শুধু নির্দেশের অপেক্ষা। সেই নির্দেশ পেলেই গাজ়ায় ঢুকে ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ চালানোর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে ইজ়রায়েলি সেনা। ইজ়রায়েল-গাজ়া সীমান্তে গত কয়েক দিন ধরেই সেনা, সাঁজোয়া গাড়ি, ট্যাঙ্ক এবং বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করেছে ইজ়রায়েল।
খোদ প্রধামনমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সীমান্তে গিয়ে সেনাদের সঙ্গে দেখা করে বার্তা দিয়ে বলেছেন, “যে কোনও মুহূর্তে গাজ়ায় ঢুকে পড়ব আমরা। যুদ্ধজয়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন।”
বৃহস্পতিবার ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত গিয়েছিলেন সীমান্তে। সেনাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এখন দূর থেকে গাজ়া দেখতে পাচ্ছেন। এর পর ভিতর থেকে গাজ়াকে দেখব আমরা। খুব শীঘ্রই সেই নির্দেশ আসবে।”
ইজ়রায়েল-হামাসের সংঘর্ষ ১৪ দিনে পড়েছে। যত দিন যাচ্ছে ইজ়রায়েলের হামলা আরও জোরদার হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত স্থলপথে হামলা শুরু করেনি তারা। তবে এ বার স্থলপথেই হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্থলপথে গাজ়ায় হামলা চালানোর জন্য ইজ়রায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সেনার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শাখাকে যুদ্ধের ময়দানে নামিয়েছে।
সেনার এই শাখাটি হল ‘সায়রেট মটকল’। হামাসের হাত থেকে অপহৃত ইজ়রায়েলিদের উদ্ধারের জন্য এই বিশেষ বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
ইজ়রায়েল সেনার এই বিশেষ বাহিনীর নাম ছিল ‘ইউনিট ২৬৯’ এবং ‘ইউনিট ২৬২’। ইজ়রায়েলের ‘প্রিমিয়ার স্পেশাল ফোর্স’ হিসাবে মনে করা হয় ‘সায়রেট মটকল’-কে।
১৯৫৭ সালে এই বিশেষ বাহিনী ‘সায়রেট মটকল’কে গড়ে তোলা হয়েছিল। মূলত, এরা শত্রুপক্ষের গতিবিধির উপর নজরদারি চালাত এবং গোপন তথ্য সংগ্রহ করার কাজ করত। কিন্তু পরে এই বাহিনীকে আরও বেশি দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুধু তথ্য সংগ্রহই নয়, জঙ্গিদের হাত থেকে অপহৃতদের মুক্ত করার কাজেও বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়।
অপহৃত নাগরিকদের শত্রুপক্ষের হাত থেকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত দক্ষ এই ‘সায়রেট মটকল’ বাহিনী। এই বাহিনী গঠন হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জিং ‘অপারেশন’ দক্ষতা এবং সফলতার সঙ্গে চালিয়েছে। তাই এই বাহিনীকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বাহিনী হিসাবেই মনে করা হয়।
ব্রিটেনের স্পেশাল এয়ার সার্ভিস (এসএএস)-এর ধাঁচে ইজ়রায়েলের ‘সায়রেট মটকল’ বাহিনীকে গড়ে তোলা হয়েছে। সেনার এই বিশেষ শাখার মূল মন্ত্র হল, ‘হু ডেয়ারস উইন্স’।
এই বিশেষ বাহিনীতে নির্বাচন প্রক্রিয়াও অত্যন্ত কঠিন। এই শাখায় নির্বাচিত হওয়ার পর দু’বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণ শেষ হলে তাঁদের বোমা এবং ল্যান্ডমাইন নিষ্ক্রিয় করার কৌশল, অস্ত্রচালনা এবং পাহাড়, মরুভূমি এবং জঙ্গলে কী ভাবে টিকে থাকতে হয় সেই কৌশলও শেখানো হয়।
এই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ‘সায়রেট মটকল’ বাহিনীতে মার্শাল আর্ট, নেভিগেশন, সামরিক যানবাহন চালানো, যুদ্ধে আহত সেনাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা, শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়লে কী ভাবে নিজেদের বাঁচাতে হবে, সব কৌশল শেখানো হয়।
গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে ঢুকে হামাস বাহিনী কয়েকশো নাগরিককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তার পরই সেই নাগরিকদের উদ্ধারের দায়িত্ব পড়ে ‘সায়রেট মটকল’ বাহিনীর উপর। গাজ়া সীমান্তে সুফায় বাঙ্কারে ঢুকে হামাসের ৬০ সদস্যকে খতম করে ২৫০ জন নাগরিককে নিরাপদে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে বলে দাবি করেছে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স।
হামাসের হাতে এখনও বহু ইজ়রায়েলি নাগরিক বন্দি। গাজ়ায় হামলা বন্ধ করলে তবেই তাঁদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে হামাস। কিন্তু তাদের এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে চায় না ইজ়রায়েল। তাই এ বার সরাসরি গাজ়া ঢুকেই হামলা চালিয়ে বন্দিদের মুক্ত করার কৌশল নিচ্ছে তারা। তাই ইতিমধ্যেই গাজ়া সীমান্তে ‘সায়রেট মটকল’ বাহিনীকে মোতায়েন করা শুরু করেছে ইজ়রায়েল।
গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে ইজ়রায়েলের। ইতিমধ্যেই এই সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ৪ হাজার মানুষের। আহত কয়েক হাজার।