কানাঘুষো চলছিল অনেক দিনই। শেষ পর্যন্ত তাতেই সিলমোহর পড়ল। ফাটল ধরেছে সানিয়া মির্জা আর শোয়েব মালিকের দাম্পত্যে। আর এক সঙ্গে থাকতে চান না তাঁরা। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইতিমধ্যে নাকি বিচ্ছেদের মামলাও দায়ের করেছেন দম্পতি। যদিও সানিয়ার বাবা এই সব জল্পনা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ভারত এবং পাকিস্তানের একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, সানিয়া-শোয়েবের বিয়ে ভাঙছে।
বিচ্ছেদের কারণ কী? সেই নিয়েও রয়েছে হাজারো জল্পনা। যদিও এ ক্ষেত্রে দায়ের পাল্লা ভারী নাকি শোয়েবেরই। শোনা যাচ্ছে, পাকিস্তানি ক্রিকেটারের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই নাকি সম্পর্ক ভাঙছেন সানিয়া।
কে সেই তৃতীয় নারী, যার জন্য শোয়েব আর সানিয়ার ঘর ভাঙছে? সংবাদমাধ্যমের দাবি, পাকিস্তানি নায়িকা আয়েশা ওমরের প্রেমে পড়েছেন শোয়েব। বিষয়টি মানতে পারেননি সানিয়া।
আয়েশার সঙ্গে কী ভাবে পরিচয় হয়েছিল শোয়েবের? জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের ‘ওকে’ পত্রিকার ফটোশুটে গিয়ে আলাপ হয়েছিল দু’জনের।
পাকিস্তানের এই পত্রিকায় মূলত তারকাদের ফ্যাশন, জীবনযাপন নিয়ে আলোচনা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরের সংখ্যায় প্রচ্ছদ ছিলেন শোয়েব আর আয়েশা।
ফটোশুটের কারণে একটা গোটা দিন নাকি একসঙ্গে কাটিয়েছিলেন শোয়েব আর আয়েশা। দিনভর ফিটনেস, ক্রিকেট থেকে সিনেমা নিয়ে নাকি চলেছিল আলোচনা।
আর সেই আড্ডার ফাঁকে চলেছিল ফটোশুট। প্রতিটি ছবিতেই ঘনিষ্ঠ ভাবে ধরা দিয়েছিলেন শোয়েব এবং আয়েশা। সে সব ছবিতেই নাকি স্পষ্ট হয়েছিল নতুন ‘সম্পর্কের রসায়ন’।
শোয়েব আর আয়েশার সুইমিং পুলের একটি ছবি ভাইরাল হয়। সেখানে পাউডার নীল রঙের স্বচ্ছ শার্ট পরা শোয়েবকে জড়িয়ে রয়েছেন কমলা পোশাকের আয়েশা।
অন্য একটি ছবিতে জলে দাঁড়িয়ে শোয়েব। হাত ধরে পুলের পাশে আয়েশা। ভিজে চুলের আয়েশা তাকিয়ে রয়েছেন শোয়েবের দিকে। নিন্দকরা বলছেন, প্রেম না থাকলে এ ভাবে তাকানো যায় না।
রাতপোশাক পরেও ফটোশুট করেছিলেন আয়েশা এবং শোয়েব। নায়িকার হাতে চায়ের কাপ। তাঁর চুল ঠিক করে দিচ্ছেন শোয়েব। পিছনে সমুদ্র।
বেডরুমেও ফটোশুট করেছিলেন শোয়েব আর আয়েশা। ছবি দেখে ভুরু কুঁচকেছিলেন অনেকেই।
ওই ফটোশুট নিয়ে শোয়েব পরে বলেছিলেন, ‘‘মজার ফটোশুট ছিল। ছবি তোলার সময় আয়েশা আমায় সহজ করে দিয়েছিল। ও আমার শিক্ষক।’’
আয়েশা স্পষ্টই বলেছিলেন, তিনি ক্রিকেটের বড় ভক্ত। শোয়েবের ঢালাও প্রশংসাও করেন। বলেন, ‘‘ও খুবই ভদ্র এবং মানবিক। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্ব করি।’’
শোয়েবের বিষয়ে আরও বেশ কিছু তথ্যও ফাঁস করেছিলেন আয়েশা। জানিয়েছিলেন, ফিটনেস নিয়ে শোয়েব খুব খুঁতখুঁতে। ‘পাগল’ বললেও ভুল হবে না।
নিন্দকরা বলছেন, সেই ফটোশুটের পর থেকেই নাকি দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। প্রায়ই দেখা করেছেন তাঁরা। রেস্তোরাঁ, কফি শপেও নাকি দেখা গিয়েছিল দু’জনকে।
তবে শুধু আয়েশা নয়, অন্য এক পাকিস্তানি অভিনেত্রীর সঙ্গেও নাম জড়িয়েছিল শোয়েবের। ‘হামসফর’ সিরিয়াল খ্যাত মাহিরা খান। শাহরুখের বিপরীতে ‘রইস’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
চলতি বছরের গোড়ায় নাকি সেই সম্পর্ক শুরু হয়। ইনস্টাগ্রাম লাইভে আড্ডায় বসে আলাপ হয়েছিল দু’জনের। দর্শকরা বলেছিলেন, শোয়ের মাঝেই নাকি মাহিরার সঙ্গে ফ্লার্ট করছিলেন শোয়েব।
শোয়েব সেই শোয়ে এতই প্রশংসা করেছিলেন মাহিরার, যে তিনি বলে ওঠেন, ‘‘বউদি কি শো দেখছেন?’’
