরিকায় নানা মুনির নানা মত। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তেহরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পক্ষপাতী নন। অন্য দিকে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়া তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্প সেগুলিকে গুঁড়িয়ে দিতে খোলাখুলি ভাবে ইহুদিদের সমর্থনে গলা ফাটিয়েছেন।

২১ ২২

সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে সরাসরি হামলা না-ও চালাতে পারে আইডিএফ। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে ইহুদিদের গুপ্তচর সংস্থা ‘মোসাদ’। পরমাণু কেন্দ্রগুলির ভিতরে বিস্ফোরণ ঘটানোর ক্ষমতা এই সংস্থার রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।

২২ ২২

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই ইহুদিদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র লেবাননে পেজার, ওয়াকিটকি ও সৌর প্যানেলে বিস্ফোরণ ঘটে। ইজ়রায়েলের নজর এড়িয়ে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই পেজার ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করছিল ইরান সমর্থিত হিজবুল্লার সন্ত্রাসীরা। এই বিস্ফোরণের নেপথ্যে মোসাদের হাত থাকার অভিযোগ তুলেছে লেবানন। শিয়া মুলুকের পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করতে ফের এই কায়দায় ইহুদি গুপ্তচরেরা নিতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement