যত দূর দেখা যায় শুধু সমুদ্রের নীল জলরাশি। সেই জলরাশির বুক চিরে নিঃসঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছোট্ট একটি দ্বীপ। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যেটির প্রায় কোনও যোগাযোগই নেই।
পাথুরে সেই দ্বীপের খাড়াই গা। প্রায় সমতল উপরিভাগ। সবুজে মোড়া। দেখে মনে হতে পারে, কেউ যেন একটি বিশাল পাথরের খণ্ডকে ওই জলরাশির মধ্যে বসিয়ে দিয়েছে আলতো করে।
সম্প্রতি এই দ্বীপটি নিয়ে সমাজমাধ্যমে বেশ হইচই হচ্ছে। তবে দ্বীপটির নিজের কারণে নয়, দ্বীপে থাকা নিঃসঙ্গ একটি বাড়ির কারণেই।
বিশাল সেই শিলাখণ্ডের মাঝে সেই বাড়িটি দূর থেকে প্রায় একটি সাদা বিন্দু মতোই দেখায়। না আছে যোগাযোগের রাস্তা, মূল ভূভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন ওই দ্বীপে কে বাড়ি বানালেন? কেনই বা বানালেন, তা নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই।
সত্যিই তো, এমন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে কী এমন প্রয়োজনে বাড়ি বানাতে হল! সকলে যখন এর উত্তর খুঁজছেন, বেশ কয়েকটি তথ্য, বিশ্বাস বা দাবি যাই বলুন না কেন, ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সেই তথ্য বা বিশ্বাস হঠাৎ করে নয়, কয়েক দশক ধরেই ঘোরাফেরা করছে।
দ্বীপটির নাম এলিডে। আইসল্যান্ডের দক্ষিণে একেবারে একাকী দাঁড়িয়ে রয়েছে এই দ্বীপ। তার মাঝেই সাদারঙা বাড়িটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য।
ভেস্টমানাইয়ার আর্কিপিলাগোর একটি বিচ্ছিন্ন অংশ এই এলিডে দ্বীপ। ৩০০ বছর আগে নাকি এই দ্বীপে জনবসতি ছিল। পাঁচটি পরিবার থাকত এই দ্বীপে।
মাছ ধরে, গবাদি পশু চরিয়ে এবং পাফিন নামে এক প্রকার পাখির শিকার করে নিজেদের জীবন নির্বাহ করত ওই পরিবারগুলি। কিন্তু ১৯৩০-এর দশকে এই দ্বীপের শেষ বাসিন্দা এলিডে ছেড়ে চলে যান। তার পর থেকেই দ্বীপটি একেবারে পরিত্যক্ত হয়েই পড়ে রয়েছে।
দ্বীপের মধ্যে নিঃসঙ্গ ওই বাড়িটিকে নিয়ে গুঞ্জন, প্রশ্ন এবং নানা তথ্য ঘুরে বেড়ায়। দ্য সান-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার মধ্যে একটি হল, এক ধনকুবের নাকি ওই বাড়িটি বানিয়েছিলেন। কারণ যদি কোনও দিন আইসল্যান্ডে ‘জ়ম্বি’র হামলা হয়, তা হলে এই বাড়িত এসে তিনি নিজেকে সুরক্ষিত থাকতে পারেন।
আরও একটি তথ্য বলছে, কোনও ধনকুবের নয়, বাড়িটি বানিয়েছিলেন আইসল্যান্ডের প্রখ্যাত গায়ক বিয়র্ক। তাঁকে আইসল্যান্ডের সরকার ওই দ্বীপটি উপহার দিয়েছিল। তবে এটাও প্রচলিত বিশ্বাস যে, ওই বাড়িতে নাকি এক সাধু বাস করতেন।
তবে অনেকে কিন্তু এ সব তথ্য বা বিশ্বাসে আমল দিতে নারাজ। তাঁদের দাবি, ওই দ্বীপে এমন কোনও বাড়িই নেই। পুরোটাই ফোটোশপ করে বসানো হয়েছে বাড়িটিকে।
এই বাড়িটি ইতিমধ্যেই ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ’ বাড়ি হিসাবেই পরিচিতি পেয়েছে। তা হলে, এই নিঃসঙ্গ বাড়ির রহস্যটা কী?
দ্য মিরর-এর প্রতিবেদন বলছে, আসলে বাড়িটি বানিয়েছে এলিডে হান্টিং অ্যাসোসিয়েশন।
১১০ একর এই দ্বীপে পাফিন নামে এক ধরনের ছোট পাখির বাসস্থান। এই পাখি শিকারের জন্যই এলিডে হান্টিং অ্যাসোসিয়েশন বাড়িটি বানিয়েছে।
পাফিন দু’ধরনের হয়। টাফ্টেড পাফিন আর হর্নড পাফিন। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে এদের পাওয়া যায়।