শোয়েব স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, সানিয়া শো দেখছেন। কিন্তু তিনি মাহিরার বউদি নন। মাহিরা পাল্টা বলেছিলেন, তিনি গোটা পাকিস্তানের বউদি।
শোয়ের মাঝে ইনস্টাগ্রামে সানিয়া লেখেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমরা কী করছ।’’
সেই শোয়ের পর গুঞ্জন বাড়তে থাকে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করে, মাহিরার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে শোয়েবের। তার মধ্যেই আবার মাথাচাড়া দেয় আয়েশার সঙ্গে সম্পর্কের কথা। যদিও শোয়েব এ সব নিয়ে মুখ খোলেননি।
২০১০ সালের ১২ এপ্রিল বিয়ে করেন ভারতের কনে আর পাকিস্তানের বর। বিয়ের পর একসঙ্গে থাকার জন্য দুবাইকেই বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা। সংবাদমাধ্যমের দাবি, গত কয়েক দিন ধরেই আর এক সঙ্গে থাকছেন না সানিয়া আর শোয়েব।
সানিয়ার নেটমাধ্যমে সাম্প্রতিক কিছু পোস্টে অবশ্য মন ভাঙার কথা রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে শুধুই ছেলের সঙ্গে ছবি দিচ্ছেন সানিয়া। একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, অনেক কঠিন সময় পার করিয়ে দেয় এই মুহূর্ত।
ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে সানিয়া লিখেছেন, ‘‘ভাঙা হৃদয় কোথায় যায়? ঈশ্বরকে খুঁজতে যায়।’’
এ সব পোস্টের পর জল্পনা আরও বেড়েছে। এ বার নাকি ক্রিকেট এবং টেনিস তারকা দুই ভিন্ন পথেই হাঁটবেন। তাতে আইনি সিলমোহরও পড়তে চলেছে। যদিও সানিয়া বা শোয়েব এই নিয়ে মুখ খোলেননি।
তবে সানিয়ার বাবা ইমরান মির্জ়া মুখ খুলেছিলেন। সমাজমাধ্যমে একটি লম্বা পোস্টের মাধ্যমে সানিয়া এবং শোয়েবের সম্পর্কের বিষয়ে সাফাই দেন তিনি।
ফেসবুকে একটি পোস্টে সানিয়ার বাবা লিখেছেন, “গত কয়েক দিন ধরে আমাদের জীবনের একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে নিয়ে প্রকাশ্যে অনেক আলোচনা হচ্ছে, যাতে আমি এবং আমার পরিবার বিধ্বস্ত। অর্ধেক সত্যের দ্বারা তৈরি হওয়া আমাদের জীবনের একটি বিষয়কে নিয়ে অনেকেই আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে বিরক্ত করছেন এবং একের পর এক প্রশ্নের দ্বারা উত্ত্যক্ত করছেন। শোয়েব মালিক এবং সানিয়া মির্জা গত ১২ বছর ধরে বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছে। বাকিদের মতোই ওদের জীবনেও ওঠানামা রয়েছে। টম, ডিক, হ্যারির মতো কিছু কিছু ব্যক্তি সেটাকে নিয়ে উত্তেজক কাহিনি তৈরির করার চেষ্টা করছে, যা আমরা কোনও মতেই সমর্থন করি না।”
ইমরান আরও লিখেছেন, “জীবনের সব উত্তর হ্যাঁ বা না-তে হয় না। ক্রীড়াজগতে ওরা দু’জনেই আদর্শ। পরিবারের কথা মাথায় না রেখে নিজেদের গোটা জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছে দেশকে গর্বিত করতে। ওরা অন্তত আরও বেশি সমীহ প্রত্যাশা করে। এখন অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ চলছে! দয়া করে নিজেদের দেশকে সমর্থন করার দিকে মনোযোগ দিন!”